শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:০৭ পূর্বাহ্ন
মুলাদী প্রতিনিধি : বরিশালের মুলাদী উপজেলার প্যাদারহাট ওয়াহেদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী রূপা। বয়স পেরুতে না পেরুতেই ‘ভালো’ পাত্র পেয়ে বিয়ের আয়োজন করে অভিভাবক ও আত্মীয়-স্বজনরা।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মুলাদী থানা পুলিশ রূপার বাড়িতে পৌঁছলে বর-কনে, বরযাত্রী ও বিয়ের আয়োজকরা পালিয়ে যায়। ভেঙে যায় রূপার বিয়ে। কিন্তু রূপার মতো সবাই বাল্য বিয়ে থেকে রক্ষা পাচ্ছে না।
অভিভাবকরা অতি গোপনে বিয়ে সম্পন্ন করায় অধিকাংশ বাল্য বিয়েই প্রশাসনের নজরে পড়ছে না। মুলাদী উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে বাল্য বিয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রশাসন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। কীভাবে বাল্য বিয়ে বন্ধ করবে এ নিয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হিমশিম খাচ্ছেন।
বাল্য বিয়ের কুফল সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের সচেতন করলেও কোনো কাজে আসছে না। যে যেভাবে পারছে যতদ্রুত সম্ভব নিজেদের কন্যা তথাকথিত আপদ! বিদায় করছে।
উপজেলার অনেক অভিভাবক কোর্টে গিয়ে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করছেন। উপজেলার নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজীগণ বাল্য বিয়ে নিবন্ধন না করতে চাইলে নিবন্ধন ছাড়াই চলছে বিয়ে। আকদ অনুষ্ঠান খাওয়া-দাওয়া সম্পন্ন করে বিয়ের কাজ সেরে রাখা হচ্ছে, মেয়ের বয়স ১৮ হলেই বিয়ের নিবন্ধন করা হবে। ভুয়া জন্ম নিবন্ধন দেখিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি করার নজির রয়েছে অনেক। অভিভাবকদের এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে। বিয়ে রেজিস্ট্রি না হওয়ায় মাঝপথে দাম্পত্য কলহ দেখা দিলে আইনী সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক পরিবার।
যৌতুক কিংবা নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও বিবাহ নিবন্ধন না থাকায় আদালতে যেতে পারছেন না এসব পরিবার। বিশেষ করে গরিব ও নিম্ন শ্রেণির লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সবচেয়ে বেশি। তারা আইনী লড়াই থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন আবার এলাকায় শালিস মিমাংশার নামে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
উপজেলায় বাল্য বিয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে চরাঞ্চলের এলাকাগুলো। ওইসব এলাকায় অশিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত লোকজনের মেয়ে বড় হলেই বিয়ের জন্য চিন্তায় পড়ে যান। ভালো পাত্রের খোঁজে নেমে পড়ের আত্মীয় স্বজন আর মোটামুটি টাকা পয়সা উপার্জন করে এ ধরনের পাত্র পেলেই কন্যা সম্প্রদানের কাজটি দ্রুত সেরে ফেলতে চান।
সফিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু মুছা হিমু মুন্সী জানান, বাল্য বিয়ের অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করি। কিন্তু স্থানীয় অভিভাবকরা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন করায় অনেক সময় বাল্য বিয়ের সংবাদ পাওয়া যায় না। বিয়ের দেড়-দু’মাস পরে সংবাদ পাওয়া যায়। তখন কিছুই করার থাকে না। বাল্য বিয়ে বন্ধের জন্য তৃণমূল পর্যায়ে সচেতনা বৃদ্ধির জন্য আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন হিমু মুন্সী।
মুলাদী থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউল আহসান জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাল্য বিয়ে বন্ধের জন্য কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু অভিভাবকরা গোপনে বিয়ের ব্যবস্থা করলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হয়ে উঠে না। প্রতিদিনই বাল্য বিয়ের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে ২/৩ মাস আগেই গোপনে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেছে কিংবা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাৎক্ষণিক পালিয়ে গিয়ে পরবর্তীতে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করছে। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তিনি অভিভাবক ও স্থানীয়দের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।
Leave a Reply