শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার:
প্রতিবছর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মৃত্যু থেকে শুরু করে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন বরিশাল অঞ্চলের একাধিক নেতা-কর্মিরা। এর থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা ক্ষমতাসীন দল কিংবা বিরোধী দলের কেউই। সম্প্রতি একের পর এক ঘটে যাওয়া ঘটনা এমনটাই জানান দিচ্ছে নগরবাসীর কাছে। চলতি মাসের ৭ তারিখ বুধবার, নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ২২২ বোতল ফেন্সিডিলসহ মুশফিকুল হাসান মাসুম (৩৮) এবং সবুজ ইসলাম শাহিন (৪০) নামে দুই মাদক বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করেন নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। আর সেই মাদক মামলায় আসামী করা হয় বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক বাংলাদেশ বাণী পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক এবং সরকারী বিএম কলেজ এর ভিপি মঈন তুষারকে। তুষারের দাবী তার বিরুদ্ধে মাদক মামলাটি সম্পূর্ন প্রতিহিংসা স্বরুপ করা হয়েছে। মঈন তুষার জানান, তার সম্পাদনায় প্রকাশিত পত্রিকায় প্রথম থেকেই অবৈধ মাদক ও অবৈধ অস্ত্রব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সংবাদ প্রকাশ করে আসছে। নিজ দলের কতিপয় নেতা-কর্মী ও অবৈধ মাদক এবং অস্ত্রব্যবসায়ীদের সাথে জড়িত প্রশাসনের একাংশের কিছু অসাধু ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার তার বিরুদ্ধে নগর গোয়েন্দা ডিবি পুলিশ একটি মাদক মামলায় তাকে সম্পূর্ন অন্যায়ভাবে আসামী করেন। তিনি আরো বলেন, মাদক কিংবা কোন অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। কেউ যদি প্রমান দিতে পারেন মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত তাহলে তিনি সর্বোচ্চ শাস্তি মাথা পেতে নিবেন এমন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন মঈন তুষার। মঈন তুষারের ভাষ্যমতে, একাধিক অবৈধ মাদক ও অস্ত্রব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ অন্যদিকে নিজ দলীয় রাজনৈতিক কোন্দলের কারনেই তার বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মঈন তুষার বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বরিশাল সিটি করর্পোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়ত শওকত হোসেন হিরনের অনুসারী ছিলেন যা বর্তমান ক্ষমতাসীন দল এর অর্থাৎ বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের একটি অংশের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সাথে র্দীঘদিন যাবত রাজনৈতিক ঝামেলা হয়ে আসছে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্তাবাবুরা। সেহেতু মঈন তুষার প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরন অনুসারী সেহেতু প্রতিপক্ষ বলয় এক হাত দেখে নিতে চায়। তাদের মতে, হিরন অনুসারীরা রাজনৈতিকভাবে নাজুক অবস্থানে আছে। মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি জসিমউদ্দিন, সম্পাদক অসীম দেওয়ান ইতিপূর্বে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সশস্ত্র হয়রানীর শিকার হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকাস্থ পান্থপথে অসীম দেওয়ানের চোখ উপরে ফেলার চেষ্টা করা হয়। সিএনজি চালকরা সন্ত্রাসীদের আক্রমন থেকে তাকে উদ্ধার করে মেডিকেলে ভর্তি করান। এখন প্রতিপক্ষের লক্ষ্য মঈন তুষার। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, হিরন অনুসারী কথাটার মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। হিরন অনুসারীরা দুই শ্রেনীতে বিভক্ত। তার সামাজিক- অর্থনৈতিক ছোটবড় সাথী ও সহযোগীরা এবং রাজনৈতিক অনুসারীরা। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান, হিরনের রাজনৈতিক অনুসারীদের একটা অংশ প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে দুরে থেকে রাজনীতির গতিধারাকে পর্যবেক্ষন করছে। রাজনীতির থেকেও তারা চলমান সময়ে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছে। শহরবাসীর এক অংশ মনে করে নগর আওয়ামী রাজনীতির মুল গতিধারা সাদিক আবদুল্লাহর নেতৃত্বে থাকলেও হিরন অনুসারীরা আওয়ামী রাজনীতির জন্য রাজপথে থেকে অনেক আন্দোলন- সংগ্রাম করেছে, জেল খেটেছে, পুলিশী হয়রানীর শিকার হয়েছে। ওয়ান ইলেভেনে জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির দাবীতে শহরে প্রথম সংগ্রামী মিছিল বের হয় বিএম কলেজ থেকে যার নেতৃত্বে ছিলো মঈন তুষার। বিভিন্ন সময়ে এমন সংগ্রামী আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে যেয়ে প্রতিপক্ষের একাধিক হামলার শিকার হয়েছে, মূমূর্ষ অবস্থায় মেডিকল হাসপাতালে মৃত্যূর সাথে পাঞ্জা লড়তে হয়েছে। বরং সাদিক আবদুল্লাহ্’র সাথে থাকা অনেকেই আওয়ামী রাজনীতির তকমাধারী, বক্তৃতা, বিবৃতি, ড্রইংরুম সর্বস্ব। বিশেষতঃ বিগত দশকে আওয়ামী রাজনীতির সবচেয়ে দুঃসময়গুলোতে বরিশালে স্রেফ হিরন অনুসারীরাই অন্যতমভাবে রাজপথে ছিলো। এসব যদি প্রতিপক্ষের গাত্রদাহের কারন হয় তবে হিরন অনুসারীগণ যে কোনো ভাবেই নিরাপদ নয় সেটা সহজেই অনুমেয়। সরকারী বিএম কলেজের ভিপি মঈন তুষার, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক অসিম দেওয়ান সহ একাধিক নেতা-কর্মীদেরকে প্রতিনিয়ত একের পর এক আর কত হামলা-মামলার শিকার হতে হবে নিজ দলের লোকজনের দ্বারা। যারা সাচ্চা আওয়ামী লীগার তারা কখনোই এমন ন্যাক্কারজনক কাপুরোষচিত কাজ করবেনা, লীগের নামে যারা তা করে তারা আসলে ঠিকাদার লীগ, হোন্ডা লীগ, গাড়ি লীগ বলে সচেতন নগরবাসীদের অভিমত। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি ও প্রশাসনের লোকজন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের দূর্নাম করে, এর দ্বারা নিজেদের ফায়দা লুটে নেয়া ছাড়া কিছুই করবেন না বলে অভিমত সচেতন ব্যক্তিদের। সচেতন মহলের দাবী, মঈন তুষারের বিরুদ্ধে করা মাদক মামলা সরকারের উর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তা দিয়ে বিষয়টি সঠিক ভাবে তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে মামলার পিছনের আসল রহস্য।
Leave a Reply