রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট : বোমা বিস্টেম্ফারণের ঘটনায় দুই নেতার কথোপকথনের অডিও ফাঁসের পর বেকায়দায় পড়েছে রাজশাহী বিএনপি। এ অবস্থায় তারা মাঠে নামতে চেষ্টা করছে অভিমানে থাকা জামায়াতকে নিয়ে। তবে নিষিদ্ধ এ দল সিটি নির্বাচনে ছাড় না পেয়ে এখন চাচ্ছে রাজশাহী-৩ আসনটি। প্রতিশ্রুতি পেলেই তারা বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে মাঠে নামবে। তবে গত সিটি নির্বাচনের সময়ই এই আসনটি নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিএনপির হাইকমান্ড। তাই আসনটি জামায়াতকে ছাড় দিতে চাইলেও বিএনপিতে বিরোধ উস্কে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব সংকট সমাধানের জন্য তৃতীয়বারের মতো গতকাল সোমবার রাজশাহীতে ছুটে এসেছেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
অন্যদিকে বিএনপির অডিও ফাঁসের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আরও উজ্জীবিত হয়েছেন। তাদের প্রচার কার্যক্রমে বেড়েছে গতি।
গত মঙ্গলবার রাজশাহীর সাগরপাড়ায় বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর পথসভায় তিনটি হাতবোমা বিস্টেম্ফারণ হয়। বিএনপি এ ঘটনায় প্রথমে আওয়ামী লীগকে দায়ী করলেও অডিও ফাঁসের পর বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। গত শনিবার দিবাগত রাতে এই বোমা বিস্টেম্ফারণের ঘটনায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর সঙ্গে কথোপকথনের অডিও ফাঁস হয়। এতে মন্টু ইঙ্গিতপূর্ণ ভাষায় বোমা বিস্টেম্ফারণের ঘটনায় দায়ী করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকতকে। পুলিশ মন্টুকে গ্রেফতারও করে। এরপর থেকে বিএনপি নেতাকর্মীর মাঝে নতুন করে ছড়িয়েছে আতঙ্কও। গ্রেফতার আতঙ্কে দুলু এ ঘটনার পর আর রাজশাহীতে পা রাখেননি।
আলাপকালে একাধিক বিএনপি নেতা জানান, এ ঘটনার পর বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীরা অনেকটাই মুষড়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় গতকাল মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সামান্য কিছু নেতাকে নিয়ে গণসংযোগ চালালেও অধিকাংশ নেতাকেই দেখা যায়নি। এ ছাড়া মিজানুর রহমান মিনুর অনুসারী ওয়ার্ড পর্যায়ের অনেক নেতাই অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে এখনও মাঠে নামেননি। তাদের অভিমান দূর করতে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজশাহীতে এসে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র্র রায়। তখন তিনি এক সপ্তাহ অবস্থান করেও তেমন সফল হয়নি। গত ১৭ ও ১৮ জুলাই তিনি দ্বিতীয় দফা এসেও ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপি নেতা ও জামায়াতকে মাঠে নামাতে ব্যর্থ হন। এদিকে শনিবার অডিও ফাঁসের পর নেতাকর্মীরা ভেঙে পড়েন। এখনও জোটের শরিক জামায়াত মাঠে নামেনি।
গত ৫ বছর ধরেই রাজশাহী-১ অথবা রাজশাহী-৩ আসটি চেয়ে আসছিল জামায়াত। কিন্তু রাজশাহী-১ আসনটি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আমিনুল হক পাবেন- এটা প্রায় নিশ্চিত। সে ক্ষেত্রে জামায়াত চায় রাজশাহী-৩ আসনটি। আর এই আসনটি পেতে ৫ বছর ধরেই কাজ করছেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। তিনি বলেন, গত সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলাম। তখন হাইকমান্ড আমাকে রাজশাহী-৩ আসনে ভোটের প্রস্তুতি নিতে বলে। তখন থেকেই তিনি ওই আসনটিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান।
অন্যদিকে জামায়াতের নায়েবে আমির আবু ইউসুফ সেলিম গত শুক্রবার রাতে গ্রেফতার হন। এর আগে তিনি একাধিকবার রাজশাহী-৩ আসনে জোটের পক্ষ থেকে জামায়াতের দলীয় প্রার্থী চেয়ে আসছিলেন। তবে এ নিয়েও জামায়াতের সঙ্গে চলছিল দর কষাকষি বেশ আগে থেকেই। সেটি এখন প্রকট হয়েছে সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।
এ প্রসঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সমকালকে বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবল ভাঙেনি। তবে সরকারের নানা চাপে ও আতঙ্কে অনেক বিএনপির নেতাকর্মী মাঠে নামছেন না। বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার আছে, এই জোয়ারকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করতে চেষ্টা করছেন তারা। জামায়াত প্রসঙ্গে এখনই মন্তব্য করতে চান না বলে জানান তিনি।
এদিকে সোমবার বৃষ্টি ও কাদা উপেক্ষা করে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন জমজমাট প্রচার চালান। তিনি নগরীর শিরোইল মটপুকুর এলাকায় সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগে বের হন। এ সময় স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে ওই এলাকা। স্থানীয় শত শত মানুষ উৎসুক হয়ে লিটনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় লিটন রাজশাহীর উন্নয়নের স্বার্থে নৌকায় ভোট চান। লিটন বলেন, দিন দিন নেতাকর্মী-সমর্থক বাড়ছেই। নৌকাকে ঘিরে মানুষের উৎসাহ বাড়ছে। উৎসবমুখর একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। প্রতিপক্ষ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার নানা অপচেষ্টা করছে। তাদের অপকৌশলে পা দিচ্ছি না। তারা ভোটারদের কাছেও সাড়া পাচ্ছে না।
নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে সোমবার বিকেলে গাজীপুরের নবনির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সোনাদীঘির মোড়, মালোপাড়া, মনিচত্বর এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, উন্নয়নের প্রতীক নৌকা। রাজশাহীর উন্নয়নের ধারা ফেরাতে হলে আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে খায়রুজ্জামান লিটনকে বিজয়ী করতে হবে।
অন্যদিকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে নেতাকর্মীদের নিয়ে নগরীর পঞ্চবটী, কেদুর মোড় এলাকায় ধানের শীষের প্রচার চালান বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। এ সময় তিনি বলেন, রাজশাহীর মানুষের ধানের শীষের প্রতি আস্থা দেখেই আওয়ামী লীগ এখন পোস্টার সন্ত্রাস এবং তথ্য সন্ত্রাস চালাচ্ছে। কিন্তু এখানকার মানুষের ধানের শীষের প্রতিই আস্থা আছে।
গণসংহতি আন্দোলনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদ গতকাল নগরীর সাধুর মোড়, কেদুর মোড়, বাশার রোড ও সাগরপাড়ার বিভিন্ন মহল্লায় ও দোকানপাটে প্রচার চালান। মুরাদ মোর্শেদ বলেন, জনগণ পরিবর্তন চায়। নাগরিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পক্ষে তারা অবস্থান নিয়েছেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা জোনায়েদ সাকী।
সূত্র : সমকাল
Leave a Reply