বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৩ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ ‘স্যার, আমি আত্মহত্যা করছি। আমার লাশটা আপনি এসে নিয়ে যাবেন’। থানার ওসিকে ফোনে এ কথা বলে পাপন সাহা নামের এক যুবক নিজ হাতে বৈদ্যুতিক তার জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পর্শে আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরশহর এলাকায়।
পুলিশ, মৃতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোয়ালন্দ ঘাট থানার ২ নম্বর গেটসংলগ্ন এলাকার মৃত অশোক কুমার সাহার ছেলে পাপন সাহা (২৪)। তিনি গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশন এলাকায় একটি দোকানঘর ভাড়া নিয়ে স্টিলের ফার্নিচার তৈরি ও বিক্রির কাজ করতেন। কয়েক দিন আগে পাপন তার নিজ বাড়ির বসতঘরের চালা মেরামত করেন। মেরামতকালে ঘরের পেছন দিকে টিনের ছাউনির কিছু অংশ থানাপ্রাচীরের (বাউন্ডারি) ভেতরে চলে যায়। এই অপরাধে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে পাপন সাহাকে আটক করে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ।
তখন থেকে তাকে থানা হাজতের ভেতরে আাটকে রাখা হয়। সারাদিন সেখানে আটক থাকার পর ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে থানায় মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান পাপন। সেখান থেকে সরাসরি নিজ বাড়িতে গিয়ে গোসল করার পর মায়ের হাতে তিনি দুপুরের খাবার খান। পরে বাড়ি থেকে একা বের হয়ে নিজ দোকানে যান পাপন। রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে সেখান থেকে পাপন তার ব্যবহৃত মোবাইলফোন নম্বর থেকে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসিকে কল করে বলেন, ‘স্যার, আমি আত্মহত্যা করছি। আমার লাশটা আপনি এসে নিয়ে যাবেন’। এ কথা বলেই পাপন তার ডান হাতে বৈদ্যুতিক তার জড়িয়ে নিজেই তাতে সংযোগ ঘটান। এ সময় বিদ্যুৎস্পর্শে তিনি গুরুতর আহত হন।
এদিকে পাপনের ওই ফোনকল পেয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মো. আশিকুর রহমান এলাকার কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। গুরুতর আহত পাপনকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিদ্যুৎস্পর্শে আহত পাপন সাহাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ পৌরসভার স্থানীয় কাউন্সিলর কোমল কুমার সাহা বলেন, ‘বিদ্যুৎস্পর্শে পাপন সাহার আত্মহত্যার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক’।
ওসিকে ফোন দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুর রহমান বলেন, বসতঘরের ছাউনি নির্মাণে অবৈধ উপায়ে থানার জায়গা দখল প্রচেষ্টার অপরাধে পাপন সাহাকে আটক করা হয়েছিল। পরে মুচলেকা নিয়ে থানা থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাপনের মা পুষ্প সাহা এখন পাগলপ্রায়। তিনি বলেন, ‘থানা থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়িতে এসে আমার পাপন বারবার শুধু একই কথা বলছিল, পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে সারাদিন হাজতে আটকে রেখেছিল। এখন সবার সামনে আমি মুখ দেখাব কেমনে? থানা হাজতে আটকে রাখার অপমান সইতে না পেরে তার ছেলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে বলে তিনি জানান।
Leave a Reply