রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৫১ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট ॥ ঢাকা ও নরসিংদী অঞ্চলে দুই দিনের ব্যবধানে চারটি ভূমিকম্পের ঘটনাকে বিশেষজ্ঞরা আগামী বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হিসেবে দেখছেন। একটির পর একটি কম্পনের ফলে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবারের ৫ দশমিক ৭ মাত্রার কম্পনকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বলে উল্লেখ করেছেন ভূমিকম্প গবেষকরা। এতে শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু এবং কয়েক শতাধিক মানুষের আহত হওয়ার ঘটনা দেশের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
এই ভূমিকম্পগুলোর উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী অঞ্চল বলে নিশ্চিত করেছেন বুয়েটের বিশেষজ্ঞ মেহেদি আহমেদ আনসারী। তিনি সতর্ক করে বলেন, “এগুলো বড় ভূমিকম্পের আগমনী সংকেত হতে পারে। আগামী এক সপ্তাহে প্রায় ২০টি ভূকম্পন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের ভূগর্ভে লুকিয়ে আছে আরও বড় বিপদ। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় একটি গোপন ‘মেগাথার্স্ট ফল্ট’ শনাক্ত করেছেন, যা ৯ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটাতে সক্ষম। এই ফল্টটি পললস্তরের নিচে বহু মাইল জুড়ে বিস্তৃত এবং দীর্ঘদিন ধরে প্লেটচাপ জমা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার জানান, “সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত প্লেট সংযোগস্থলে গত ৮০০ থেকে ১,০০০ বছরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শক্তি মুক্ত হয়নি। তাই এই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।”
টেকনাফ-মিয়ানমার ফল্ট লাইনে ১৭৬২ সালে ৮.৫ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ৩ মিটার উপরে উঠে এসেছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ফল্টেও নতুন করে শক্তি জমা হচ্ছে। আবার শক্তি মুক্ত হলে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশে তীব্র ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির বলেন, “বাংলাদেশ তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে। প্লেটগুলো ধীরে ধীরে খুলে যাচ্ছে, যা বড় কম্পনের সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।”
এদিকে ঘোড়াশালের একটি ফাটল থেকে মাটির নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আ স ম ওবায়দুল্লাহ বলেন, “এই নমুনা পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে ভূমিকম্পের গভীরতা ও প্রকৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের অপরিকল্পিত নগরায়ন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এবং মানুষের ঘনত্ব—সব মিলেই বড় দুর্যোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়েছে। তারা ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণ, জরুরি প্রশিক্ষণ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন।
Leave a Reply