রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৭ অপরাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ঝালকাঠির বিষখালী নদীর বেড়ে যাওয়া পানির তোড়ে সদর উপজেলার ভাটারাকান্দা এলাকায় কবি জীবনানন্দ দাশ সড়কের তিন শ মিটার, পাঁচটি বসতঘর ও শতাধিক গাছপালাসহ এক একর ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে।
গত ২৭ মে রাত থেকে এ ভাঙন শুরু হয়ে এখনো চলছে বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন। রাস্তা ভেঙে নদীতে চলে যাওয়ায় পাঁচটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অবিলম্বে নদী ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পাঁচটি গ্রাম পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে চার-পাঁচ ফুট পানি বাড়ায় মানুষ যখন আতঙ্কিত, তখন হঠাৎ করেই ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভাটারাকান্দা এলাকায় দেখা দেয় আকস্মিক নদী ভাঙন। ২৭ মে রাতে কবি জীবনানন্দ দাশ সড়কের তিন শ মিটার অংশ ভেঙ নদীতে চলে যায়।
এর পর থেকে নদী তীরের মো. হারুন খান, হেলাল হাওলাদার, আলি আকবর, হায়দার হাওলাদরে বাড়ির গাছপালাসহ ৫টি বসতঘর মালামালসহ বিষখালীতে বিলীন হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন ইয়াসের পূর্বাভাসে অন্যত্র নিরাপদে আশ্রয় নিয়ে প্রাণে বেঁচে যান। এখন এসব পরিবারের বাসযোগ্য কোনো স্থান অবশিষ্ট নেই। বিষখালীর নদীর এ ভাঙন দীর্ঘ দিনের।
এর আগেও নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে চরভাটারাকান্দা গ্রামের ছোবাহান খান, তপন গুহ, আলীম খান ও আলতাফ হোসেনের বসতঘর। ভিটামাটি হারিয়ে দুর্বিষহ দিন কাটছে তাদের।
এদিকে কবি জীবনানন্দ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় স্থানীয় চরকাঠি, চরভাটারাকান্দা, ভাটারাকান্দা, সাচিলাপুর হাইলাকাঠিসহ পাঁচটি গ্রামের তিন হাজার মানুষের মূলসড়কে বেড় হওয়ায় পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচলও। ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও নদী তীরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বিষখালী নদী তীরের চরভাটারাকান্দা গ্রামের মো. হারুন খান বলেন, নদীর তীরে আমার ঘর ছিল, যা ভেঙে গেছে। এখন ছেলে মেয়ে নিয়ে আমার থাকার মতো কোন স্থান নেই। নদীর মধ্যে শুধু সুপাড়ি গাছটিই চেনা যায়, এখানে যে আমার ঘর ছিল তার কোনো চিহ্নই নেই। পুরোটাই নদী গর্বে বিলীন হয়ে গেছে।
একই গ্রামের আলী আকবর বলেন, একরাতে রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। এখনো ভাঙতে আছে। আমি কোন রকমের পরিবারের লোকজন নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি, কিন্তু বসতঘর রাখতে পারিনি। নদীর তোড়ে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ঘরের সঙ্গে আমার মাছের একটি ঘের ছিল, সেটিও নদীতে ভেঙে গেছে। এখন আয়ের কোন পথও নেই। খুবই অসহায় অবস্থায় আছি।
নদী তীরের বাসিন্দা তপন গুহ বলেন, আমার বসতঘর আগেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন নদী তীরে কয়েখটি রেইট্রি গাছ ছিল, তাও এবার ইয়াসের প্রভাবে নদী ভেঙে পানিতে তলিয়ে গেছে।
সাইচলাপুর গ্রামের মন্টু হাওলাদার বলেন, বিষখালী নদীর তীরের কবি জীবনানন্দ দাশ সড়ক দিয়ে আমরা ছত্রকান্দা এলাকায় ঝালকাঠির আঞ্চলিক মহাসড়কে উঠে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতাম। নদী ভাঙনে সড়কের তিন শ মিটার ভেঙে যাওয়া এখন ওই সড়ক ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন মানুষের বাড়ি ডিঙিয়ে রাস্তায় উঠতে হচ্ছে। বিকল্প একটি সড়ক না করে দিলে যাতায়াতের কোনো পথই থাকবে না।
একই গ্রামের শহিদ খান বলেন, আমাদের সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সড়ক দিয়ে পাঁচটি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন। সড়কটি ভেঙে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা দুশ্চিন্তায় আছেন।
গাবখান-ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাকির হোসেন বলেন, নদী তীরে কবি জীবনানন্দ দাশের স্মরণে সড়কটির নামকরণ করা হয়েছি। এটি ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙা অংশে বাঁধ দিয়ে সড়কটি সংস্কার করার দাবি জানাচ্ছি।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, নদী ভাঙন রোধে ৬৯৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রাস্তাব পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে জামা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে শিগগিরই ভাঙন রোধে কাজ শুরু করা হবে। বিশেষ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চরভাটারাকান্দা এলাকার কাজটি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply