শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশালে একদিকে আমন ধান কর্তন অন্যদিকে বোরো বীজতলা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আমন আবাদ করায় সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় মিধিলিতে তেমন একটা প্রভাব পড়েনি। ইতোমধ্যে আবাদকৃত বোরো ধানের ৫০ ভাগ কর্তন করা হয়েছে। জানুয়ারী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই বাকী ধান কাটা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
এদিকে ফেব্রুয়ারী/মার্চ পর্যন্ত বোরো আবাদ করা গেলেও আগে-ভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষক ও কৃষি অফিস। এ লক্ষ্যে জেলায় ইতিমধ্যে ৫০ হাজারের বেশি কৃষককে প্রণোদনার আওতায় ধানের বীজ ও সার বিতরণ করেছে জেলা কৃষি অফিস।
বরিশাল জেলা বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, কোন কোন উপজেলায় আমন ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায় চলে এসেছে। ধানের ফলন হওয়ায় উৎসাহ নিয়ে এবার বোরো আবাদে তাদের আগ্রহ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ধান আবাদকে সামনে রেখে নির্দিষ্ট সময়ে ধান রোপণের লক্ষ্যে বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের বীজ দিয়ে তারা বীজতলা তৈরীর কাজ করছেন। কারণ অগ্রহায়ণ মাস বোরো ধানের বীজতলা তৈরির উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন। তাই বীজতলার জন্য রোদ পড়ে এমন উর্বর ও সেচ সুবিধাযুক্ত জমি নির্বাচন করে বীজতলা তৈরী করছেন। তারা জানান, শীত মৌসুমে বীজ ৪৮ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেগুলো বীজতলায় ছিটাতে হয়। বীজ ছিটানোর ২৮ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে চারাগুলো রোপণের উপযুক্ত হয়। জেলা কৃষি বিভাগ থেকে এরই মধ্যে বিভিন্ন উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের মধ্যে বিনামূল্যে উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রীজ জাতের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। তাই বোরো আবাদে তারা বীজতলা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বরিশালের উপ-পরিচালক মো. মুরাদ হাসান জানান, জেলার ১০ উপজেলায় ৬৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত জমির জন্য প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর বীজতলা প্রয়োজন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
সরেজমিন উজিরপুর ও বাবুগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বোরো ধান আবাদে কৃষকরা বীজতলা তৈরিতে জমি পস্তুত করছেন। উজিরপুরের ধামুরা গ্রামের কৃষক আতাহার আলী জানান, এ মৌসুমে প্রায় ৭০ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। এ জন্য ৩ বিঘা জমিতে ৪ শ কেজি ধান দিয়ে বীজতলা তৈরি করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণসহ সার্বিকভাবে সহায়তা করছেন বলে জানান তিনি। তবে বীজতলায় অতিরিক্ত ঠান্ডা পড়লে চারা যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়েছেন।
বাবুগঞ্জের ভূতেরদিয়া গ্রামের কৃষক শুক্কুর মিয়া বলেন, তিনি ১০ বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছিলেন। ইতোমধ্যে ৭ বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। তবে যেহেতু অগ্রহায়ন মাস বোরো আবাদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় তাই এরই মধ্যে তিনি বোরো বীজতলা তৈরীর কাজ শুরু করেছেন। আরেক কৃষক ফজলু হাওলাদার বলেন, আমন ধান কাটা শেষ হওয়ার পরপরই ইরি-বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজ শেষ করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বরিশালের উপ-পরিচালক মো. মুরাদ হাসান বলেন, এ বছর জেলা ১ লাখ ২৫ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কারণে জেলায় ৪০০ হেক্টর জমির আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আমন আবাদ করায় ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যামাত্রায় এর কোন প্রভাব পড়েনি।
তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা হিসাবে জেলার ১০ উপজেলায় প্রায় ৫২ হাজার কৃষকের মাঝে উপশী ও হাইব্রীজ জাতের ধানের বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। বীজতলা তৈরিসহ ফলন বৃদ্ধিতে কৃষকদেরকে বিভিন্ন পরামর্শসহ সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়া গম, ভূট্টা, বীনা বাদাম, সরিষা, মুগ, খেশারীসহ ৯ ধরণের ফসলের জন্য ৩৫ হাজার ৫৫০ জন কৃষককে কৃষি প্রণোদনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply