বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৫৫ অপরাহ্ন
গৌরনদী প্রতিনিধি॥ ঢাকাণ্ডবরিশাল মহাসড়কের পাশে গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৫টি দোকান সম্পূর্ণ ও ১৫টি দোকান আংশিক ভস্মিভূত হয়ে প্রায় দুই কোটি টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ৪০ জন ব্যবসায়ী এখন পথে বসেছে। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা পোড়াবর্জ অপসারন করে পূর্ণরায় দোকান ঘর তুলতে গেলে মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের ঘর তুলতে বাঁধা প্রদান করেছেন।
কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের জানিয়েছেন, নতুন করে কেউ ঘর তুললে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘোষণার পর ফের হতাশ হয়ে পরেছেন ক্ষতিগ্রস্থ ৪০জন ব্যবসায়ী। মানবিক কারণে তারা পূর্ণরায় ঘর তুলে ব্যবসা করার অনুমতি দেয়ার জন্য প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবী করেছেন।
বুধবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা জানান, অগ্নিকাণ্ডে তারা সর্বশান্ত হয়ে গেছেন। তাই নতুন করে বাঁচার জন্য পোড়াবর্জ অপসারন করে টিন কাঠের ঘর তুলতে গেলে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘর তুলতে বাঁধা প্রদান করেন। যদি কেউ নির্দেশ অমান্য করে ঘর তুলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনেরও হুমকি দেয়া হয়। বাজারের পাইকারী যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী স্বাধীন খান (৪৫) বলেন, আগুন আমার সব কাইড়া নিছে। চোখের সামনে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আজ আমি নিঃস্ব। ঘুরে দাঁড়াতে নতুন করে ব্যবসা শুরু করার জন্য ঘর তুলতে গেলে প্রশাসন ঘর তুলতে দেয়নি।
আব্দুর রাজ্জাক (৬০) বলেন, প্রায় ৪৫ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে পরে বেঁচে আছি। আগুনে সবশেষ হয়ে গছে। নতুন করে ঘর তুলতে গেলে কর্মকর্তারা জানান, কেউ ঘর তুলতে পারবে না। এখন কি কইররা বাঁচমু। স্থানীয় প্রশাসন আমাদের সহায়তা না দিয়ে উল্টো ঘর তুলতে বাঁধা দিচ্ছে। ব্যবসায়ী সহিদুল ইসলাম খান (২৪) বলেন, আমার বাবা ও ভাই ৫০ থেকে ৬০ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করেছে। বর্তমানে আমিও প্রায় ২০ বছর ধরে ব্যবসা করছি। গত সোমবার মধ্যরাতের আগুনে আমার সবশেষ হয়ে গেছে। নতুন করে ঘর তোলার কাজ শুরু করলে মঙ্গলবার রাতে উপজেলা সহকারী কমিশনারসহ প্রশাসন কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। একইভাবে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী উত্তম দাসসহ অনেকেই। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা ঘর তোলার অনুমতি দেয়ার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগুন লাগার সাথে সাথে দমকল কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও পাম্প বিকল হওয়ার অজুহাতে দুইঘন্টায়ও আগুন নেভানোর কাজ করতে পারেনি। দুই ঘন্টার আগুনে সব পুড়ে গেছে। পরে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বরিশাল, উজিরপুর ও বাবুগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন। ততক্ষনে ৪০ জন ব্যবসায়ীর সবশেষ হয়ে গেছে।
সূত্রমতে, সোমবার ভোর রাতে ঢাকাণ্ডবরিশাল মহাসড়কের পাশে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে মেসার্স সোহেল টেডার্স, শহিদুল ষ্টোর, সরদার ইলেকট্রিক, স্বাধীন ষ্টোর, হাবিব ষ্টোর, জাহিদ ষ্টোর, জালাল ষ্টোর, আরিফ ষ্টোর, সারদিয়া টেলিকম, কমলেশ স্টুডিও, জয়গুরু মিস্টান্ন ভান্ডার, জাকির ডিজিটাল প্রেসের শো-রুম, ফিরোজ মেকার, মনো হেয়ার কার্টিং, বি আলম ষ্টোর, নান্নু হোটেল, গৌরনদী অটোটেম্পু-মাহিন্দ্রা শ্রমিক কার্যালয়, নিজামের চায়ের দোকানসহ ২৫টি দোকান সম্পূর্ণ ও ১৫টি দোকান আংশিক ভস্মিভূত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, গৌরনদী ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের গাফিলতির কারণে ৪০টি দোকান ভস্মিভূত হয়েছে।
অভিযোগের ব্যাপারে গৌরনদী ফায়ার ষ্টেশনের ইনচার্জ আবদুস ছালাম বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে আমরা তিন মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি কিন্তু সাধারণ মানুষের বিশৃঙ্খলার কারণে পাম্প বিকল হয়ে পরলে আগুন ছড়িয়ে পরে। পরে উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, বরিশাল কর্মীদের সহায়তায় আমরা আগুন নিয়ন্ত্রনে আনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারিহা তানজিন বলেন, গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থ ৪০টি দোকান ছিলো বরিশাল জেলা পরিষদের সরকারী জমিতে। তাই জেলা পরিষদের নির্দেশে জমিতে ঘর তুলতে নিষেধ করা হয়েছে এবং ঘর তুলতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষর নির্দেশ ছাড়া কাউকে ঘর তুলতে দেয়া হবেনা বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
Leave a Reply