রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: আসছে পবিত্র ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে বরিশালের ঈদ বাজারে ক্রেতাদের সমাগম বেড়ে যাওয়ায় ব্যস্ততা বেড়েছে বিক্রেতাদের। বিক্রেতারাও বেশ খুশি। ছোট-বড় মার্কেট, স্বনামধন্য শোরুম ও শপিংমলগুলোর ভেতরে পোশাকের সমাহার আর বাইরে রং-বেরংয়ের বাতিতে ঝলমল করছে সব এলাকা। তবে দ্রব্যমূল্য উর্ধ্বগতির কারণে আমদানীকৃত পণ্য সামগ্রী বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশংকা জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশিরভাগ মানুষ দেশী পণ্য কিনছেন। এদিকে ক্রেতাদের দাবি অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পণ্যর দাম বেশি। অপরদিকে ১০ রোজার পর থেকে নগরীর নামীদামি টেইলার্সসহ অলিগলির টেইলার্সেও পোশাক তৈরির অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া ২০ রোজার পর থেকে জুতা ও কসমেটিক্সের দোকানগুলোতে বেচাবিক্রি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সবমিলিয়ে ক্রেতাদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারা।
সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন মার্কেট বিপনি বিতানগুলো ঘুরে জানা গেছে, রমজান শুরুর পূর্বেই ক্রেতাদের চাহিদার দিক বিবেচনায় রেখে প্রস্তুতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আনা নিত্য নতুন কালেকশন নিয়ে পসরা সাজিয়েছে ফ্যাশন হাউজ, মার্কেট ও অভিজাত বিপনি বিতানগুলো। ঈদের কেনাকাটার জন্য ভিড় লক্ষ করা গেছে, রিচম্যান-লুবনান, স্মার্টটেক্স, স্বপ্ন, স্টার প্লাস, ব্যাঙ, চন্দ্রবিন্দু, বিশ্ব রঙ ও আড়ং সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাকের দোকানগুলোতে। এছাড়া নগরীর চকবাজার, ভেনাস মার্কেট, সদর রোড, হেমায়েত উদ্দিন রোড, সোবাহান কমপ্লেক্স, ফকির কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন শপিংমলগুলোতেও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। এদিকে সিটি মার্কেট ও মহসিন মার্কেটে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্রেতাদের ভিড় লক্ষণীয়। এছাড়া বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে শৌখিন ক্রেতারা ঈদের কেনাকাটা করার জন্য ছুটে আসছেন বরিশাল শহরে। সে কারণেও নগরীর শপিংমলগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
বিক্রয়কর্মীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, মেয়েদের থ্রি-পিসে এবার কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। ‘পি-কে’, ‘কাল্পনিক’, ‘লাভ স্টোরি’ নামের নতুন ডিজাইনের থ্রি-পিসের যথেষ্ট চাহিদা বরিশালের ঈদ বাজারে। তবে মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে আলিয়াকাট ও নায়রাকাট। আর শিশুদের পোশাকের পাশাপাশি ছেলেদের পাঞ্জাবী বেশি হচ্ছে। এখানে পোশাক কিনতে আসা কলেজছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বলেন, প্রথম রোজার দিকে মার্কেটে এলেও কেনাকাটা করেননি। তবে আজ আলিয়াকাট কিনেছেন।
নগরীর গীর্জামহল্লা এলাকার বৈশাখী শপিংমলের ম্যানেজার মকবুল হোসেন জানান, শব-ই বরাতের পর থেকেইে বেচাকেনা বাড়তে শুরু করে। বাচ্চাদের পোশাকই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে শাড়ি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, পাইকারি ও খুচরা শাড়ি বিক্রেতারা এবছর ভারত থেকে গুজরাটি সিল্ক, বাহা সিল্ক, মনিপুরী কাতান, মনিপুরী সুতি, পিউর সিল্ক, জর্জেট ও নেটের ওপর কাজ করা শাড়ি আমদানি করেছেন। তবে এবার বেশিরভাগ ক্রেতার পছন্দের তালিকায় রয়েছে ঢাকাই জামদানি, টাঙ্গাইল জামদানি, তাঁতের শাড়ি, সফট সিল্ক আর জুট জামদানি। এগুলোর দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। এবছর ঈদে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকার দামি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে বেশি।
নগরীর চকবাজারের কুন্ডেশ^রী বস্ত্রালয়ের স্বত্ত্বাধিকারী বিপ্লব সাহা বলেন, এবছর আমদানীকৃত শাড়ি বেচাকেনা নেই বললেই চলে। দেশি পণ্যই বেশি চলছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে দেশি থ্রিপিচ ও বি-প্লাস শাড়ি। তিনি বলেন, বরিশালে নামীদামি ব্রান্ডের শো-রুম চালু হওয়ায় এবার ক্রেতারা ওই দিকে ছুটলেও আগামীতে তারা আবারো চকবাজারেই ফিরবেন।
‘টপ-টেন’ বরিশাল শাখার ব্যবস্থাপক ইমরান শেখ বলেন, আমরা সব সময় পোশাকের গুণগত মান ধরে রাখার চেষ্টা করছি। মানের সঙ্গে আমাদের প্রতিটি পণ্যের দামটাও সামঞ্জস্য করে নির্ধারণ করা হয়েছে।
সদ্য বরিশালে ব্রান্ড শপিংমল আড়ং এর শাখা উদ্বোধন করা হয়েছে। এ বছর উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য আড়ংয়ের দিকেই ছুটছেন। বিশেষ করে সন্ধ্যা হলেই এখানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা যায়। এখানে শপিং করতে আসা কলেজছাত্রী রুম্পা বলেন, আড়ংয়ের পোশাকের প্রতি আস্থা বেশি। এতদিন ঢাকায় গিয়ে মার্কেট করতে হতো। এবার বরিশালে শাখা হওয়ায় তার মতো অনেকেই এসেছেন এখানে মার্কেট করতে। তবে ভিন্নকথা বলেন ক্রেতা তারিক হাসান। তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকায় আড়ংয়ের পোশাক আর বরিশালের আড়ংয়ের পোশাকে পার্থক্য রয়েছে। তাই তিনি না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন। আড়ংয়ের ম্যানেজার মো. আল-আমিন জানান, দক্ষিণাঞ্চলবাসীর চাহিদা মাথায় রেখেই বরিশাল শাখায় বিভিন্ন ধরণের পোশাক এনেছেন তারা। ক্রেতাদের সন্তষ্টিকেই প্রাধাণ্য দিয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি করছেন তারা।
নগরীর কাটপট্টি এলাকার থান কাপড়ের দোকানগুলোতে তেমন একটা ভীড় দেখা যায়নি। কারণ হিসেবে জানা যায়, যারা কাপড় কিনে পোশাক তৈরি করবেন তারা আগেভাগেই কেনাকাটা শেষ করেছেন। রাফিন ব্রাদার্সের স্বত্ত্বাধিকারী বেনজির আহম্মেদ বাবু বলেন, নি¤œবিত্ত পরিবারগুলো নামি-দামি ব্রান্ডের পণ্য কিনতে পারে না। তাদের সংখ্যাই বেশি। আর এ কারণে রোজা শুরুর পূর্ব থেকে তারা গজ কাপড় কিনে দর্জির কাছে ছোটেন।
এদিকে জুতার দোকানগুলোতে ২০ রোজার পর থেকেই বেচাবিক্রি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। মেট্রো সু হাউজের প্রোপ্রাইটর শামছুল আলম জানান, বিদেশী জুতার দাম ১০% বাড়লেও চাহিদা কম। দেশি জুতার চাহিদাই বেশি। ঈদের আগে তাদের বেচাকেনা আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি।
নগরীর এ্যাপেক্সা ও বাটা শো-রুমে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কলেজছাত্র ইমরান জানান, এ্যাপেক্স এর জুতা পড়তেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তাইতো ঈদের এ্যাপেক্সের জুতা কিনেছেন। এদিকে বাটা শো-রুমে আসা কলেজ শিক্ষক মিজান রহমান জানান, গুনগত মান ও টেকসই হওয়ায় বাটাতেই আস্থা তার।
এদিকে স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসাস্থল নগরীর মহসিন মার্কেট, সিটি মার্কেট পুরোদমে জমে উঠেছে। ঈদ-উল ফিতরকে ঘিরে নগরীর নামিদামি শপিংমলের চেয়ে এ মার্কেট দুটোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এখানে আসা ক্রেতাদের দাবি, তুলনামূলকভাবে বরিশালে পোশাকের দাম গতবারের চেয়ে ৩/৪ গুণ বেশি। তাই, তারা পরিবারের সদস্যদের চাহিদা মেটাতে অনেকটা কমদামে এখানকার দোকানগুলো থেকে কিনতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের অভিযোগ ভোক্তা অধিকারের পক্ষ থেকে সঠিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় এমনটা হচ্ছে। তবে ভোক্তার জেলা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিটি পণ্যে যেখানে যৌক্তিক একটা লাভ করা যায়, সেখানে বরিশালে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ লাভ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এছাড়া অনেকে অনৈতিকভাবে আলাদা করে ভ্যাট সংযুক্ত করেছেন। এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে ঈদ বাজারে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দিতে ও যানজটমুক্ত রাখতে মেট্রোপলিটন পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি ক্রেতাদের চাপ সামলাতে ইতোমধ্যে নগরীর চকবাজার ও গীর্জা মহল্লা এলাকার সড়কে সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে ইতোমধ্যে পুরো নগরীজুড়ে ২শ ৬০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা নগরীকে পর্যবেক্ষণ করছে পুলিশ।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখা, উন্নত পুলিশি সেবার লক্ষ্যে ক্রাইম কন্ট্রোল, ট্রাফিক ও থানা কন্ট্রোল এবং সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিংয়ের জন্য ইন্টিগ্রেটেড কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের মাধ্যমে বিভাগীয় শহর বরিশালের পুরো নগরী এখন পুলিশি নজরদারির মধ্যে রয়েছে। সে কারণে মধ্যরাতেও নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে নির্বিঘেœ ঈদের বেচাকেনা চলছে।
Leave a Reply