সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০১ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বৃষ্টি কিংবা জোয়ার এলেই রাস্তাঘাট ডুবে যায় পানিতে। চারদিকের ময়লার দুর্গন্ধে নাক চেপে চলতে হয়। বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানি যেন দুর্লভ বস্তু। এ অবস্থার মধ্যে গাদাগাদি করে বাস করছে ১ হাজার ৮০০ পরিবার। এ চিত্র বরিশাল নগরীর পলাশপুর গুচ্ছগ্রামের। পুরো নগরীতে এমন বস্তি রয়েছে আরো ১৯টি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এসব বস্তিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই ছাড়া আর কোনো সুবিধা নেই। জনপ্রতিনিধি পাল্টালেও তাদের অবস্থার কোনো উন্নয়ন হয় না।
বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) সূত্রে জানা গেছে, নগরীর উত্তর-পূর্বাংশে কীর্তনখোলার তীরঘেঁষে জেগে ওঠা চরবদনা-আমানতগঞ্জ মৌজার বিশাল চর এলাকাটি পলাশপুর গুচ্ছগ্রাম নামে পরিচিত। এ এলাকাটি বিসিসির ৫ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। মূলত ভূমিহীনদের জন্য সরকারিভাবে এখানে গুচ্ছগ্রাম করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পলাশপুর গুচ্ছগ্রামের আটটি শাখা আছে। এসব শাখায় প্রায় ১ হাজার ৮০০ পরিবার বাস করছে। তবে এর মধ্যে মাত্র ৪৪৪ পরিবার ছাড়া বাকিগুলো অবৈধভাবে বসবাস করে আসছে। এ কারণে প্রত্যেক পরিবারকে ২ শতাংশ করে জমি দেয়ার কথা থাকলেও অনেকেই পায়নি। অথচ তারা ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে এখানে বসবাস করে আসছে। অনুমোদন না থাকায় এ পরিবারগুলো বিদ্যুতের সংযোগও নিতে পারছে না।
তারা জানান, খানাখন্দকে ভরা সড়কগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অল্প বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে যায়। চারদিকে ময়লার দুর্গন্ধ। বর্ষা মৌসুমে কীর্তনখোলার জোয়ারে এলাকাটি ডুবে যায়। ভাটার সময়ও পানি আটকে থাকে। মেয়র বদল হলেও এলাকার বাসিন্দাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না।
পলাশপুর গুচ্ছগ্রামের সমন্বয়কারী মো. গাফফার বলেন, তিনটি গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারী ৪৪৪ পরিবারকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ২ শতাংশ করে খাসজমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে আরো ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ পরিবারের জমি বরাদ্দ পায়নি। এ কারণে তারা বৈধ উপায়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পারছে না।
একই অবস্থা কীর্তনখোলা নদীর তীরে গড়ে ওঠা রসুলপুর কলোনির। বিসিসির ৯নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত এ বস্তিতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বাস করে। ছোট্ট একটি খাল নগরী থেকে এ বস্তিটিকে আলাদা করে রেখেছে। এখানকার রাস্তাঘাটের অবস্থাও বেহাল। তীব্র সংকট সুপেয় পানির। নদীঘেঁষে গড়ে ওঠায় বৃষ্টিতে বা জোয়ারে ডুবে যায় রসুলপুরের একাংশ। একই চিত্র দেখা গেল কেডিসি, বালুর মাঠ, স্টেডিয়াম, ভাটারখাল ও কলাপট্টিতে।
বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি হারুন ভান্ডারী বলেন, রসুলপুরচরে নিদারুণ কষ্টে আছে হতদরিদ্ররা। নগরীর ১০নং ওয়ার্ডের কেডিসি কলোনির (বস্তি) অবস্থাও একই রকম।
উন্নয়নকর্মী কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, নগরীর কলোনিগুলো মূলত ভূমি দখলদারদের কবজায়। তাই সেখানে স্থায়ী বসতি গড়ে উঠছে না। তার ওপর রাস্তা নেই, বিদ্যুৎ নেই, সুপেয় পানির সংকট। পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাও তেমন স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
এ ব্যাপারে বিসিসির ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কেফায়াত হোসেন রনি বলেন, কীর্তনখোলায় জেগে ওঠা চরের খাসজমিতে পলাশপুর গড়ে উঠেছে। জমির মালিকানা না থাকায় অনুমোদন ছাড়াই যে যার মতো ঘর তুলে বাস করছে। ফলে পরিকল্পিত উন্নয়ন করা যাচ্ছে না। জলাবদ্ধতাও নিরসন হচ্ছে না।
বিসিসির সমাজ ও উদ্বাস্তু উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. রাসেল খান বলেন, বিভিন্ন দেশী-বিদেশী সংস্থার মাধ্যমে করপোরেশনের আওতাধীন ২০টি কলোনির উন্নয়ন করা হয়। তবে বর্তমানে সিডিসি (কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট কমিটি) ও ইউএনডিপির প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে।
তিনি বলেন, কলোনিগুলোয় নাগরিক সুবিধা অনেকাংশে বেড়েছে। করপোরেশন রাস্তাঘাটের অনেকাংশে উন্নয়ন করেছে। সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। আর যেসব এলাকায় উন্নয়ন হয়নি, সেগুলো চিহ্নিত করে আগামীতে কাজ করা হবে।
Leave a Reply