শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ তালাকপ্রাপ্ত এক নারীকে বিয়ে করে প্রতারণা করেছেন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি সরোয়ার হোসাইন মোল্লা ওরফে বাদল কাজি। এ অবস্থায় স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন ভুক্তভোগী নারী।
এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও জেলা জামায়াতের আমিরসহ বিভিন্ন মহলে একাধিক অভিযোগ দিয়েছেন ওই নারী। ভুক্তভোগী আয়েশা (ছদ্মনাম-২৭) উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের দক্ষিণ কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা। আয়েশা বলেন, কয়েক বছর আগে উপজেলার নলবুনিয়া গ্রামের এক ব্যক্তির সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। দুই বছর পর সেখান থেকে তালাক হয়ে যায়। তালাকের সূত্র ধরে উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের ফজলুল হক মোল্লার ছেলে নিকাহ রেজিস্ট্রার ও শরণখোলা উপজেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি সরোয়ার হোসাইন মোল্লা ওরফে বাদলের সঙ্গে ২০১৯ সালে আমার পরিচয় হয়। এরপর থেকে আমার পিছু নেন বাদল। সেই সঙ্গে রাতদিন আমাকে ফোন করতে থাকেন। একপর্যায়ে আমার মায়ের হাত-পা ধরে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন বাদল।
আয়েশা আরও বলেন, প্রস্তাবে রাজি হলে বিয়ে ও রেজিস্ট্রার কার্যক্রম বাদল নিজেই সম্পন্ন করেন। সেই থেকে আমরা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস শুরু করি। ওই সময় বাদল আমাকে বলেন উপজেলা জামায়াতের নেতা হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতারা তার নামে গত কয়েক বছরে অনেক মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। তাই বিয়ের বিষয়টি কিছুদিন গোপন রাখতে হবে। সেই সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হবেন বাদল। নির্বাচনের পর আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যাবেন। বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষতি হবে বিধায় গোপন রাখি। এভাবে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে আমাদের আট মাস সংসার চলে।
ভুক্তভোগী আয়েশা বলেন, এরই মধ্যে গত ১৭ এপ্রিল প্রতিবেশীরা বাদলের কাছে আমাদের বিয়ের কাবিননামা দেখতে চাইলে তা দেখাতে পারেননি। পরে একটি কাবিননামা বাসায় এনে রাখেন বাদল। সেখানে দেখা যায় পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরের পরিবর্তে মাত্র ১০ হাজার টাকা। তাও আবার (উসুল) পরিশোধ। কাবিননামায় ১০ হাজার টাকার বিষয়টি জানতে চাইলে বাদল আমাকে বলেন গ্রামবাসীর হাত থেকে রক্ষা পেতে একটি নকল কাবিননামা তৈরি করেছি। বিষয়টি নিয়ে তুমি চিন্তা করিও না। কারণ পাঁচ লাখ টাকার কাবিননামার মূল কপি আমার অফিসে আছে।
তিনি বলেন, এ ঘটনার কিছুদিন পর বাদল আমাকে ফোন করে বলে তুমি আমাকে ভুলে যাও। তোমার সঙ্গে আমার এখন আর কোনো সম্পর্ক নেই। আমি তোমাকে তালাক দিয়েছি। তখন আমি তাকে বললাম আমার দোষ কী? আমি তো তোমার সঙ্গে কোনো অন্যায় করিনি। বিনা কারণে কেন তালাক দিলে? আমি স্ত্রীর মর্যাদা না পেলে আত্মহত্যা করব। এজন্য তুমি দায়ী থাকবে। তোমার এমন প্রতারণার বিষয়টি আমি প্রসাশনকে জানাব। এসব কথা বলতেই বাদল আমাকে হত্যার হুমকি দেন। এ অবস্থায় আমি ও আমার বৃদ্ধা মা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সেই সঙ্গে স্ত্রীর মর্যাদা পেতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরোয়ার হোসাইন মোল্লা ওরফে বাদল কাজি বলেন, আয়েশা আগে আমার স্ত্রী ছিল। কিন্তু আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করায় তাকে তালাক দিয়েছি। দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করেছি। স্ত্রী খারাপ আচরণ করলে স্বামী তালাক দিতে পারে। সে বিধান শরিয়তে আছে।
তালাকের বিধানের বিষয়ে জানতে চাইলে রায়েন্দা কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, তালাকের বিষয়টি আল্লাহর কাছে অত্যন্ত ঘৃণিত। কারও স্ত্রী গুরুতর অপরাধ করলেও তা ক্ষমা করা সবচেয়ে উত্তম। ইচ্ছা হলেই স্ত্রীকে তালাক দেয়ার বিধান ইসলামি শরিয়তে নেই। তবে তালাকের ক্ষেত্রে অবশ্যই স্ত্রীর মতামত থাকতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা জামায়াতের সহ-সভাপতি এবং খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম কবির বলেন, কারও অপকর্মের দায় সংগঠনের নয়। ব্যক্তির অপকর্মের দায় সংগঠন নেবে না। সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ানোর অপরাধে বাদলকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সংগঠনের সব কার্যক্রম থেকে তাকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত নারী বাদলের নামে মামলা করলে তাকে সহায়তা দেয়া হবে।
বাগেরহাট জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মো. রেজাউল করিম বলেন, এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে এটি সংগঠনের বিষয় নয়, আইনের বিষয়। বাদলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ওই জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। তবে এ নিয়ে আমার কিছু করার নেই। ওই নারীকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাকে আইনি সহায়তা নিতে বলেছি আমি।
Leave a Reply