মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৬ অপরাহ্ন
মু. আ. মোতালিব, তালতলী॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী আসনের উপজেলা তালতলীতে ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল শুধু নামেই আছে কিন্তু কাজে নেই। করোনার এই মুহূর্তেও উপজেলার আড়াই লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় নেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। নির্মাণাধীন ২০ শয্যা হাসপাতাল ভবনের দোতালার দুকক্ষে ভাঙ্গাচুরা ৫-৬টি বেড থাকলেও রোগী ভর্তির কোনো কার্যক্রম চলেনি এ হাসপাতালে।
নামধারী এ হাসপাতালে ইনডোর-তো চালু নেই বরং আউটডোর থাকলেও কোনো ওষুধ বরাদ্দ নেই। নেই ল্যাবরেটরি ও রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেই এ হাসপাতালে। নেই জরুরি কোনো রোগী উন্নত চিকিৎসায় প্রেরণের জন্য অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস।
শুক্রবার সারাদিন ও অন্যান্য দিনগুলোতে সকাল সাড়ে ৯টার আগে ও বেলা দেড়টার পরে বন্ধ থাকে হাসপাতালটি। হাসপাতালের এসব সমস্যা সমাধানের জন্য আড়াই লাখ মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাবে আগামী সোমবার। এখানে ৫ জন এমবিবিএসের পদ থাকলেও করোনার এই মুহূর্তে ডেপুটেশনে দিয়েছেন ৪ জন ডাক্তার তবে উপস্থিত থাকেন মাত্র ২ জন।
গত ৩১ মার্চ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বরগুনার সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সিভিল সার্জনের কাছে স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কথা বলেন। বিশেষ করে কয়েকবার (প্রধানমন্ত্রী) অ্যাম্বুলেন্সের কথা জিজ্ঞেস করলেও সিভিল সার্জন সব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে বলে জানান।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে সিভিল সার্জন বলেন, তার জেলায় কোনো সমস্যা সেই। এ সময় তালতলীর এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমস্যার কথা বলেননি তিনি। তালতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমস্যার কথা প্রধানমন্ত্রীর কাছে না বলায় এরপর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
বরগুনার সাবেক আমতলী উপজেলার বর্তমান তালতলী উপজেলা বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকেই ছিল আওয়ামী লীগ ঘেঁষা। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তালতলী-আমতলী আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি আমতলী উপজেলার দক্ষিণের ৩টি ইউনিয়নকে ৭টি ইউনিয়ন করে তালতলীকে উপজেলায় রূপান্তর করেন তিনি।
তালতলী উপজেলা হওয়ার সাড়ে ৮ বছর অতিবাহিত হলেও এ উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তালতলী উপজেলায় রূপান্তর হওয়ার পর প্রশাসনিক প্রায় সব অফিস-আদালত আসলেও নেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তালতলী হাসপাতালের নামে ওষুধ বরাদ্দ না থাকায় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বরাদ্দ ওষুধপত্র দিয়ে চালাচ্ছে তালতলী ২০ শয্যা হাসপাতাল।
উপজেলার সচেতন নাগরিক পরিষদের নেতা ইদ্রিসুর রহমান হৃদয় জানান, তালতলী হাসপাতালের নানাবিধ সমস্যা সমাধানের জন্য আগামী সোমবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষের মোবাইল থেকে একযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তালতলী হাসপাতালের কর্মরত ডাক্তার মো. ফাইজুর রহমান জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তো দূরের কথা তালতলী হাসপাতাল হিসেবেও ওষুধপত্র পাইনি। তালতলীতে পুরানো একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। সেখানের বরাদ্দ ওষুধ দিয়ে চালাচ্ছি তালতলী হাসপাতাল। এখানে জনবলসহ স্বাস্থ্য সেবার রয়েছে নানাবিধ সমস্যা।
তালতলী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রেজবী উল কবির জোমাদ্দার বলেন, দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এমপিকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তালতলীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দাবি জানাব।
Leave a Reply