সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২৬ পূর্বাহ্ন
কাওসার মাহমুদ মুন্না :বরিশাল আব্দুর রব সেরনিয়াবাত (দপদপিয়া) সেঁতুতে প্রতি বছর কেবল মিনি ট্রাক থেকেই সরকার নির্ধারিত টোলের চেয়ে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানার পরেও কোন ধরণের ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বরিশাল সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ উঠেছে প্রতি মাসে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদেরও একটা পার্সেনটেজ দেয়া হচ্ছে। যদিও এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খোন্দকার গোলাম মোস্তফা।গত রোববার দপদপিয়া সেঁতুর টোলপ্লাজায় গেলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। সেখানে গিয়ে কথা হয় একাধিক ট্রাক চালকের সাথে। ট্রাক চালকরা জানান, মিটি ট্রাক (দেড় টন) প্রতি সরকারী রেট ১৫০ টাকা ও মাঝারী ট্রাক ২০০ টাকা । কিন্তু প্রতি ট্রাক থেকে ৩০০ টাকা আদায় করছেন টোলপ্লাজায় কর্মরত কর্মচারীরা।
বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, প্রতিদিন দপদপিয়া সেঁতু দিয়ে বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস মোটর সাইকেলসহ সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে ট্রাক চলাচল করে ৮০৯টি (বড়, মাঝারী ও মিনি), বাস ৮৯১টি (বড়, ছোট ও মাঝারী) কাব ১৬‘শ ২৯টি, অটো ১৯‘শ ১২টি, মোটর সাইকেল ১৪৬০টি এবং ইউটিলিটি ৮৪টি।
ট্রাকের মধ্যে ট্রেইলার প্রতি টোলের পরিমান প্রতিবার ৮৬৫ টাকা, হেভী ট্রাক ৩০০ টাকা, মিডিয়াম ট্রাক ২০০ টাকা, মিনি ট্রাক ১৫০ টাকা, কৃষি কাজে ব্যবহৃত যান ১২৫ টাকা, বড় বাস ১৪০ টাকা, মিনি বাস ৭৫ টাকা, মাইক্রোবাস ১০০টাকা, ফোর হুইল চালিত যানবাহন ১০০ টাকা, সিডান কার ৭৫ টাকা, ৩/৪ চাকার মোটরাইজড যান ৩০ টাকা, মোটর সাইকেল ১০ টাকা এবং রিকশা/ভ্যান/ বাইসাইকেল/ঠেলাগাড়ী ১০ টাকা। প্রতিবারই টোল দেয়ার সাথে সাথে রশিদ দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা দেয়া হয়না।
ট্রাক চালকরা অভিযোগ করেন মিনি ট্রাকে প্রতিবারে ১৫০ টাকা টোলের স্থলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ৩‘শ টাকা রাখা হয়। সড়ক ও জনপথের হিসেব মতে দৈনিক কমপক্ষে গড়ে ৬০৪টি মিনি ট্রাক সেঁতু পারাপার করে। তাদের কাছ থেকে দৈনিক অতিরিক্ত ৯০ হাজার ৬‘শ টাকা আদায় করা হচ্ছে। যা মাসে হিসেব করলে দাঁড়ায় ২৭ লাখ ২৮ হাজার। এ হিসেবে বছরে কেবলমাত্র মিনি ট্রাক থেকেই তিন কোটি ২৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত টোলের চেয়ে কোটি কোটি টাকা বেশি আদায় করলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগ কোন ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছেননা।
বরিশাল ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম মোল্লা জানান, বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মিনি ট্রাক থেকে দেড়শ টাকা বেশি আদায় করা হচ্ছে। বিষয়টি আমি সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও তারা কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। অভিযোগ দিলে কয়েক দিন বন্ধ থাকে। এর পর আবার ইচ্ছেমত টাকা আদায় করা হয়। ট্রাক চালকরা পুরো জিম্মি হয়ে পড়েছেন টোল পরিচালনাকারীদের হাতে। ঠিকাদারের নির্দেশেই টোলপ্লাজার কর্মচারীরা বেশি টাকা আদায় করছেন বলেও অভিযোগ করেন কালাম মোল্লা।
এদিকে একাধিক সিডান কার চালক অভিযোগ করেন, শুধু ট্রাক থেকেই নয় অনেক সময় মাইক্রোবাস ও সিডান কার থেকেও নির্ধারিত টোলের চেয়ে বেশি আদায় করা হয়।
সিডান কার প্রতি টোলের পরিমান প্রতিবার ৭৫ টাকা হলেও অনেক সময় ১‘শ টাকা রাখা হয়। তবে বাস ও অন্যান্য যানবাহন থেকে অতিরিক্ত টোল আদায়ের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বাস চালকরা জানান, তাদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত হারেই টাকা আদায় করা হচ্ছে।আগামী তিন বছরের জন্য দপদপিয়া সেঁতুর টোল আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছেন নলছিটির ঠিকাদার মাহফুজ খান। অতিরিক্ত টোল আদায়ের ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাইলে বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের কোন সুযোগ নেই। সরকার নির্ধারিত হারেই টোল আদায় হয়। তবে অনেক যানবাহন চালকরা ইচ্ছে করেই রশিদ নেননা। এখানো আমাদেরতো কিছু করার নেই।
বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খোন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, এ ধরনের কোন অনিয়মের খবর আমার কাছে জানা নেই। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
Leave a Reply