বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২২ পূর্বাহ্ন
আমতলী প্রতিনিধি॥ একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে ঘনঘন লোডশেডিং! আর একটু ঝড়বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। দু-একদিনেও তখন বিদ্যুতের নাগাল পাওয়া যায়না। এছাড়া মাঝেমধ্যে ঘোষণা দিয়ে, আবার অনেক সময় ঘোষণা ছাড়াই লাইন সংস্কারের নামে সারাদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। এটাই বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার চিত্র।
বছরের পর বছর ধরে আমতলী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এমন অব্যবস্থাপনায় একদিকে যেমন চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের, অন্যদিকে সরকারেরও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
বিদ্যুৎ নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই আমতলীর গ্রাহকদের। তীব্র গরমে চরম ভোগান্তি ও নাজেহাল হয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে উপজেলার প্রায় ৫৭ হাজার পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহককে। ঘনঘন লোডশেডিং, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল আদায়, মিটার ভাড়া ও ডিমান্ড চার্জের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় এবং শহরাঞ্চলে লোডশেডিং কিছুটা কম থাকলেও উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে ঘনঘন লোডশেডিং হওয়াসহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের।
ঋতু বদলের সাথে সাথে প্রকৃতি যেমন তেঁতে উঠছে তেমনি গরম শুরু হওয়ার সাথে সাথে প্রতিদিন বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও ঘনঘন লোডশেডিংয়ে নিত্য বিড়ম্বনায় পড়েছেন আমতলী উপজেলাবাসী। গ্রাম-গঞ্জের মানুষের প্রধান বাহন হচ্ছে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক। রাতে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে ইজিবাইক গুলোতেও চার্জ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে উপজেলাটিতে যাতায়াতে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর থেকেই ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমতলীবাসীকে। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের অন্য কথা, সরবরাহ লাইনে ত্রুটি ও নানাবিধ সমস্যার কারণে বাধ্য হয়ে এলাকাভেদে ঘনঘন লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ বিদ্যুৎ গ্রাহকের অভিযোগ, ঘন ঘন লোডশেডিং, উপজেলার হাজার হাজার গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে বিদ্যুৎ বিল আদায়, মিটার ভাড়া ও ডিমান্ড চার্জের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রতিবাদ করেও এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
অন্যদিকে শহরাঞ্চলের গ্রাহকরা জানায়, পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সরবরাহ লাইনে ত্রুটি ও নানাবিধ সমস্যার অজুহাতে ঘনঘন লোডশেডিং দিচ্ছে। তারা আরও বলেন, লোডশেডিংয়ের বিষয়টি মুঠোফোনে জানতে অফিসের দেওয়া নাম্বারে কল দিলে সে নাম্বারটি অধিকাংশ সময়ই ব্যস্ত থাকে। আবার অনেক সময় ফোন রিসিভ করে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে বলে অভিযোগ করে তারা।
করোনায় স্থবির ব্যবসা-বাণিজ্য বিদ্যুতের এই অব্যবস্থাপনায় আরও বেহাল পরিস্থিতির তৈরি করেছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। সব মিলিয়ে পল্লী বিদ্যুতের এই অব্যবস্থাপনা অযোগ্য ও অদক্ষ লাইনম্যান, টেকনিশিয়ানের কারণে উপজেলাবাসীর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে তারা।
আমতলী পল্লী বিদ্যুতের সাব- জোনাল অফিসের এজিএম মো. মোশাররফ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে সমস্যা থাকলে আমরা কী করবো? লাইনের সমস্যাগুলো সমাধান হলে এ সমস্যা আর থাকবেনা। প্রতিদিনই কি লাইনে সমস্যা থাকে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো জবাব দিতে পারেননি। আর গ্রাহকদের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে তিনি বলেন, গ্রাহক যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তার মিটার রিডিং দেখে সেই পরিমাণ বিলই তাদের দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী রাজ্জাকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, পটুয়াখালী থেকে আমতলীতে যে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনটি রয়েছে সেটি অনেক পুরাতন। মাঝেমধ্যে লাইনটি সংস্কারের প্রয়োজন হয়। যার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়। আবার লাইনের পাশে প্রচুর পরিমাণে গাছ থাকায় একটু ঝড় বা বাতাস হলে সেগুলো লাইনের উপর পরে তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে উপজেলার বিভিন্নস্থানে বিদ্যুতের লাইনের উপর গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দুইদিন ধরে পড়ে যাওয়া সেই গাছগুলো অপসারণ করে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
Leave a Reply