মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০২৪, ১২:১৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ করোনা মহামারির ক্রান্তিলগ্নে বর্তমান সরকার দেশব্যাপী দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সামাজিক নিরাপত্তার অংশ হিসেবে ত্রান প্রদানসহ বিভিন্ন ভাতা বিতরনের পরিধি বর্ধিত করার পাশাপাশি সুষ্ঠ বিতরনের জন্য কঠোর নির্দেশনা জারি করেছেন।কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী।
ইতিমধ্যে ত্রান,ভাতা বিতরনে অনিয়মের অভিযোগে অনেক জনপ্রতিনিধি জেলে যাবার পাশাপাশি বহিস্কারও হয়েছেন। ঠিক এমনই সময় বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২৪ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর ও বিএনপি নেত্রী সেলিনা পারভিনের বিরুদ্ধে সরকারি আইন অমান্য করে জালিয়াতির মাধ্যমে নিজ দলীয় কর্মীদের মাঝে বয়স্ক ভাতা প্রদান এবং সেই টাকার ৫০ ভাগ আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
যদিও সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এটিকে জঘন্য অপরাধ হিসেবে গন্য করে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ২৪ নং ওয়ার্ডের ধান গবেষনা সড়কের বাসিন্দা আঃ খালেক মাতুইন এর পুত্র ও বিএনপি কর্মী মোঃ জাকির হোসেন মাতুইন এর ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী বর্তমান বয়স ৫৭ বছর(জন্ম-০২/০১/১৯৬২) কিন্তু সেই আইডি কার্ডে জালিয়াতি করে ৬৫ বছর (জন্ম-০২/০১/১৯৫৪) বয়স দেখিয়ে তুলে নিচ্ছেন বয়স্ক ভাতা।
যদিও অভিযোগ রয়েছে, সেই ভাতার টাকার ৫০ ভাগ অর্থাৎ অর্ধেক টাকা দিতে হচ্ছে কাউন্সিলর সেলিনা পারভিন ও তার সচিব নিজামকে।আক্কেল আলী সড়কের বাসিন্দা রিজিয়া বেগমের ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী বর্তমান বয়স ৫৭ বছর (০৬/০৭/১৯৬৩)।তাকেও আইডি কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে ৬৩ বছর (জন্ম-০৩/০৭/১৯৫৭) বয়স দেখিয়ে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।
তবে এ ক্ষেত্রেও ” অর্ধেক তোর,অর্ধেক মোর ” নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে।শুধু এরাই নয়,আরও অনেকের আইডি কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হচ্ছে দরিদ্র মানুষের হক।অপরদিকে কাউন্সিলর সেলিনার এই দলপ্রীতি এবং অর্থ আত্মসাতের কারনে সামান্য সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা।
সরকার দেশের বয়স্ক দরিদ্র মানুষের (পুরুষের -৬৫ বছর,নারী -৬২ বছর) সাহায্যার্থে বয়স্ক ভাতার কর্মসূচি হাতে নিলেও মুস্টিমেয় দুর্নীতিবাজ জন-প্রতিনিধির কারনে যোগ্যব্যাক্তিরা বঞ্চিত হচ্ছেন তার সুফল থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লালাদীঘি পাড়ের এক বাসিন্দা বলেন, আমার বয়স ৬৫ বছরের মাত্র ২ মাস কম।
অনেক অনুরোধ করেও আমি ভাতার কার্ড পাইনি।সেখানে আমার বয়সের থেকে ৫ /৭ বছর ছোট ব্যাক্তি কি করে ভাতার কার্ড পায় তা বুঝতে পারছি না।
এ নিয়ে আলাপকালে যুবলীগ কর্মী আমির হোসেন অভিযোগ করে বলেন,শুধু কাউন্সিল সেলিনা এবং তার সচিবই নয়,এই দুর্নীতির দায় সংশ্লিষ্ট সমাজ সেবা কর্মকর্তাও এড়াতে পারেন না।কারন নিয়ম অনুযায়ী ভাতা প্রাপ্ত ব্যাক্তির ভোটার কার্ড যাছাই+বাছাই করার দ্বায়িত্ব তাদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিসি’র ২৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হুদা বলেন, বিষয়টি আমারও কানে এসেছে।
আমি সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের কাছে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহনের দাবি জানাচ্ছি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিছুর রহমান শরিফকে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বরিশাল শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা জহির আহমেদ জানান, এই দুর্নীতি রোধ করতেই আগামী মাস থেকে ডিজিটালাইজড হচ্ছে ভাতা বিতরন কার্যক্রম। সেখানে প্রত্যেক ভাতা ভোগীদের স্ব-শরীরে হাজির হয়ে ভোটার আইডি কার্ড লিপিবদ্ধ করতে হবে।
আর যারা এই দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিল,তাদের ভাতা কার্ড বাতিলসহ আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
তবে তদন্তে প্রমানিত হলে দুর্নীতিতে যুক্ত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুশিয়ারি জানিয়ে বরিশাল জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে উপপরিচালক আল্ মামুন তালুকদার বলেন, যে কোন দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার অবস্থান জিরো টলারেন্স।
আমি উল্লেক্ষিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিল সেলিনা পারভিন বলেন, এগুলো মিথ্যা এবং আমার বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র।
Leave a Reply