সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে যে ২৮ দফা নতুন শান্তি পরিকল্পনা তৈরি করেছে, তার প্রতিটি পয়েন্টই এখন আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। পরিকল্পনাটি ফাঁস হওয়ার পর ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিশেষত দোনেৎস্ক, লুহানস্ক এবং ক্রিমিয়া বিষয়ে কঠোর প্রস্তাব কিয়েভের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফাঁস হওয়া খসড়া অনুযায়ী, যুদ্ধ থামাতে হলে ইউক্রেনকে প্রথমেই দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক থেকে সেনা প্রত্যাহার করে অঞ্চল দুটি রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এছাড়া বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনের অন্যান্য অঞ্চলগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে দুই দেশের কর্মকর্তারা আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো স্পষ্ট ঘোষণা করেছে—ক্রিমিয়া, লুহানস্ক এবং দোনেৎস্ককে তারা রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। অর্থাৎ ইউক্রেন যদি আপত্তি জানায়, তবুও এই অঞ্চলগুলোর ওপর দাবি করার অধিকার থাকবে না।
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী সংক্রান্ত শর্তও কঠিন। পরিকল্পনায় বলা হয়েছে—দেশটির সেনাবাহিনী ৬ লাখ সদস্যের বেশি হতে পারবে না এবং কখনই পরমাণু অস্ত্র তৈরির অনুমতি পাবে না। ন্যাটোর সদস্যপদও চিরতরে বন্ধ থাকবে, এমনকি ন্যাটো ইউক্রেনে ঘাঁটি স্থাপন করতে পারবে না। তবে ইইউ সদস্যপদ অর্জনের সুযোগ ইউক্রেনের থাকবে।
শান্তি প্রক্রিয়ায় সম্মত হলে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল হবে এবং পুতিনসহ রুশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করা হবে। একই সঙ্গে রাশিয়াকে ফের জি৭-এ অন্তর্ভুক্ত করার পথও তৈরি হবে।
অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে রাশিয়ার ফ্রিজড অর্থ থেকে ২ হাজার কোটি ডলার ইউক্রেনের অবকাঠামো ও শিল্পখাতে ব্যয় হবে। আর বাকি ৩০০ কোটি ডলার দিয়ে ‘ইউএস–রাশিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ভেহিকেল’ নামে নতুন গাড়ি উৎপাদন কারখানা গড়ে তোলা হবে।
সবচেয়ে বিতর্কিত অংশ হলো—জাপোরিজ্জিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা ইউক্রেনের একক হাতে থাকবে না; ৫০ শতাংশের মালিক হবে রাশিয়া। পাশাপাশি ইউক্রেনকে রুশ ভাষা, সাহিত্য, চলচ্চিত্র এবং সংস্কৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু করতে হবে এবং রুশ সংবাদমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রস্তাবটি রাশিয়ার জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত সুবিধাজনক হলেও ইউক্রেনের জন্য রাজনৈতিকভাবে কঠিন সিদ্ধান্তের পথ খুলে দিচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি
Leave a Reply