বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন
কাউখালী প্রতিনিধি॥ পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার খাদ্য গুদামে গুদাম কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে ভিজিডি চাল ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকট লিখিত অভিযোগ করেন ৪নং চিরাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহামুদ খান খোকন।
অভিযোগের সূত্র ধরে তাৎক্ষনিকভাবে গুদামে গিয়ে সত্যত্যা খুঁজে পান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাঃ খালেদা খাতুন রেখা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা জান্নাআরা তিথি। এ সময় খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী দাবি করেন দাড়িপাল্লায় ক্রটি থাকায় ওজনে কম পড়তে পারে। এক পর্যায় কোন খবর না প্রকাশ করার জন্য সাংবাদিকদের তিনি উৎকোচ দেয়ার চেষ্টা করলে সাংবাদিকরা বিষয়টি পিরোজপুর জেলা প্রশাসক আবু আলী মোঃ সাজ্জাত হোসেনকে অবহিত করেন।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর অস্বচ্ছল নারীদের খাদ্য সহায়তা বাবদ প্রতেক্যকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল সরবরাহ করে থাকে।
এ উপজেলায় ৫টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৫৬৩ জন সুবিধাভোগী রয়েছে। তারা ২০২১ এর জানুয়ারী মাস হয়ে ২০২২ এর ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এ সুবিধার আওতায় থাকবে। এ সব চাল খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে সরবারহ করা হয়ে থাকে। চাল সরবারহের শুরু থেকেই স্থানীয় মেম্বর ও সুবিধাভোগী নারীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় চাল কম দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। খাদ্য গুদাম থেকে সরবারহকৃত ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে চালের বস্তায় ২৭-২৮ কেজি চাল দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে খাদ্য গুদামের লেবার সরদার নুরুল ইসলাম জানান, খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী এ স্টেশনে যোগদানের পর থেকেই ভিজিডি কার্ডে প্রতি বস্তায় ২ কেজি করে কম দিয়ে ২৮ কেজি করে চাল দেওয়ার নিদের্শ দেওয়া হয়।
অপর একটি সূত্র জানায়, গত জানুয়ারি থেকে চলতি আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে ১৫৬৩ কার্ডের বিপরীতে ২ কেজি করে কম দেওয়ায় প্রায় ২৫ হাজার কেজি কম দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য ১২ লক্ষ টাকার অধিক বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে খাদ্য গুদাম থেকে চাল সংগ্রহ করা শুরু থেকে বিতরণ কার্যক্রম পর্যন্ত তদারকি করার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে সরকারি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব বন্টন করে দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ৪ নং চিরাপাড়া পারসাতুরিয়া ইউনিয়নের ভিজিডি কার্ডের গোডাউন থেকে চাল উত্তোলন ও বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন ট্যাগ অফিসার উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ শহিদুল ইসলাম। তিনি ওই সময় দায়িত্ব পালন করেন নি।
এ ব্যাপারে ট্যাগ অফিসার উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি শুরুর সময় ছিলেন না তবে অভিযোগ পেয়ে খাদ্যগুদামে গিয়ে চাল কম দেওয়ার বিষয়টি তিনি দেখতে পান।
এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মহসীন আলী জানান, চেয়ারম্যানগণ গুদাম থেকে চাল বুঝে নেয়ার কথা। তার পরও যদি কোন অনিয়ম হয় তবে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভিযোগকারী ৪নং চিরাপাড়া পারসাতুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহামুদ খান জানায়, এই খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা যোগদানের পর থেকেই ভিজিডির চালে কম দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায় স্থানীয় মেম্বার ও সুবিধাভোগী নারীদের কাছ থেকে। বিষয়টি আমার নজরে আসায় বৃহস্পতিবার দুই মাসের ৬০৮ বস্তা ভিজিডি কার্ডের চাল সংগ্রহ করতে যাই। খাদ্য গুদামের ভিতরে ভিজিডি চালের ৩০ কেজি বস্তায় সন্দেহ দেখা দিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পুনরায় মাপা হলে সেখানেই বস্তায় ২ থেকে আড়াই কেজি চাল কম পাওয়া যায়।
১ নং সয়না রঘুনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এলিজা সাইয়েদ জানান, খাদ্যগুদামে কোন কাজে গেলে তিনি ঘুরিয়ে পেচিয়ে উৎকোচ দাবি করেন এবং চালের মাপের নিয়মিত কম দেয় আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করেছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply