সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩২ পূর্বাহ্ন
এস এম তুষার: বাংলাদেশে জঙ্গীবাদীরা ফের হামলা চালাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ, তিনটি টার্গেটকে সামনে রেখে তারা মিশনে নেমেছে- দেশের তুলনামূলক ধনী জেলা, বিদেশী অধ্যূষিত অঞ্চল বা স্থাপনা, অন্য ধর্মবলম্বীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। মুক্তচিন্তাবিদ-ব্লগারদের খতম লিষ্ট নিয়ে জঙ্গী নেতাদের মধ্যে সর্বদা মতানৈক্য বিরাজ করে, কাকে খতম করা হবে কাকে খতম করা হবে না-এই নিয়ে।জঙ্গী হামলার রণকৌশল যে কোন চরমপন্থীদের থেকে ভিন্ন।
জঙ্গীরা যেহেতু আত্মঘাতি সেহেতু তাদের কোন রিট্রিট এরিয়া থাকেনা। এই না থাকাটা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর জন্য অসুবিধাজনক। সম্ভাব্য হামলায় জঙ্গীদের একটা বড় অংশ আলজেরিয়ার ন্যাশনাল স্যালভেশন ফ্রন্টের যুদ্ধকৌশল অবলম্বন করে। মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রীক বিভিন্ন আদম ব্যবসায়ীদের সাথে দেশীয় কিছু জঙ্গী নেতাদের রয়েছে গোপন যোগাযোগ, রয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক, পাসপোর্ট অফিসে জঙ্গীদের এজেন্ট।
এনএসএফের নেতা ফ্রাঞ্জ ফানোর বক্তব্য- তুমি কোথায় দাড়িয়ে আছো তার উপর গেরিলা যুদ্ধের কৌশল নির্ভর করেনা, প্রত্যেক যোদ্ধাই তার দুই পদতলে বহন করে চলে তার যুদ্ধভূমি।
দেশের তথাকথিত জঙ্গীরা সে বক্তব্য অনুসরন করে। জঙ্গীরা খিলাফত প্রতিষ্ঠার ইজমে তাড়িত হলেও যেহেতু এদেশের জঙ্গী বলতে মুষ্টিমেয় যারা আছে তারা সশস্ত্র চক্র এবং উপদলবাদের পর্যায়ে, যার জন্য সরকারি বা রাষ্ট্রীয় স্থাপনার উপর হামলা চালাবার তেমন কোন পরিকল্পনা নেই বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারনা। সেন্টার ফর লীগ্যাল ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক- ক্লীন নামের জঙ্গী বিষয়ক গবেষনাধর্মী একটি প্রতিষ্ঠান তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে- জঙ্গীদের আন্তর্জাতিক গুরু আইএস শত্রু হিসাবে ইউরো-মার্কীনদের প্রধান বিবেচনা করে তারপর শিয়া নিধন।
বাংলাদেশের জঙ্গীদের কাছে এটা গৌণ বিবেচ্য। বরং বিধর্মী ( হিন্দু,বৌদ্ধ,খৃষ্টান বিশেষতঃ) এবং (তাদের ভাষায়) মোনাফেক আহমদিয়া, শিয়া, হেযবুত তওহিদ এদেরকে নিধন এবং তারা যে সমস্ত জায়গায় একত্রিত হয় বিভিন্ন উপলক্ষে সেখানে হামলা চালানো। উরঘুই মুসলমানদের উপর চীনের শাসকশ্রেনী যে নিপীড়ন চালাচ্ছে সেখানে আইএস হামলা চালাবেনা কারন চীন যেহেতু পাকিস্থানকে সমর্থন করে। আইএস ঈসরাইলে হামলা চালাবেনা কারন আইএসের উপর উগ্র ইহুদীবাদের জনক থিওডোর হার্জেলের অনুসারীদের ব্যাপক প্রভাব। আইএস একক কোন সংগঠন না, এটা উগ্র খিলাফতের একটি ধারনা।
শতাধিক ক্ষুদ্র, বৃহৎ সশস্ত্র গ্রুপ বিভিন্ন ইসলামি কায়দার নামে হামলা চালালে সেটা হয়ে যায় আইএস সমর্থিত। বাংলাদেশে তথাকথিত জঙ্গীদের মধ্যে একটা অবৈরী দ্বন্দ্ব আছে- এক অংশের মতে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাবার লক্ষ্যে হামলা চালানো যাতে করে ব্যাপক অরাজকতা অস্থিতিশীলতার সুযোগ গ্রহন করা যায়। অপর অংশের মতে, বিচ্ছিন্ন হামলার মাধ্যমে শত্রুকে সর্বদা ভীতিজনক চাপের মধ্যে রাখাটাই যথেষ্ঠ। জঙ্গীরা পরিস্থিতির চাহিদাকে কোন গুরুত্ব দেয়না, যেহেতু আত্মঘাতি।
এটাও রষ্ট্রিীয় বাহিনীর জন্য অসুবিধাজনক। নির্ভরযোগ্য অপর এক সূত্র মতে, বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জঙ্গীরা ইন্দোনেশিয়ার ধর্মীয় আধ্যাত্মিক নেতা হাজী বশিরের থিসিস অনুসরন করে। হাজী বশির তার থিসিসে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র তথা সমূদ্র সৈকতেগুলোতে বোমা হামলার উপর জোর দিয়েছে। কারন হিসাবে হাজী বশির উল্লেখ করে, ঐ সমস্ত স্থানে বিদেশীরা বিনোদন করে, স্ফূর্তি করে। যে কোন বিদেশী যে কোন দেশের জন্য ক্ষতিকর- এটা হাজী বশিরের থিসিসের মূলকথা।
সূত্র মতে, বেঁচে যাওয়া জঙ্গী নেতারা দুই অংশে কাজ বিস্তার করছেÑ দেশের বড় আকারের ইসলামী দল এবং অরাজনৈতিক ইসলামী সামাজিক-সংগঠনগুলোর মধ্যে তৎপরতা, এটা মূলতঃ কর্মী সংগ্রহের লক্ষ্যে। জঙ্গীরা নিরাপত্তার জন্য সংগঠন বিস্তারের কোন কর্মসূচী গ্রহন করেনা। সংগঠন নামমাত্র, লক্ষ্য থাকে আত্মঘাতি কর্মী রিক্রুট। অপর অংশের নেতারা বিভিন্ন মহল্লার নম্র,ভদ্র, মেধাবী তরুন, যুবকদের টার্গেট করছে। অপরিচিত কেউ হয়তো কোন মহল্লার কোন উদীয়মান তরুনকে সালাম দিয়ে পীঠে হাত রেখে বলবে, তুমি ভালো আছো? তোমার খুব প্রশংসা করলো সেদিন বলে অন্য মহল্লার কেউ একজনের নাম বলবে।
তরুনটি স্বভাবতঃই তাকে দেখতে চাইবে বা তার সাথে পরিচিত হতে চাইবে। মূহূর্তে তরুনটি নিজের অজান্তে জঙ্গী নেতার ফাঁদে পা দিলো।
রিক্রুটকারী নেতা এরপর উচ্চস্তরে একটি শব্দ পাঠায়- শামিল। কয়েকটি শামিল নিয়ে হয় জঙ্গীদের কাফেলা, সেই কাফেলার মধ্য থেকে যে কাফেলাগুলোকে বলা হয় কাফেলা-ই-জঙ্গ তারাই আত্মঘাতি হামলা চালায়।
Leave a Reply