রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০১ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:দেখতে দেখতে কেটে গেলো নগরবাসির স্বজন হারানোর ৫টি বছর। ২০১৪ সালে আজকের এই দিনটিতে সকলকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পারি জমান আধুনিক নগরীর রূপকার বরিশাল সিটি’র সাবেক জননন্দিত মেয়র শওকত হোসেন হিরন। তিনি না থাকলেও আজো নগরবাসির কাছে স্মরনীয় ব্যক্তি হিসেবেই রয়ে গেছেন তিনি। তার প্রতিচ্ছবি আজো ভেসে উঠছে তার রেখে যাওয়া স্মৃতি এবং উন্নয়ন কর্মকান্ডে। তাইতো প্রিয় মানুষকে হারানোর বেদনায় আজো মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরন হচ্ছে।এদিকে প্রতি বছরের ন্যায় আজ ৯ এপ্রিল শওকত হোসেন হিরনের ৫ম মৃত্যু বার্ষিকী স্মরনিয় করে তুলতে নগরজুড়ে নানা আয়োজন করা হয়েছে। স্বজনদের ছাড়াও তার অনুসারী এবং ভক্তবৃন্দ নগরীতে আয়োজন করেছেন বিশেষ দোয়া-মোনাজাত ও কাঙ্গালী ভোজের। করা হবে কবর জিয়ার।
জানাগেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয় পরিষদের জননন্দিত মেয়র ছিলেন শওকত হোসেন হিরন। যিনি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর পরই পাল্টে যায় নগরীর রূপ-রহস্য। উন্নয়ন বঞ্চিত বরিশাল সিটিকে আধুনিক রূপে পরিচয় করিয়ে দেন দেশবাসির কাছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, শওকত হোসেন হিরনের উন্নয়নের কথা ছাপিয়ে যায় বিদেশীও। রাস্তা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, গ্রীন সিটি রূপান্তরে গাছের চারা রোপন ও আলোকিত নগরী গড়ে তোলা সহ নানা ক্ষেত্রে অবদান রয়েছে শওকত হোসেন হিরনের।
শুধুমাত্রমাত্র নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রেই নয়, বরং নগরীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতেও রয়েছে তার বিশেষ অবদান। দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অভিভাবক আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ-এমপি’র হাত ধরে জাতিয়া পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করা শাওকত হোসেন হিরন আহ্বায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের। পরবর্তীতে কাউন্সিলের মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতিও হয়েছিলেন তিনি। তার উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং রাজনৈতিক মেধা তাকে নিয়ে যায় প্রসংশার উচ্চ শিখরে।
যার দরুন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থার পাত্রে পরিনত হন হিরন। তবে তার পরেও দেশের উল্টো ধারার রাজনীতির মার প্যাচে হোচট খেতে হয় তাকে। ২০১৩ সালের ১৫ জুন বরিশাল সিটি’র তৃতীয় পরিষদের নির্বাচনে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী আহসান হাবিব কামালে কাছে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হতে হয়েছে শওকত হোসেন হিরনকে।
পরে অবশ্য ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার ত্যাগের মূল্যায়ন করেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি শওকত হোসেন হিরনকে বরিশাল সদর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী করেন এবং একই বছরের ৫ই জানুয়ারী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে এমপি হিসেবে বেশিদিন টিকে থাকতে পারেননি পৃথিবির বুকে। নিয়তির কাছে পরাজয় মেনে নিতে হয় তাকে।
২০১৪ সালের ২২ মার্চ রাত ৯টার দিকে বরিশাল ক্লাব এর সিঁড়ি থেকে নামতে গিয়ে পা পিছলে মেঝেতে পড়ে যান তিনি। এতে মস্তিক্তে রক্তক্ষরণ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। এর পর প্রথমে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা এবং ২৪ মার্চ সিঙ্গাপুরের গ্লেনগলস মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানেও অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় ১১ দিন পরে ৪ এপ্রিল তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। ভর্তি করা হয় এ্যাপোলো হাসপাতালে। সেখানে ৯ এপ্রিল সকাল ৭টায় চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন।
এদিকে শওকত হোসেন হিরনের পঞ্চম মৃত্যু বার্ষিকীতে পরিবারের পক্ষ থেকে তেমন কোন কর্মসূচি নেয়া হয়নি। কারন হিরনের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার স্ত্রী সদর আসনের সাবেক এমপি জেবুন্নেছা আফরোজ সহ পরিবারের সদস্যরা ওমরা হজ্ব পালনে সৌদীয়ারবে অবস্থান করছেন। তবে হিরনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার মালিকানাধিন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে মিলাদ ও দোয়া-মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে। তাছাড়া হিরনের ভক্ত ও অনুসারীরাও আয়োজন করেছেন বিশেষ দোয়া মোনাজাত। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।
Leave a Reply