সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকায় অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ ৩৪টি বহুতল ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে। ভবনগুলোকে বিগত চার বছর আগে চিহ্নিত করা হলেও আজও ভাঙতে নেয়া হয়নি কোন উদ্যোগ। এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনে বসবাসরত মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা থাকলেও নিশ্চুপ রয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ফলে ভবনগুলোতে মানুষের বসবাস বন্ধ করা যাচ্ছেনা। বরং দিনে দিনে এইসব ভবনে বসবাসের রীতি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেকোন সময় ভবনগুলো ধ্বসে পরে বড় ধরনের প্রাণহানীর আশংকা করছেন সচেতন নগরবাসী।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় নগরীর বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসিক ভবনও রয়েছে। ওইসব অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় মধ্যে বসবাস করছে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী। সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ শহরের ৩৪টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। ওইসময় সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসব ভবন ভাঙতে মালিকদের চিঠিও দিয়েছিলো। পরর্তীতে বিষয়টি আর কার্যকর করা হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণর তালিকায় রয়েছে, নগরীর কাউনিয়া প্রধান সড়কে প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরনো জমিদার মোহন ব্যানার্জীর বাড়ি। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ওই ভবনে ৪০ বছর ধরে বসবাস করছেন দুটি পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের হাবিবুর রহমান ছাত্রাবাস, বিএম কলেজের সুরেন্দ্র ভবন ছাত্রাবাস, বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রী হোস্টেল ও সরকারী সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের শহীদ আলমগীর ছাত্রাবাস।
ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটিতেই রয়েছে মানুষের বসবাস। এমনকি কোন কোন ভবনে একাধিক ব্যক্তি বিশেষ তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ভবনগুলোতে বসবাস করলেও বাসিন্দারা বলছেন, অন্য কোথাও ঘর ভাড়া করে থাকার সামর্থ্য তাদের নেই। যে কারণে বাধ্য হয়েই তারা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস করছেন। একই কথা জানিয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ ছাত্রাবাসে বসবাসরত শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, ভবনগুলোর অবস্থা এতোটাই করুন যে-ভূকম্পন বা বড় ধরণের ঝড় হলে তা ভেঙে পরার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানা সত্বেও বিকল্প কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ঝুঁকির বিষয়টি জানা সত্বেও অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে শিক্ষার্থীরা বাহিরে কোথাও ভাড়া থাকতে পারছেনা। তাই বাধ্য হয়েই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে তারা বসবাস করছেন।
নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে সিটি কর্পোরেশনকে জরুরি ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভাঙ্গার দাবি জানিয়েছেন জনস্বার্থ আন্দোলন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন কমিটির নেতৃবৃন্দরা।কমিটির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু জানান, সাবেক সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামালের আমলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভাঙতে দাবি রাখা হয়েছিল। তিনি দেখছি বলে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। ফলে ভবনগুলো এখন আরও অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এসব ভবন না ভাঙ্গলে আসছে বর্ষা মৌসুমে যেকোন সময় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ধ্বসে পরে বড়ধরনের প্রাণহানীর আশঙ্কা রয়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিও) খাইরুল আলম জানান, বিগতদিনের কাগজপত্র অনুসারে শহরের হাসপাতাল রোডের বহুতল হ্যাপি নিবাসসহ ৩৪টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। বিষয়টি মেয়র সেরনিবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে অবহিত করা হয়েছে। মেয়র ভবনগুলো ভাঙ্গার জন্য মালিকদের চিঠি দিতে বলেছেন। চিঠি দেয়ার পরেও মালিকরা ভবন সরিয়ে না নিলে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ নগরবাসীর নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ভবনগুলো ভেঙ্গে দেবে।
Leave a Reply