শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন
শাকিব বিপ্লব ॥এইচ এম হেলাল :
শরীরে আমার আওয়ামী লীগের রক্ত বয়। কিন্তু রাজনীতি আমার ধাতব্যে নেই। ভন্ডামী আর নোংরামির কারণে রাজনীতির পথে না হেটে বাংলা চর্চার মাধ্যমে সংবাদপত্র জগতে আবার প্রবেশ। নচেৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় রাজনীতির যে মঞ্চ পেয়েছিলাম সেখান থেকে হয়তো পাল্টে যেতে পারতো ভূত-ভবিষ্যত, হয়ে যেতাম রাজনীতিক। রাজনীতি না করলেও একটি ধারণা বহু আগে থেকেই রপ্ত করেছি। বিএনপি বা অপরাপর দলগুলো সমালোচনা অনেকটা সহ্য করতে পারলেও আওয়ামী লীগ কখনই নেতিবাচক কথা মানতে নারাজ। পক্ষে সাফাই না গাইলেই গোশ্যা করে। তার উদাহরণ পেলাম ঈদের গভীর রাতে। শ্রমিকলীগ নামধারী এক ক্যাডার ফেসবুকে স্ট্যাটাসে আমাকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করে মন্তব্য এবং সাংবাদিক জগৎ থেকে নকআউট করে দেওয়ার একটি ক্ষুদে বার্তা দেয়। বিস্মিত হলাম, এখনই শুরু হয়ে গেছে হুমকি-ধামকি?
যতটুকু চিনি-জানি, অন্তত সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ সহনশীল ব্যক্তি ও ক্যাডার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। এখন দেখছি তার চেলা-চামুন্ডারা অন্যায়ের পথে হাটার পাশাপাশি পেশিশক্তি প্রয়োগের উকি-ঝুকি মারার চেষ্টা করছে। এর কারণ সাম্প্রতিক বেশ কিছু অনিয়ম নিয়ে লেখালেখি করায় তারা বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারছে না। অথবা নেতার নাম ব্যবহার করে ফায়দা লোটার কাহিনী ফাঁস হয়ে যাওয়ায় কালিবাড়ি সড়কে যাওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এমন শংকায় হয়তোবা এই অগ্নিরূপ। কোরবানীর গরুর হাটের ইজারার টাকা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা ভাগাভাগি করে নেওয়ার মাঝে কেউ কেউ বঞ্চিতও হয়েছেন। এ নিয়ে দলের মধ্যে ঈদের রাতে অসন্তোষের খবর পাওয়ার পর লিখেছিলাম “মেয়র সাদিক কি রাতের খবর জানেন?” শিরোনামে একটি লেখা। অনেকটা মন্তব্য প্রতিবেদনের ন্যায় এই লেখায় তুলে ধরেছিলাম নয়া মেয়র দাপ্তরিক দলীয়করণ বা অনিয়ম সহ্য করবেন না বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা ভঙ্গ করে দলীয় নেতা-কর্মীদের হাট ইজারা পাইয়ে দেন। উত্তোলিত কয়েক লক্ষ টাকা ভাগাভাগি করা নিয়ে দলীয় অসন্তোষের চাপা কাহিনীতে তুলে ধরি বঞ্চনার নানা কথা।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মাসুদ সিকদার ওরফে বিট মাসুদ সাংবাদিক দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে ফেসবুকে সতর্ক বার্তা জানান। তার দাবি, হাট নিয়ে নবনির্বাচিত মেয়র কোন ভূমিকাই রাখেননি। আর হাট ইজারার টাকা ভাগাভাগির বিষয়টি অমূলক। হাস্যকর এই দাবি কি করে মানি। কে না জানে হাট ইজারায় এবার সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীরাই দায়িত্ব পেয়েছেন। স্বয়ং হাট ইজারার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তা স্বীকারও করেন। আসলে বিট মাসুদও এর সত্যতা জানেন। কিন্তু নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর কাছাকাছি যেতে অতিউৎসাহী হয়েই তিনি এই হুমকি-ধামকির পথে হাটলেন বলে মনে হচ্ছে। যদি সাংবাদিক কাবু করে নেতাকে খুশি করা যায় তাহলে হয়তো সংগঠনে মূল্যায়িত হবে অন্তত এই যুবক কিছু ক্ষমতা রাখেন এই আশ্বাসে। বিট মাসুদ কি ক্ষমতা রাখেন তা নবনির্বাচিত মেয়র ওয়াকিবহাল কিনা সে বিষয়ে আমার নিজস্ব কোন ধ্যান-ধারণা না থাকলেও যতদূর খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছি আসলেই সে ভয়ংকর। নিজের রূপ চাপা রেখে নগরীতে চলাচল করছেন। বেশির ভাগ সময় থাকেন কালিবাড়ির মেয়র সাহেবের বাড়িতে। কে এই মাসুদ? তার পরিচয় জানতে প্রথম ধাপে তথ্য পেলাম গত ৯৬’ এর ক্ষমতার আমলে বরিশাল কমার্শিয়াল কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকা অবস্থায় তিনি কম উৎপাত করেননি। বাকেরগঞ্জ থেকে এসে কখনো সাগরদীর বাশার বাহিনী আবার কখনো কুতুব রানার ক্যাডার হয়ে বেশ অপকর্ম করায় বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বরিশাল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। এরপর ঢাকায় অবস্থানকালে একটি হত্যাকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েন। যদিও এই বিষয়ে স্ববিস্তর তথ্য হাতে আসেনি। কিন্তু সে যে জড়িত তা অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় সে বরিশাল ফিরে আসেন। প্রয়াত নেতা শওকত হোসেন হিরন মেয়র থাকা অবস্থায় রাজনীতিতে চুপচাপ থাকার পর সাদিক আবদুল্লাহর উত্থানের পরই সেও নতুন করে আত্মপ্রকাশ করেন। তবে রাজনীতিতে নয়। চতুর এই যুবক অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হয়ে শুরু করেন চাঁদাবাজি। তথ্য মতে, সেক্ষেত্রেও তিনি সাদিক আবদুল্লাহ ও প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে অটোপ্রতি মাসিক এক হাজার টাকা করে উত্তোলন করে বিট মাসুদ হিসেবে পরিচিত পায়। অটোরিক্সায় চাঁদাবাজি বন্ধে সাদিক আবদুল্লাহ উদ্যোগী হলে কৌশলী এই যুবক ফাঁসিয়ে দেন তার সহকর্মী পলাশপুরের আব্দুর রব নামক এক ব্যক্তিকে। রব ও মাসুদ দু’জনেই ছিলেন এই চাঁদাবাজির হোতা। সাদিক আবদুল্লাহর রাজনীতির সাথে যুক্ত হওয়ায় সে সময় সতর্ক স্বরূপ ক্ষমা পান। অন্যদিকে রবকে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। মাসুদ অটোরিক্সায় চঁাঁদাবাজি করে অল্পদিনেই বেশ অর্থ গচ্ছিত করে ফেলেন। সেই অর্থে বাকেরগঞ্জের কলসকাঠীতে একটি ইটের ভাটায় অংশীদারিত্ব নেন। বরিশালের সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুজ্জামান বৈধতার প্রশ্নে সেই মডার্ন ব্রিকস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ধুরন্দর কাকে বলে? মাসুদ ঠিকই আবার সব ম্যানেজ করে নেন। ভাটাটি নিরাপদে চালু রাখতে নতুন অংশীদার হিসেবে যুক্ত করেন বাকেরগঞ্জের পৌর মেয়র লোকমান ডাকুয়াকে। জানা গেছে, ভাটাটি এখনও অবৈধ। ব্যবহার করছে নিষিদ্ধ চিমনি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সেলফোনে এই যুবকের সাথে যোগাযোগ করা হলে বেশ কৌশলী ভাষায় অনেক প্রশ্নের উত্তর দেন। কিন্তু যেসব প্রশ্ন করা হয়েছিল তার সাথে নিজের সংশ্লিষ্টতা যে রয়েছে কথপোকথনে তা সহজেই অনুমেয়। তিনি জানালেন, বিএনপি-জামাতের কারণে ২০০১ সাল থেকে ৭ বছর বরিশাল থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছিল। আর ইটের ভাটার ব্যবসার অর্থের যোগান কোত্থেকে এলো? সে প্রশ্নে যখন অটোরিক্সার চঁাঁদাবাজির কথা তোলা হল তখন এলোমেলো হয়ে বললেন, কি যে বলেন ভাই। টাকাতো পারিবারিক। আবার বৈধতার প্রশ্নে বন্ধ ইটের ভাটা কিভাবে চালু হলো তার সরল উত্তর ছিল- ভাই ম্যানেজ করেই কাগজপত্র বৈধতায় রূপ দিয়েছি। কিন্তু ব্যবসার সাথে আমি এখন অতটা সক্রিয় নেই। থাকি সাদিক ভাইয়ের সাথে। ঢাকায় হত্যা মামলার আসামি হয়ে বরিশালে আসা এবং কিভাবে নেতার কাছে ভিড়লেন? তার উত্তর দিতে গিয়ে হত্যা মামলা শুনে নিজেই যেন বিস্মিত হলেন। বললেন, সবই মিথ্যে। দীর্ঘদিন ধরে সেরনিয়াবাত পরিবারের রাজনীতি করায় প্রতিহিংসামূলক অনেকে অনেক কিছু বলে। আপনারাও এখন বলছেন? দাবি, সাংবাদিকদের সাথে তার অনেক নাকি সখ্যতা। সুযোগ পেলে আমাদের সাথেও চা খাবেন। কিন্তু নেতাকে নিয়ে এভাবে লেখা ঠিক না ভাই, এমন পরামর্শ দিয়ে হাস্যোজ্জল কন্ঠে জানালেন তিনি সাদিক ভাই ছাড়া কিছুই বোঝেন না। তাহলে কি নয়া মেয়র সংগঠন বা তাকে নিয়ে কোনো নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হলে সাংবাদিক ম্যানেজ বা সাইজ করার দায়িত্ব দিয়েছেন কিনা সে উত্তর মিলল না কোনভাবেই। বললেন, ভাই ফেসবুকে অনেক কিছুই মন্তব্য করি। মজা লাগে (!) আসলেই তার যে লাগে সেই নমুন কিছুদিন আগেও পেয়েছিলাম। বরিশাল থেকে প্রকাশিত প্রভাবশালী পত্রিকা দৈনিক আজকের বার্তার অন্যতম কর্নধর সাংবাদিক কাজী রাসেলকে ‘কাক রাসেল’ হিসেবে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে এই বিট মাসুদ কমেন্ট করেছিলেন। প্রসঙ্গক্রমে বললাম, আপনার গত রাতের কমেন্টসতো হুমকি স্বরূপ। নিশ্চুপ থাকলেন।
বলা বাহুল্য, ক্যাডার রাজনীতি কখনো ইতিবাচক নয়। উদাহরণ ৯৬’ এর সেই বরিশালের শাসনামল। যার জন্য খেসারত দিতে হয়েছে প্রবীন নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে। অনুমান করি, মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ এইসব চাই-চামুন্ডাদের এখনই সামাল দিবেন। যতটুকু দেখা গেছে, তিনি ক্যাডার রাজনীতি নয়, বরিশালকে ভিন্নতায় রূপ দিতে চাইছেন। সেক্ষেত্রে এই চাই-চামুন্ডাদের যদি এখনই সামাল দেওয়া না যায় তাহলে নগরবাসীর অনেক প্রত্যাশাই ফিকে হয়ে যাবে। তবে বলে রাখি, সাদিক সাহেবকে সমর্থন করি। কিন্তু কোন দলীয় অপকর্ম সম্পর্কিত খবর অন্য কেউ চেপে গেলেও অন্তত আমি ছাড় দেব না। তাতে যেখানেই পৌছাই আর রাত কাটাই। সুতরাং সাধু সাবধান।
Leave a Reply