সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৪৭ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ মন্দিরের ফটক খোলার সময় বরিশাল মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আমন্ত্রন না করায় বেদম পেটানো হয়েছে কামেশ্বরী মন্দির পূজা কমিটির সভাপতিকে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর কালিবাড়ি রোডস্থ ধর্মরক্ষ্মীনি সভাগৃহে ডেকে জিয়া সড়কের জয় দুর্গা কামেশ্বরী মন্দির পূজা কমিটির সভাপতি জগদীশ বৈদ্যকে মারধর করা হয়। জগদীশ বৈদ্যকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
জগদীশকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তমাল মালাকার, সাধারল সম্পাদক চঞ্চল দাস পাপ্পা ও সদস্য খোকন চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে।
জগদীশ বৈদ্য বলেন, জয় দুর্গা কামেশ্বরী মন্দির প্রতি বছর এক মাস করে বন্ধ থাকে। সেই মন্দিরের ফটক খোলার জন্য মন্দির কমিটির সভাপতি রাখাল চন্দ্র দে এর সাথে কথা বলা হলে সে মন্দির খুলতে বলেন। সেই মোতাবেক মন্দিরের ফটক খোলা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বাসায় ফেরার পথে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পাপ্পা ফোন দিয়ে ধর্মরক্ষ্মিনী সভাগৃহে আসতে বলে, কিছুক্ষণ পর সভাপতি তমালও যেতে বলে সেখানে। ধর্মরক্ষ্মিনীতে যাওয়ার পর তাদের কেন মন্দির খোলার সময় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, এই অযুহাত দেখিয়ে সদস্য খোকন আমাকে বেদম মারধর শুরু করে। ধর্মরক্ষ্মিনী সভাগৃহে বসেই মারধর করে। এরপর তমাল ও পাপ্পাও এলোপাথারি মারধর করে। এরপর স্থানীয়রা উদ্ধার করে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
জগদীশ বলেন, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের কমিটি জোড়পূর্বক বিভিন্ন মন্দিরে হস্তক্ষেপ করছে। তারা জোড় জুলুম করছে। বিগত দিনে বিগত কমিটিগুলো থেকে এমন আচরণ আমরা পাইনি।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের এই কমিটি হয়েছে অনেকটা চর দখল স্টাইলে। সভাপতি তমাল মালাকার শহরের এক সময়কার চিহ্নিত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত থেকে দেশ পালিয়ে বেড়িয়েছে। অদৃশ্য শক্তিতে মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি চেয়ার দখলের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে শহরের সনাতন ধর্মালম্বীরা ভয়ে আর আত্ম সম্মান ধরে রাখতে মুখ খুলতে পারছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জন জানিয়েছেন বরিশালে অনেক শিক্ষিত মার্জিত সনাতন ধর্মাবলম্বী থাকা সত্ত্বেও একজন সন্ত্রাসী কিভাবে মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি হতে পারে তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। বর্তমান পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল দাস পাপ্পাও মাদকাসক্ত আর মাদক ব্যবসা করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। ছিলো ধর্ষন মামলাও। জেলও খেটেছেন পাপ্পা। ইয়াবা সেবনরত ছবিও রয়েছে পাপ্পার। সচেতন মহলের প্রশ্ন এসব মাদকসেবিরা কিভাবে পূজা কমিটির মত বড় ধর্মীয় সংগঠনের পদ দখল করে।
সবশেষ পূজা পরিষদের সম্মেলনে ক্ষমতাসীণ দলের এক নেতার ইশারায় বিতর্কিত লোকজনকে এই পরিষদের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে, এই নিয়ে ক্ষুদ্ধ সচেতন সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও। যারা শহরজুড়ে বিতর্কিত, তাদেরকে জোড় খাটিয়ে সম্মানিত স্থানে আসন দেওয়া সমীচিন হয়নি বলেও অভিমত তাদের।
করোনাকালিন সময়ে তমাল মালাকার শ্মাশানে সাধারণ মানুষদের দাহ করতে দেয়নি। পরে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমানের হস্তক্ষেপে দাহ হতো। শ্মশানে মাদক ব্যবসার অভিযোগ তমালের বিরুদ্ধে।
এই বিষয়ে জানতে বরিশাল মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তমাল মালাকারকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। তবে সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল দাস পাপ্পা বলেন, জগদীশকে ডেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে কেন মন্দির খোলার সময় আমাদের জানানো হয়নি। কিন্তু তাকে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মহানগরের সব মন্দিরে আমাদের হস্তক্ষেপ করার বৈধতা রয়েছে, তবে আমরা কোনো কমিটির উপর জোড় জুলুম করিনা। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক পরিচালিত হয় আমাদের কমিটি। এখানে কারো হস্তক্ষেপ নেই।
Leave a Reply