বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১৬ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শেখ হাসিনার জীবনযাত্রা যেন শেক্সপিয়রের ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি— রক্তাক্ত অতীত, নির্বাসন, ক্ষমতাসংগ্রাম আর এখন মৃত্যুদণ্ড। সম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার পর তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে ঢাকার সঙ্গে দিল্লির কূটনৈতিক উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রাত শেখ হাসিনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সামরিক অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্য নিহত হন। সে সময় বিদেশে থাকায় বেঁচে যান হাসিনা ও ছোট বোন রেহানা। এরপর তিনি ছয় বছর ভারতেই নির্বাসিত জীবন কাটান। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং রাজনৈতিক লড়াইয়ে তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন খালেদা জিয়া।
১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। এরপর ২০০৮ সালে ফের ক্ষমতায় এসে দৃঢ় প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ এবং বিরোধী দমননীতির অভিযোগে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচিত হন। তবু ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে তিনি পরবর্তী ১৫ বছর ক্ষমতা ধরে রাখেন। কিন্তু ২০২৪ সালে সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার নিয়ে শুরু হওয়া ছাত্র-জনতার আন্দোলন দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভে রূপ নেয়। দমন-পীড়নে বিপুল প্রাণহানি ঘটে, যার দায়ে আদালত পরে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
আদালত বলেছে, বিক্ষোভকারীদের হত্যা, গুলি চালানোর অনুমতি, ড্রোন হামলা, এবং হেলিকপ্টার ব্যবহারের নির্দেশ তিনি দিয়েছেন— এসব অভিযোগে তার দায় “স্পষ্ট।” রায় ঘোষণার পর আন্দোলনকারীদের পরিবাররা বলেছেন, “আংশিক স্বস্তি পেলাম, সম্পূর্ণ স্বস্তি পাব ফাঁসি কার্যকরের পর।”
এদিকে হাসিনা বর্তমানে ভারতে রয়েছেন এবং দেশটিতে নির্বাসনে থাকা এটি তার জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়। ভারত তাকে ফেরত পাঠাবে কি না, সেটিই এখন রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে। ভারতের সাবেক কূটনীতিক ত্রিগুনায়েত মনে করেন, ভারত তাকে ‘রাজনৈতিক অপরাধী’ বিবেচনা করে ফেরত নাও পাঠাতে পারে। এছাড়া হাসিনা এখনো সুপ্রিম কোর্টে আপিল এবং আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার সুযোগ রাখেন।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই নতুন করে চিঠি পাঠিয়ে ভারতের কাছে তাকে ফেরত দাবি করেছে। কিন্তু দিল্লি সময় নিতে চাইছে। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছে। নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব সংকটে; অন্যদিকে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনে নতুন সুযোগ দেখছে।
বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার পতন হয়তো এক অস্থির যুগের অবসান, আবার এটি নতুন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সূচনাও হতে পারে।
সূত্র: সিএনএন
Leave a Reply