বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বিদ্যালয়ের ক্লাস চলাকালীন কক্ষের টেবিলে মুঠোফোন আর ব্যাগ ফেলে ঘুমিয়ে পড়েছেন শিক্ষিকা। এমন সময় সেই ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিলেন অপর এক শিক্ষিকা। ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর সেটির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন- ‘এভাবে নিয়ম করে ঘুম, ক্লাসে পারভীন, সহ-শিক্ষক।’
পরে বিষয়টি নজরে আসতেই খোঁজ নিয়ে জানা গেল এটি ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের ‘ছোট সিঙ্গিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের’ ঘটনা। সরেজমিনে রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষিকার ক্লাসে ঘুমিয়ে পড়ার ঘটনা যাচাই করতে গিয়ে এর প্রমাণও পাওয়া যায়।
দেখা যায়- ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পারভীন আক্তার ক্লাস নেওয়ার সময় কক্ষেই ঘুমিয়ে ছিলেন। আর তারই চিত্র ধারণ করে নিজস্ব ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজমা আখতার। এমন পোস্ট ফেসবুকে দিলেন কেন- এই প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষিকা নাজমা আখতার বলেন, সহকারী শিক্ষকের আচরণে অতিষ্ঠ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে মুঠোফোনে কথা বলা, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, ক্লাসে ঘুমিয়ে পড়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তিনি জানান, চলতি দায়িত্বে সহকারী শিক্ষকের পদ থেকে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদানের সময় থেকেই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ এক বছর ধরে চলছে এই দ্বন্দ্ব। এতে অতিষ্ঠ ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ। এ দিকে, ওই বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, প্রতিদিন সহকারী শিক্ষিকা অশ্লীল ভাষায় তাদের গালিগালাজ করেন। মাথার চুল তুলে নেন। এমনকি শিক্ষার্থীদের দ্বারা নিজের পিঠ চুলকিয়ে নেন ওই শিক্ষিকা।
তবে সমস্ত অভিযোগ সত্য নয় বলে সহকারী শিক্ষিকা পারভীন আক্তার জানান, আমি মাঝে-মধ্যে মুঠোফোনে কথা বলি। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন না বলে দাবি করেন তিনি। উল্টো তিনি অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক যোগদানের পর থেকেই মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছেন। প্রধান শিক্ষক কেন আপনাকে হেয় প্রতিপন্ন করবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক হওয়ার কথা ছিল আমার। টাকার বিনিময়ে পদোন্নতি দেওয়া কমিটি কিছু শিক্ষককে চলতি দায়িত্বে নিয়োগ দিয়েছে। তার ফাইলটাও মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে।’
এ দিকে, স্থানীয়দের অভিযোগ- দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকদের মধ্যকার এমন দ্বন্দ্ব থাকলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এর মীমাংসা হচ্ছে না। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ। এমন অবস্থা চলমান থাকলে বিদ্যালয়ে তালা দিয়ে শিক্ষার্থীদের অন্যত্র ভর্তি করাবেন বলেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত অভিভাবকরা জানান। বিষয়টিতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন মণ্ডলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। এমন কোনো বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে অবগত করেননি। বিষয়টি আপনার মুখে শুনলাম। আগামীকাল ওই বিদ্যালয় পরিদর্শনে যাব।’
প্রসঙ্গত, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে চলতি বছর ওই বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৯৪ জন শিক্ষার্থী ছিল। তবে চলমান শিক্ষকদের এমন দ্বন্দ্বের ফলে ১০ জন শিক্ষার্থীকে অন্যত্র ভর্তি করেছেন অভিভাবকগণ। এছাড়া পাঁচজন শিক্ষকের পদ থাকলেও বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে চারজন শিক্ষক পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
Leave a Reply