বরগুনায় বাল্যবিয়ের রেকর্ড Latest Update News of Bangladesh

শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




বরগুনায় বাল্যবিয়ের রেকর্ড

বরগুনায় বাল্যবিয়ের রেকর্ড

বরগুনায় বাল্যবিয়ের রেকর্ড




বরগুনা প্রতিনিধি॥ উপকূলীয় অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ বরগুনা। এই জেলার অধিকাংশ মানুষের পেশা কৃষি ও মাছ শিকার। নদীর তীরে তাদের বসবাস। কখনো মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আবার করোনা মহামারী সব মিলিয়ে অনিশ্চয়তার বিপর্যয়।

 

 

একদিকে দারিদ্রতা তো নিত্য দিনের সঙ্গী অন্যদিকে বিদ্যালয় বন্ধ। তাই অনেক পরিবার আইনে সাবালিকা না হলেও ঘরে রাখতে সংকোচ বোধ করছে ঘরের মেয়েকে। মোটামুটি ভালো পাত্র মনে হলেই গোপনে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দিচ্ছে স্কুল পড়ুয়া কিশোরীদের।

 

 

সম্প্রতি মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন কতৃক পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, বরগুনায় রেকর্ড সংখ্যক বাল্যবিবাহ হয়েছে কোভিড-১৯ মহামারীতে। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত জরিপে দেখা গেছে বরগুনা জেলায় ১ হাজার ৫১২টি বাল্যবিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। ২১ জেলার ৮৪ উপজেলার মধ্যে করা জরিপে সবার প্রথমে বরগুনা। এরপরই যথাক্রমে কুড়িগ্রাম (১ হাজার ২৭২ টি), নীলফামারী (১ হাজার ২২২ টি), লক্ষ্মীপুর (১ হাজার ৪১ টি) এবং কুষ্টিয়া (৮৮৪ টি) জেলার অবস্থান।

 

 

করোনাকালীন অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক সুরক্ষা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম বন্ধ থাকা, তথ্যের আদান প্রদানে ঘাটতি সৃষ্টি হওয়া ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টানা বন্ধ থাকার কারণে বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

 

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো–অর্ডিনেটর অর্পিতা দাস জানান, উপকূলীয় জেলা বরগুনার প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিম্নআয়ের মানুষেরা কন্যাশিশুটিকে ঝুঁকি মনে করে দ্রুত বিয়ে দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে মহামারি কালে রোজগারের সমস্যা, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাসহ নানা সামাজিক প্রতিকূলতার কারণে তারা বাল্যবিয়ের দিকে বেশি ঝুঁকছেন।

 

 

কিশোরী কন্যাকে বিয়ে দেওয়া কয়েকজন অভিভাবকের বক্তব্যও এই বিষয়গুলো উঠে এসেছে। সম্প্রতি মেয়েকে বাল্যবিয়ে দিয়েছেন বরগুনার সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের পোটকাখালী গ্রামের এক বাসিন্দা। দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে পার্শ্ববর্তী গ্রামে বিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভাই, মোরা অইলাম জাইল্লা (জেলে) মানুষ, গাঙ্গে মাছ ধইর‍্যা খাই। মাইয়া ইশকুলে পড়াইতাম, দুইডা বচ্ছর ইশকুল বন্ধ। মাইয়া ডাঙ্গর (বড়) অইছে, হেই চিন্তায় ঘুম আয়না। পোলাপানে জ্বালায়, মাইয়া মানু কতকুন মন ঠিক রাকতে পারে (মেয়ে মানুষ কতোক্ষণ মন ঠিক রাখতে পারে)। একটা বিপদ ঘটাইয়া হালাইলে, ইজ্জাত থাকপে না। হের চাইতে পোলা পাইছি, বিয়া দিয়া দিছি।’

 

 

নদী তীরবর্তী জেলেপাড়াগুলোর বাসিন্দা তো বটেই, অন্য এলাকার নিম্নআয়ের মানুষগুলোও একই রকম যুক্তি দিচ্ছেন। সদরের নলটোনা ইউনিয়নের নবম শ্রেণী পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকেও সম্প্রতি বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবক একজন অটোরিকশা চালক। তিনি বলেন, ‘করোনায় গুরাগারা (বাচ্চাকাচ্চা) লইয়া খাইয়া পইরা থাকনই দায়। এইয়ার মইদ্দে ইশকুল বন্ধ থাহনে মাইয়া জিবুইত (মানুষ) ঠিক রাহন দায়। চিন্তা হরলাম, বিয়া দেওনই ভালো। হেই কারণে মোর মাইয়া বিয়া দিয়া নিশ্চন্ত অইছি।’

 

 

২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট নিজের বিয়ে ঠেকিয়ে আলোচনায় এসেছিল বরগুনার আমতলি পৌরশহরে বাসুগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী মনিকা (১১)

 

 

১০৭টি বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে ২০১৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন পিস প্রাইজের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনয়িনের মাইঠা লবণগোলা এলাকার সাজেদা আক্তার। তিনি বর্তমানে বরগুনা সরকারি কলেজে স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বরগুনায় বাল্যবিয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি বিষয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সাজেদা বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে আমি মনে করি, বাল্যবিয়ে রোধে সামাজিক সচেতনতার বিকল্প নেই। কিন্তু করোনার কারণে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ রয়েছে। অপেক্ষাকৃত দরিদ্র পরিবারের মধ্যে বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেশি। এসব পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত না হওয়ার কারণে বাল্যবিয়ে বেড়েছে। এছাড়াও করোনার কারণে বাল্যবিয়ে সম্পর্কিত তথ্য আদান প্রদানেও ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণেই বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে আমি মনে করি।

 

 

বরগুনায় বাল্যবিয়ের রেকর্ড নিয়ে কথা হয় সামাজিক সংগঠন নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটি বরগুনা জেলার সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতা ছাড়া বাল্যবিয়ে সংঘটিত হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ কাজিদের কাছে বিয়ের জন্য গেলেই বয়স প্রমাণ করতে জন্ম নিবন্ধন সনদ দরকার হয়। টাকার বিনিময়ে ইউপি সচিবেরা জন্ম নিবন্ধন দিয়ে থাকেন। ফলে আইনগত কোনো জটিলতায় পড়তে হয় না। জন্ম নিবন্ধন জোগার করতে না পারলে বিয়ে হওয়া সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।

 

 

তবে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জরিপে পাওয়া পরিসংখ্যান মানছেন না জেলা মহিলা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মেহেরুন মুন্নি। তিনি বলছেন, তাদের তথ্যের সঙ্গে আমাদের কাছে থাকা তথ্যের কোনো মিল নেই। বরগুনায় বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেড়েছে তবে এত বেশি না। আমরা করোনার মধ্যে শতাধিক বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছি। অবশ্য করোনার কারণে সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষকেরা ছাত্র–ছাত্রীদের খোঁজখবর নিতে পারছেন না, ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বাল্যবিয়ের তথ্য আসে না বলে স্বীকার করেছেন এ কর্মকর্তারা। এ ছাড়া মহামারিতে নিম্নআয়ের মানুষেরা বেকার হয়ে পড়েছেন। তারা কন্যাশিশুকে বোঝা মনে করছেন। এসব কারণে বাল্যবিয়ে বাড়ছে বলেও একমত তিনি।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD