বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪, ০১:৪৫ পূর্বাহ্ন
বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি॥ বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার সুগন্ধা নদীর ভাঙনে ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের ব্লক ও বেড়িবাঁধের প্রায় ১ হাজার ফুট অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
একইসঙ্গে দেবে গেছে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ক্ষুদ্রকাঠি-দোয়ারিকা গ্রামের সংযোগ সড়কের ৪০০ ফুটের বেশি অংশ।
ব্লকবাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় বরিশাল বিমানবন্দরের উত্তর প্রান্তে রানওয়ের বর্ধিতাংশের জমি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। বর্তমানে নদী থেকে এ জমির দূরত্ব মাত্র ৩০০ ফুটেরও কম।
ভাঙন কবলিত অসহায় গ্রামবাসী জানান, বন্যার পানি নামতে শুরু করলে সুগন্ধা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে গৃহহীন হয়ে পড়েছে ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের ২৩টি পরিবার। এর মধ্যে সোমবার রাতে গৃহহীন হয়েছেন ওই গ্রামের বাসিন্দা রাশেদ খান মেনন মডেল উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হাজী আলতাফ হোসেন আকন। তার বসতবাড়ির ৩২ শতাংশ জমি রাতারাতি নদীতে ভেঙে পড়ায় তিনি পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে প্রায় ২৭০ একর জমির ফসল।
আকস্মিক ভাঙনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লকবাঁধ ভেঙে ক্ষুদ্রকাঠি-দোয়ারিকা সড়কের ৪০০ ফুটের বেশি অংশ নদীবক্ষে হারিয়ে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দুই গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এতে প্রতিদিন সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দুই গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। বর্তমানে ভাঙনের মুখে রয়েছে ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের আরও প্রায় শতাধিক পরিবারসহ উত্তর ক্ষুদ্রকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আল-কারিম কেরাতুল কোরআন মাদ্রাসা, রাশেদ খান মেনন পাঠাগার, বকুলতলা বাজার, বকুলতলা ময়দান জামে মসজিদ, বেপারী বাড়ি জামে মসজিদ ও মুন্সিবাড়ি জামে মসজিদ।
ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের বকুলতলা জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন গাজী জানান, বর্তমানে বকুলতলা বাজার ও ময়দান জামে মসজিদসহ তীব্র ভাঙন ঝুঁকির মুখে রয়েছে সেখানের আরও ১৪টি স্থাপনা। কয়েক বছর আগে বিমানবন্দরের জমি রক্ষায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নদী তীরে ব্লকবাঁধ নির্মাণ করা হলেও ওই বাঁধের প্রায় ৮০ শতাংশই এখন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
ফলে ক্ষুদ্রকাঠি-দোয়ারিকা সড়কটিও দ্রুত ভেঙে গিয়ে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে হাজার কোটি টাকার বরিশাল বিমানবন্দর ও প্রস্তাবিত নতুন বিমানঘাঁটি।
এমন আশঙ্কার কথা স্বীকার করে বরিশাল বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক রথীন্দ্রনাথ চৌধুরী বলেন, ‘বিমানবন্দর রানওয়ের উত্তর প্রান্তের বর্ধিতাংশের সন্নিকটে সুগন্ধা নদীর অবস্থান। ভাঙন আগ্রাসী রূপ ধারণ করলে বরিশাল বিমানবন্দরের জন্য সেটা অবশ্যই বিপদের কারণ হবে।
তাছাড়া সম্প্রতি বরিশাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ এবং প্রস্তাবিত নতুন বিমানঘাঁটির জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। তাই নদী ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত সেখানে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আমীনুল ইসলাম ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের নদী ভাঙনে বিলীন হওয়া বসতবাড়ি এবং ভূমির তথ্যসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে ইউনিয়ন পরিষদ ও ভূমি অফিসকে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে এখনই জরুরি খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছি আমরা। পাশাপাশি স্থায়ী পুনর্বাসনের লক্ষ্যে যারা সম্পূর্ণ ভূমিহীন তাদের জন্য খাস জমি বরাদ্দ এবং যাদের কমপক্ষে আড়াই শতাংশ জমি আছে তাদের নতুন বসতঘর প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলাল বলেন, ভাঙন রোধে এখনই স্থায়ী সমাধান দরকার। আপাতত ভাঙন পয়েন্টে জিও ব্যাগ এবং ব্লক ফেলে আপদকালীন প্রতিরোধের পাশাপাশি চর কেটে পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে স্থায়ী নদী শাসন করতে হবে।
এ ব্যাপারে আমি নিজেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবো।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) মহাপরিচালক দেলওয়ার হোসেন বলেন, ‘কিছুদিন আগে বরিশাল সফরে গিয়ে আমি নিজেও বাবুগঞ্জের ছোট মীরগঞ্জ এলাকার নদী ভাঙন পরিদর্শন করেছি। আসলে জিও ব্যাগ কিংবা ব্লক দিয়ে নদী ভাঙন রোধের সাময়িক চেষ্টা করা হয়। তবে স্থায়ী প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে নদী শাসন ও গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করা।
এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী এবং নির্বাহী প্রকৌশলীকে সরজমিন পরিদর্শন করে সমন্বিত একটি রিপোর্ট দিতে বলেছি। ওই রিপোর্ট পেলে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে আলোচনা করে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।
Leave a Reply