শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন
এম.কে. রানা ॥ ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। শুরু হয়ে গেছে ঈদ আনন্দ। জীবন বাজি রেখে মানুষ এখনো ফিরছে শেকড়ের টানে। ছুটছে প্রিয়জনের কাছে। পথে পথে দুর্ভোগ পেরিয়ে বাড়ি পৌঁছেই ভুলে যাচ্ছে তাদের পথের ক্লান্তি। পথের দিকে চেয়ে থাকা মা ছেলেকে এসে জড়িয়ে ধরছেন। আনন্দে কাঁদছেন। স্বামীর ফেরায় খুশিতে আত্মহারা স্ত্রী। বাবাকে ঘিরে সন্তানদের হৈহৈ রৈরৈ কাণ্ড। ঈদের নতুন জামা-কাপড় পেয়ে তাদের খুশির বাঁধ ভেঙে গেছে। ঈদের ছুটিতে প্রিয় মানুষকে কাছে পেয়ে আনন্দে মাতোয়ারা সবাই। এমন আনন্দ এখন ঘরে ঘরে হলেও কিছু মানুষের নেই কোনো ফুরসত। মেলে না ছুটি। উৎসব আনন্দে শামিল হতে পারেন না তারা। পেশাগত দায়িত্ব পালনেই তৎপর থাকতে হয় তাদের। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সবাই যখন ঈদের খুশি ভাগাভাগিতে ব্যস্ত, পেশাগত কারণে দায়িত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে কিছু মানুষ থাকে উৎসব-আনন্দের ঊর্ধ্বে। কর্মস্থলে থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয় ঈদের দিনও। ছুটি না পেয়ে দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকা এসব মানুষ বলছেন, ‘পরিবার-পরিজনের জন্য সবারই মন কাঁদে।
আমাদেরও কাঁদে। তবে এই ভেবে ভালো লাগে যে, বৃহত্তর মানব গোষ্ঠী ও দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে আনন্দ ত্যাগ করতে পেরেছি।’ ঈদ উদ্যাপন নির্বিঘœ করতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। স্বজনদের সময় না দিয়ে জননিরাপত্তায় বিরামহীন দায়িত্ব পালন করছেন তারা। একই সাথে গণমাধ্যম কর্মীদেরও একটি বড় অংশ দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি ও অবস্থার তাৎক্ষণিক তথ্য দেশবাসীকে জানাতে ঈদের দিনেও রাস্তায় ও অফিসে দায়িত্ব পালন করেন। নিজেদের ঈদ আনন্দ বাদ দিয়ে টিভি পর্দায় তুলে ধরেন অন্যদের ঈদ আনন্দের খবর। এছাড়া নগরীর প্রাইভেট সিকিউরিটি গার্ডরাও বিভিন্ন বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, ব্যাংক ও বুথের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবেন ঈদের ছুটিতে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা থাকবেন সদা প্রস্তুত। নগর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে কাজ করেন সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। মানুষের কষ্ট লাঘব করে মুখে হাসি ফোটানোর চেয়ে বড় ঈদ আনন্দ আর নেই। ঈদে প্রিয়জনের সাথে মিলিত হওয়ার আনন্দে সবাই থেকেছে বিভোর। মানুষের আনন্দ দেখে নিজেদের স্বজনহীন ঈদ কাটানোর ব্যথা ভুলে যায়। দিনরাত সড়ক, নৌপথসহ বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে মানুষের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করেছেন তারা। ঈদের সরকারি ছুটিতে অফিস আদালত যখন বন্ধ, তখন পুরোপুরিই খোলা রয়েছে থানা-ফাঁড়ি, তদন্ত কেন্দ্র, সচল রয়েছে পুলিশের সব অফিস।
সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা সমস্যা যাতে না হয় সেজন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হচ্ছে পুলিশকে। ব্যারাক এবং অস্থায়ী আবাসে ঈদ কাটবে বলে কোনো দুঃখ নেই তাদের। বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে রয়েছে অনেক দূরে। মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য তারা কাজ করে যাচ্ছেন। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন কনস্টেবল বলেন, আমাদেরতো ঈদগাহে গিয়ে নামাজ আদায়ের সুযোগ নেই। তাই সুযোগ বুঝে পাশের মসজিদেই নামাজ আদায় করার আশা আছে। ঈদে ইচ্ছে করলেইতো আর ছুটিতে যাওয়া যায় না। কারো না কারো ডিউটি করা লাগবেই। তাছাড়া ডিউটিতে একা থাকলে কষ্ট লাগতো, তবে অনেকেই থাকবে, তাই খারাপ লাগে না। বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগের টিআই-১ শামসুল আলম বলেন, প্রতি বছর ছুটি পেলেও এবার ছুটি পাইনি। পরিবার পরিজন রেখে ঈদ করবো এতে কিছুটা কষ্ট হয়। তবে ঘরমুখো মানুষদের চলাচল নিশ্চিতকরণ এবং তাদের নির্বিঘেœ গন্তব্যে পৌছাতে পারাটাও আমাদের দায়িত্ব। তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাগণও রাস্তায় নেমেছেন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। মানুষের আনন্দঘন মুহূর্তগুলো নির্বিঘœ করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
তিনি বলেন, আপনারা যারা সাংবাদিক আছেন আপনাদেরসহ বন্ধু বান্ধবদের সাথে আমাদের ঈদ আনন্দ ভাগ করে নেব। পরিবার-পরিজন নিয়ে অন্য সবাই যখন ঈদ উদযাপনে ব্যস্ত, সংবাদকর্মীরা পেশাদারিত্বের কারণ তখন ব্যস্ত সময় কাটান পাঠক, শ্রোতা, দর্শকের কাছে সঠিক এবং সর্বশেষ খবর পৌঁছে দেয়ার কাজে। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। পেশাদারিত্বের কারণে ঈদের সেই খুশি, আনন্দ সংবাদকর্মীরা খুঁজে পায় পাঠক, শ্রোতা, দর্শকের মাঝে সংবাদ পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে। জাতীয় দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার বরিশাল ব্যুরো প্রধান আরিফুর রহমান বলেন, প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজ করার সুবাদে ঈদের ছুটি কাটানোর সৌভাগ্য জুটেছে। তবে সংবাদ সংগ্রহ থেকে মুক্তি মেলেনা ঈদের দিনও। সংবাদ মাধ্যমে কাজ করে পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করার সুযোগটাও বড় আনন্দের। ঈদের দিন পরিবারকে সময় দিয়েও চেষ্টা করি পরিচিতজনদের সাথে একত্রিত হতে। তবে বেশি আনন্দ পাই যখন খবর পাই দূর থেকে ঈদ করতে আসা মানুষগুলো নিরাপদে বাড়ি ফিরেছে। ভয়েস অব বরিশাল’র মাধ্যমে সকলের প্রতি রইল ঈদের শুভেচ্ছা।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪ এর বরিশাল ব্যুরো প্রধান প্রাচুর্য রানা বলেন, শুধু সংবাদমাধ্যমই নয়, এখন এমন অনেক পেশাই রয়েছে যারা ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারেন না। যেমনঃ সড়ক বিভাগ, পরিবহন চালক, শ্রমিকসহ জনসেবামূলক অনেক প্রতিষ্ঠান। তবে সংবাদকর্মীরা একটু ব্যতিক্রম। বিশেষ করে আমরা যারা টেলিভিশন মিডিয়ায় কাজ করি। আমরা অন্যের ঈদ আনন্দ টেলিভিশনের পর্দায় সকলের কাছে তুলে ধরি। এটাও আমাদের জন্য অনেক। তারপরও ঈদের দিন যতটুকু সময় পাই পরিবারকে দিয়েও বন্ধুদের দেয়ার চেষ্টা করি। বেসরকারি টেলিভিশন মিডিয়া এনটিভি’র সিনিয়র করেসপনডেন্ট ও যুগান্তর পত্রিকার বরিশাল ব্যুরো প্রধান আকতার ফারুক শাহিন বলেন, প্রতিনিয়ত এবং প্রতিমূহুর্ত কাউকে না কাউকে জেগে থাকতে হয় পুরো সমাজটার সুখ শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে। তিনি হতে পারেন দমকল বাহিনীর কেউ, কিংবা পুলিশ অথবা পরিচ্ছন্নতা কর্মী। যারা একদিন ছুটি নিলে ওলট-পালট হয়ে যায় আমাদের চারপাশের পৃথিবী।
সব পেশার মানুষদের সম্পর্কেই নানা নেতিবাচক ভাবনা থাকে বিভিন্ন মানুষের। তবে আমরা যদি চোখ বন্ধ করে একটু ভাবি খবরের কাগজ নেই, টেলিভিশনে কোন সংবাদ নেই, আগুনে পুড়ে যাচ্ছে বন্দর অথচ তা নেভানোর কেউ নেই কিংবা নগরজুড়ে সন্ত্রাস ঠেকাচ্ছেনা কেউ। এই ভাবনাগুলো ভাবতে গেলেই যেমন ভয়ে আতংকে শিউরে উঠতে হয়, তেমনি সেই শিউরে ওঠা থেকে বাঁচাতেই সংবাদকর্মী, পুলিশ, দমকল বিভাগ আর পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজ করতে হয় ঈদের দিনেও। আমাদের ত্যাগে আরো সুন্দর হোক এই সমাজ সেজন্যই এই নিরন্তর ছুটে চলা।
Leave a Reply