রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার:
ভোটের দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে ততোই বরিশালের ছয়টি আসনের প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি পাড়া মহল্লায় নির্বাচনী উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাপা, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। গানে গানে নির্বাচনী প্রচারে মুখর নির্বাচনী এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চল।
তবে পুরোটাই ব্যতিক্রম বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া), বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া), বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) ও বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসন। দলীয় কোন্দলের কারণে ওই চারটি আসনে প্রার্থীতা জটিলতায় বিএনপির নেতাকর্মী থেকে শুরু করে মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীরা নেই ভোটের মাঠে। এ কারণে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে এজেন্ট সংকটে পরতে হচ্ছে ওইসব আসনের ধানের শীষের প্রার্থীদের। তবে সমানতালে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা।
দলীয় সূত্রমতে, প্রার্থীতা নিয়ে বিভক্তি থাকায় মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী কিংবা তাদের সমর্থক নেতাকর্মীরা দলের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীর পক্ষে প্রচার প্রচারণা মাঠে না নামায় ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে এখনও উল্লেখযোগ্য কোন উঠান বৈঠক, গণসংযোগ কিংবা পোস্টারিং করতে পারেনি প্রার্থীরা।
বরিশাল-১ আসনের গৌরনদী উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিক চোকদার বলেন, বিগত ওয়ান ইলেভেন থেকে নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি (সোবাহান) সহ জেলা উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তাদের দুইজনকেই বাদ দিয়ে দলের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তৃণমূল থেকে ১৩বছর বিচ্ছিন্ন সাবেক সাংসদ ও সংস্কারপন্থি নেতা জহির উদ্দিন স্বপনকে। যেকারণে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা প্রার্থী হিসেবে জহির উদ্দিন স্বপনকে মেনে নিতে পারেননি। এমনকি তিনিও (স্বপন) পদ-পদবীতে থাকা কোন নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত করেননি।
ফলে তারা কেউ মাঠে নামেননি। এমনকি মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীদের সাথেও স্বপন যোগাযোগ না করায় তারা নির্বাচনী মাঠে না এসে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
বরিশাল-২ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এস সরিফুদ্দিন আহমেদ সান্টু অভিযোগ করেন, এ আসনের মনোনয়ন বঞ্চিত সংস্কারপন্থি নেতা শহিদুল হক জামাল ও তার সমর্থকদের সাথে তিনি একাধিকবার যোগাযোগ করা সত্বেও তারা তাকে কোনধরনের সহযোগীতা করছেন না। বরং তারা নির্বাচনী মাঠে তার বিরুদ্ধে কাজ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল-৩ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের পক্ষেও মাঠে নেই ওই আসনের বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত বেগম সেলিমা রহমান এবং মোশারফ হোসেন মঙ্গু ও তাদের সমর্থকরা। একইভাবে বরিশাল-৬ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক সাংসদ আবুল হোসেন খানের পক্ষে মাঠে নামেননি মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
এদিকে বরিশাল-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপনের অতীত আপত্তিকর কর্মকান্ডের ওপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ভোটের আগে বিএনপি ছেড়ে নৌকায় উঠেছেন প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে এ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর হাতে ফুলেল তোড়া দিয়ে বিএনপি ছেড়ে নৌকায় উঠেছেন পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী।
বিএনপি থেকে যোগদান করা নেতাকর্মীরা বলেন, আমরা সন্ত্রাস পছন্দ করি না কিন্তু আমাদের পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ খুনের অপবাদ শুনতে হয়। আমরা আর সন্ত্রাস চাই না। সন্ত্রাসী দলে থাকতেও চাই না। আমরা এলাকার উন্নয়ন চাই; আমরা মানুষের সেবা করতে চাই; সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। যা শুধু আওয়ামী লীগ সরকারই দেশকে এগিয়ে নিতে পারে; মানুষের উন্নয়ন করতে পারে বলে আমারা বিশ^াস করি। তাই আমরা বিএনপি ছেড়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে চাই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল-১ আসনের তৃণমূল পর্যায়ের বিএনপির অসংখ্য নেতৃবৃন্দরা বলেন, আমারও শেখ হাসিনার উন্নয়নের পক্ষে। তবে বিএনপির সাথে বেঈমানী করা জহির উদ্দিন স্বপনের আপত্তিকর অতীত কর্মকান্ডের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়ার জন্য আমরা অপেক্ষায় রয়েছি। তাই সরাসরি আওয়ামী লীগে যোগদান না করলেও আমরা জহির উদ্দিন স্বপনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছি।
Leave a Reply