শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২১ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য রাজধানীর মহাখালীর আমতলিতে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন এক নারী। ভোর বেলায় রাস্তায় লোকজনের আনাগোনা ছিল হাতেগোনা। সুযোগে ওই নারীর দিকে কুনজর দেন আলমগীর হোসেন নামের এক যুবক। কথার এক পর্যায়ে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। পরে টানাহেঁচড়া শুরু করেন আলমগীর। মেয়েটি চিৎকার শুরু করলে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন তিনি।
বুধবার (২৩ জানুয়ারি) ভোরের দিকে এই ঘটনার সময় আশপাশে অনেক সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশাচালক এমনকি পথচারী থাকলেও কেউই সেই তরুণীকে উদ্ধারে এগিয়ে আসছিলেন না।
ওই সময় রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন ডিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) তাপস কুমার দাস। ওই নারীর চিৎকার শুনে গাড়ি নিয়ে ছুটে যান তিনি। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ও গাড়ির চালক মিলে ধরে ফেলেন আলমগীরকে।
ভুক্তভোগী নারী বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের নিরাপত্তাকর্মী। পরে এ ঘটনায় বনানী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা (নং-২১) দায়ের করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সেই তরুণী প্রতিদিনের মতো বুধবারও ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। মহাখালীর আমতলী ক্রসিংয়ের রাস্তার পূর্ব পাশের চায়ের দোকানের সামনে তিনি বাসের অপেক্ষা করছিলেন।
এমন সময় হঠাৎ করে আলমগীর এসে তাকে কুপ্রস্তাব দেয়। তখন তার প্রস্তাবে রাজি না হলে ওই তরুণীর স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানিসহ তার নাকে-মুখে সজোরে ঘুষি মারতে থাকে আলমগীর। এতে ওই তরুণীর শরীরে জখম হয় এবং একপর্যায়ে তিনি মাটিতে পড়ে যান।
এরপর আলমগীর লাঠি নিয়ে ওই তরুণীকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে গুরুতর জখম করতে থাকে। সেসময় এডিসি তাপস কুমার দাস তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান এবং আলমগীরকে বনানী থানা পুলিশে সোপর্দ করেন।
অভিযুক্ত আলমগীর
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এডিসি তাপস কুমার দাস বলেন, আমি গুলশান ডিভিশনের সেন্ট্রাল ছয়টা থানার নাইট রাউন্ডে ছিলাম। ভোরে বনানী ক্রস করে আমতলী দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন দূর থেকে এক নারীর চিৎকারের আওয়াজ শুনি এবং দেখি এক ছেলে ওই নারীকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে। তখন আমি ড্রাইভারকে গাড়ি ঘোরাতে বলি। এরপর আমার বডিগার্ড, ড্রাইভারকে নিয়ে তিনজন ছুটে যাই। আমরা তিনজন ছেলেটাকে (আলমগীর) ধরে ফেলি। দেখলাম মারের আঘাতে সেই নারীর ঠোঁট দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল, আমরা তাকে দ্রুত কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠাই। আসামি আলমগীরকে বনানী থানায় পাঠিয়ে দেই।
পরে ওই নারীকে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে জানা যায়, তিনি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের নিরাপত্তার দায়িত্বে কর্মরত। অফিসে সকাল ৬টার শিফট ধরতে আমতলীতে বাসে ওঠার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি।
জানা যায়, আসামি আলমগীর (২৪) কড়াইল বস্তিতে মাছের ব্যবসা করেন। বস্তির বৌবাজারে তার বাসা। গ্রামের বাড়ি শেরপুর। আলমগীরের বাবার নাম আশরাফ আলী।
সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত এডিসি তাপস আরও বলেন, ঘটনার সময় আলমগীরের সাথে আরেকজন ছিল। সে যুবকটির ছোটভাই। পুলিশের গাড়ি দেখে ছেলেটি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। তবে আমার ব্যক্তিগত গার্ড ও গাড়ির চালক যুবককে ধরে ফেলে। প্রথমে আটক করলেও পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, সে নির্দোষ। এজন্য তাকে আসামি করা হয়নি।
বনানী থানা পুলিশ জানায়, বুধবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ওই টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ এসে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা (নং-২১) দায়ের করেছে। এ মামলায় আলমগীরকে আদালতে পাঠানো হবে।
টেলিভিশন চ্যানেলটির এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, ওই তরুণীর ঠোঁটে ছয়টি সেলাই পড়েছে, কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে তাকে অফিসে নেওয়া হয়েছে। এখন তিনি মোটামুটি সুস্থ আছেন।
Leave a Reply