শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন
বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর নিহত হওয়ার ঘটনায় যখন সারাদেশে ছাত্রবিস্ফোরণ, আলোচনা আর সমালোচনার ঝড় বইছে তখন সেই ঘাতক বাসের (জাবালে নূর) চালকসহ গ্রেফতার পরিবহন শ্রমিকদের মুক্তির দাবিতে সড়কে নেমেছে পরিবহন শ্রমিকরা।
গত রবিবার ওই দুর্ঘটনার পর দিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভে যখন রাজধানী অচল প্রায়, পণ্য সরবরাহে ঘাটতিতে বেড়ে গেছে জিনিসপত্রের দাম, তখন আজ শুক্রবার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় গাবতলী, সদরঘাট পর্যন্ত চলা বেড়িবাঁধ সড়ক অবরোধ করে পরিবহন শ্রমিকরা।
এসময় রাস্তা বন্ধ করে শ্রমিকরা চাপা দেয়া বাসের চালকের মুক্তি এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভাঙচুর করা গাড়ির ক্ষতিপূরণের দাবিতে স্লোগান দিতেও দেখা গেছে তাদের। বাস, মিনি বাস, ট্রাক ও লেগুনা শ্রমিকরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়। অনির্দিষ্টকালের অবরোধের হুমকিও দিয়েছে তারা।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে গাবতলী থেকে সদরঘাট, মোহাম্মদপুর থেকে বেড়িবাঁধ হয়ে কেরানীগঞ্জমুখী সব রাস্তা বন্ধ করে দেয়।
রবিবার দুর্ঘটনার পরদিন যখন ছাত্ররা সড়ক অবরোধ শুরু করে, সেদিন দুর্ঘটনার জন্য দায়ী তিনটি বাসের চালক এবং দুইজন সহকারীকে ধরা হয়। ১ আগস্ট গ্রেফতার করা হয় চাপা দেয়া জাবালে নূর পরিবহনের মালিক শাহাদাৎ হোসেনকে। ছয়জনকেই রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। আর অন্যদিকে বারবার সবার কঠোর শাস্তির বিষয়ে আশ্বাস দিচ্ছে সরকার।
এর মধ্যে শুক্রবার আবার ঢাকার সঙ্গে দূরপাল্লার বাস যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। নগর পরিবহনও সকাল থেকে ছিল অস্বাভাবিক রকমের কম। পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে হারে তাদের বাস ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়েছে, তাতে তারা নিরাপদ বোধ করছেন না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাস চালাবেন তারা।
এর মধ্যেই আবার শুক্রবার রাজধানীর মগবাজারে বাস চাপায় এক মোটরসাইকেল চালকের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়েও যখন সড়কে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে তখন সন্ধ্যায় এক হাজারের বেশি পরিবহন শ্রমিক এই অবরোধ তৈরি করে।
এ ব্যাপারে পরিবহন শ্রমিক সুমন জানান, রাস্তায় চলতে গেলে এক্সিডেন্ট হইতে পারে। আমাদের ড্রাইভারে রিমান্ডে নিল ক্যান? তারে ছাড়তে হবে। ছাত্ররা যে রাস্তা বন্ধ কইরা রাখছে তাদের রাস্তা ছাড়তে হবে। নাইলে আমরাও রাস্তা বন্ধ কইরা রাখুম।
অবরোধকারীরা গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়িও বন্ধ করে দেয়।
এদিকে আন্দোলনকারীদের পক্ষে হিমু নামে একজন জানান, আমরা যে দাবি জানিয়েছি, আমাদের দাবি যদি মানা না হয়, আমরা রাস্তা ছাড়ব না। রাস্তায় এক্সিডেন্ট হয়। আইনের মাধ্যমে তার বিচার হবে। ছাত্ররা রাস্তা বন্ধ করে রাখবে কেন? জাবালে নূরের দুই ড্রাইভারকে ছাড়তে হবে এবং এই কয়দিন যে গাড়ি ভাঙা হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য আমরা সরকারকে অনুরোধ জানাই।
ছাত্রদের আন্দোলনের কারণে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন এই শ্রমিক। বলেন, ‘আমাদের পেটে লাথি মেরে লাভ কী? এখানে যারা আছে তারা সবাই শ্রমিক। আমিও শ্রমিক। আমরা গাড়ি চালিয়ে খাই। রাস্তা বন্ধ থাকলে আমরা কীভাবে চলব?
আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুক্রবার রাত ১০টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ থাকবে। দাবি আদায় না হলে শনিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সড়কে অবস্থান নেবেন তারা।
Leave a Reply