রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২১ পূর্বাহ্ন
পিরোজপুর প্রতিনিধি: পিরোজপুর জেলায় তিনটি নির্বাচনী আসনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পিরোজপুর-১ সদর আসন। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ আসনে ব্যাপক গণসংযোগ চালাচ্ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য জোর লবিং চালাচ্ছেন। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকলেও বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতিতে তারা অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন। তারা এখন দাবি আদায়ে আন্দোলনে মাঠে রয়েছেন।
পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানী উপজেলার ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৯৫৭ জন ভোটার নিয়ে গঠিত (সংসদীয় আসন-১২৭) পিরোজপুর-১ আসন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৮০হাজার ২৫০জন ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭০৭ জন।
স্বাধীনতার পর জাতীয় নির্বাচনে আসনটিতে আওয়ামী লীগ জিতেছে পাঁচবার। আর এককভাবে বিএনপি জয় পেয়েছে এক বার, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে। ১৯৯৬ আর ২০০১ সালে দু’বার এমপি ছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধে আজীবন দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাবরণ অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। দুই বারের জামায়াতের এ আসনটি ভেঙে দখলে নেয় বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ। তবে দলের মধ্যে একাধীক মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় এখানে রাজনীতির হিসাব-নিকাশ কিছুটা গোলমেলে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলেই দলীয় মনোনয়ন নিয়ে তীব্র কোন্দল রয়েছে। বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন নিয়ে লড়াই করছেন। জামায়াতে ইসলামীর প্রয়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দুই ছেলেও প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম। আগামী নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের সম্ভাবনাময় প্রার্থী। গত নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষ ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর প্রয়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম বিন সাঈদী।
বর্তমানে তিনি নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালাচ্ছেন। সভা সমাবেশ ও সরকারি নানা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। তার অনুসারীদের দাবি আগামী নির্বাচনে তিনিই এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের আরও দাবিদার হচ্ছেন নেতা-কর্মীদের আস্থার ঠিকানা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম এ আউয়াল। আওয়ামী লীগের আগের দুই মেয়াদে নৌকা মার্কা থেকে তিনি এখান থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আগামী নির্বাচনে তিনিও প্রার্থী হচ্ছেন।
এ ছাড়া পিরোজপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় থাকা অপর প্রার্থী হলেন- হাবিবুর রহমান মালেক। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পিরোজপুর পৌরসভার চার বারের নির্বাচিত মেয়র। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই তার তৎপরতা বাড়ছে। এ আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইসহাক আলী খান পান্না। তবে তিনি পিরোজপুর-২ আসনেও প্রার্থী হওয়ার জন্য গণসংযোগসহ অন্যান্য তৎপরতা চালাচ্ছেন।
পিরোজপুরের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য প্রয়াত শেখ এ্যানি রহমানের ছেলে শেখ খালিদ অরিন্দম তান সাম্প্রতিক সময়ে সদর আসনের বিভিন্ন জায়গায় গণসংযোগ করছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ।
দলীয় সূত্র জানায়, বিরোধী দল বিএনপি থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলার সাবেক সভাপতি গাজী নুরুজ্জামান বাবুল। মাঠে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে গণসংযোগ করছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আলমগীর হোসেন এবং মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী এলিজা জামান। গত নির্বাচনে এ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন জামায়াত নেতা প্রয়াত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম বিন সাঈদী। তবে সাঈদীর জানাজায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রয়াতের অপর ছেলে মাসুদ বিন সাঈদীকে পিরোজপুর-১ আসনের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন।
একাধীক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, আগামী নির্বাচনে এ আসনে দলটির জয় নিশ্চিত। তবে দলীয়ভাবে কাকে বেছে নেওয়া হবে, তা নিয়ে তাঁরা এখনো ধোঁয়াশায়। দলীয়ভাবে একজন মনোনয়ন পেলে আরেকজন যদি বিদ্রোহী প্রার্থী হন তাহলে বিপদে পড়তে হবে তাঁদের। সে ক্ষেত্রে দুই ভাগ হয়ে যাবে আওয়ামী লীগ। হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তবে প্রধান দুই নেতার কথায় এমন কোনো আভাস মিলছে না।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম এ আউয়াল বলেন, আমি আন্দোলন সংগ্রামসহ সারা বছর নেতাকর্মীদের পাশে থাকি। আমি এ আসন থেকে আগেও দুইবার নির্বাচিত হয়েছি। এবারও নির্বাচন করতে চাই। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই মনোনয়ন দিবেন। আমার বিশ্বাস, নেত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। ভালো প্রার্থী দরকার, যাঁর কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। কর্মীদের বিপদ-আপদে যে পাশে থাকেন, এমন প্রার্থী দরকার। মনোনয়ন পেলে নৌকাকে বিজয়ী করতে পারব বলে আশা করছি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম বলেন, আমি এ আসনে সংসদ সদস্য হওয়ার পর যত উন্নয়ন প্রকল্প এনেছি, গত চল্লিশ বছরেও কেউ আনতে পারেনি। তাই আমি আশাবাদী, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দিলে এ আসনটিতে বিজয়ী হব।
Leave a Reply