শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৩ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট : আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের জন্য বরাদ্দ সাতটি আসন অনেকটা চূড়ান্ত। আসনসংখ্যা আর বাড়ানো হবে না বলে আওয়ামী লীগ থেকে আভাস দেওয়া হয়েছে। যদিও এই সাত আসনে সন্তুষ্ট নয় শরিকরা। জোটের নেতারা আসনসংখ্যা বাড়াতে বিষয়টি আবার বিবেচনা করতে বলছেন।
জোট থেকে পাওয়া আসনগুলোতে শরিকরা নৌকা প্রতীকে ভোট করবে। তবে এসব আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী তুলবে না আওয়ামী লীগ। জোটের নেতাদের বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে জোটের প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে জোট নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি থেকেই যাচ্ছে।
এদিকে জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত শরিকদের আসন বণ্টন চূড়ান্ত করতে চায়নি আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির সঙ্গে কোনো সমঝোতা হয়েছে কি না তা পরিষ্কার হওয়া যাচ্ছে না। যদিও তফসিল অনুযায়ী আগামীকাল রবিবার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। তাই আজ-কালের মধ্যেই আসন ভাগাভাগির জটিলতার মীমাংসা করতে হবে।
শরিকদের আসন বাড়ানোর দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা আর পরিবর্তন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যেভাবে আসন বণ্টন হয়েছে, আমার মনে হয় সেটা ফাইনাল। আর কোনো পরিবর্তন হবে না।’
শরিকদের মধ্য থেকে যে সাতজন নৌকা প্রতীকে অংশ নিতে পারেন, তাঁদের সবাই একাদশ সংসদের সদস্য ছিলেন।
জোট থেকে ভোট করে একাদশ সংসদে আটজন জায়গা পান। তাঁদের মধ্যে ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এখনো শরিক হিসেবে নির্বাচন করার সুযোগ পাচ্ছেন না।
সুনির্দিষ্ট করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘আলোচনায় আমরা জোটের কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ করতে চাইনি। দলের প্রার্থী বাড়ানোর জন্য কথা বলেছি।’
কম আসন-স্বতন্ত্রে শরিকদের অসন্তোষ :
একাদশ নির্বাচনের তুলনায় দ্বাদশ নির্বাচনে জোটের শরিকদের কম আসন দেওয়ায় অসন্তুষ্ট জোটের নেতারা। আসন বণ্টনের আলোচনার শুরু থেকে শরিকরা গতবারের চেয়ে বেশি আসন দাবি করে আসছিল। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জোটের প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত শরিকদের নিয়ে প্রথম বৈঠকেও আসন বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনায় উঠেছিল। এমনকি শরিকদের দেওয়া আসনে যেন আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকে, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
স্বতন্ত্র থাকলে কি শরিকদের বিজয়ী হওয়ার হওয়ার সক্ষমতা নেই? স্বতন্ত্র নিয়ে এত ভয় কিসের? এই প্রশ্নের জবাবে জোটের প্রভাবশালী নেতা বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীতে অস্বস্তি থাকাটা স্বাভাবিক। বিষয়টি আসলে ভয়ের না। বিষয়টি স্থানীয় পর্যায়ে সমর্থনের। স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও আওয়ামী লীগের। এতে আওয়ামী লীগের নিজের ভোট ভাগ হয়ে যাবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী তুলবে না সেটা জানিয়ে দিয়েছে।’
এদিকে রাশেদ খান মেননের আসন পরিবর্তন হয়েছে। বরিশাল-৩ নয়, উজিরপুর ও বানারীপাড়া নিয়ে গঠিত বরিশাল-২ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি।
শরিকদের আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী তুলে নেওয়া এবং আসন বাড়ানোর দাবি জানিয়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘যে সাতটি আসনের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটি আর একটু বাড়ানো দরকার। জোটের প্রার্থীর আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রত্যাহার করা দরকার। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছি।’
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে হাসানুল হক ইনুর আসন বাড়ানোর বিষয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলের আলোচনা একটা সমঝোতায় এসে পৌঁছেছে। বিনয়ের সঙ্গে যে কথাটি উত্থাপিত হয়েছে, এটাতে তো আলোচনা করার বিষয় থাকতেই পারে। সময় এখনো আছে। তবে আমি মনে করি, আমাদের দলের পক্ষ থেকে এটা মোটামুটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘এখানে সুনির্দিষ্ট বিষয় এবং সিট নিয়ে ১৪ দলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয় না। আলোচনাগুলো হয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচনী বিজয়ের লক্ষ্যে। কোন প্রার্থী নির্বাচনে বিজয় অর্জন করবেন, সম্ভাব্য এ বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। সে বিবেচনায় নানা ধরনের জরিপ এবং আমাদের কাছে যেসব তথ্য-উপাত্ত আছে, সেগুলোর ভিত্তিতেই ১৪ দলের আসন বণ্টন বরাদ্দ করা হয়েছে।’
Leave a Reply