বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের যেভাবে করোনার ছুটি কাটাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা Latest Update News of Bangladesh

মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০২৪, ০৬:৫৭ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের যেভাবে করোনার ছুটি কাটাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের যেভাবে করোনার ছুটি কাটাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী




ববি প্রতিনিধি॥ ক্যাম্পাস বন্ধ হলে খুশিতে আত্মহারা কে না হয়! তবে করোনা পরিস্থিতি এবারের বন্ধ যে একেবারেই আলাদা তা শুরুতে সবাই বুঝতে না পারলেও এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় হোম কোয়ারেন্টাইনে একরকম বন্দী সময় কাটাচ্ছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকালে ঘুম থেকে উঠে লাল বাসে বাদুড় ঝোলা ক্যাম্পাসে গিয়ে ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, ক্লাস টেস্ট, মিড টার্মের সেই প্যারাময় দিনগুলো থেকে রেহাই পেয়ে বাড়ি ফেরার সময় মনে মনে সবাই যেন বললো, যাক বাবা! একটু দম ফেলার ফুরসত পাওয়া গেল।

কিন্তু দিন যত যাচ্ছে দীর্ঘশ্বাসও তত বাড়ছে। নিঃশ্বাস ঘনীভূত হয়ে উঠেছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর শঙ্কায়। হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকেও সবার মন পড়ে আছে ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চ, টিএসসি, ভোলা রোড, খেলার মাঠ আর কবির মামার চায়ের দোকানে। কেউ কেউ প্রিয় মুখগুলো দেখতে না পাওয়ার কষ্টে বিরহ বেদনায় দিন কাটানোর কথা জানিয়েছে।

দুঃখ, ভালোবাসা, আর স্মৃতি বিজড়িত ক্যাম্পাস ছেড়ে কেমন কাটছে কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলো? আড্ডাবাজ কয়েকজন ববি শিক্ষার্থীর সেসব অনুভূতি জানাচ্ছেন শফিকুল ইসলাম।

মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের বাহাউদ্দিন আবির বলেন, ক্যাম্পাসে এখন করোনার ছুটি। চলে এসেছি গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে। গ্রামে আসার পর থেকে বন্ধুদের নিয়ে সচেতনতামূলক কাজ করছি। বাড়ি-বাড়ি কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার পাশাপাশি খেটে খাওয়া মানুষকে সাহায্য করতে প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করছি। এছাড়া সব দোকান রিকশা, সিএনজিচালককে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়েছি। বাজারে জীবানুনাশক ছিটিয়েছি। বন্ধুদের সহযোগিতায় ১০০’র মতো পরিবারকে খাবার পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছি। ফ্রি সময়গুলো অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স, ইউটিউবে মুভি দেখে, একাডেমিক আলোচনা করে কাটছে। গল্পের বই পড়ছি। পুরোনো বইগুলো ঘেটে দেখছি। মনে হয় যেন পুরোনো সময় ফিরে পাচ্ছি। যা মিস করি তা হচ্ছে বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের কাপে আড্ডা।

লোক প্রশাসনের আফরিন তারিন বলেন, আসলে প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা আর ভয়ে বন্দী সময় কাটাচ্ছি। সবকিছু এত অনিশ্চিত যে দমবন্ধ হয়ে আছে। রোজ সকালে ক্লাস, ডিপার্টমেন্টে কারণে অকারণে ঘোরাঘুরি, ক্লাস শেষে বিপুল মামা, কবীর মামার চায়ের দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, সন্ধ্যায় ভোলার রোড, ব্রিজের নিচে নাস্তা করা, বিকেলের লাস্ট বাসে শহরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া। এক কথায় সারাদিন মুক্ত পাখির মতো ঘুরে বেড়ানো আর দিন শেষে শেখ হাসিনা হলে ফিরে আসা। এভাবেই কাটতো ক্যাম্পাসে প্রতিটি দিন। আর এখন ক্যাম্পাসের প্রতিটি ধুলিকণা, মুক্তমঞ্চে বসে বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নেয়া এমনকি এক্সাম অ্যাসাইনমেন্টের প্রেসারও মিস করছি। তবে মানুষের অসহায়ত্ব দেখে হতাশ। সবার জীবনের অনিশ্চয়তার কথা ভেবে উপরওয়ালার কাছে একটি সুস্থ-সুন্দর বিশুদ্ধ বাতাসে ভরা পৃথিবীর প্রার্থনা করে সময় কাটছে।

আমি অবসর ভলোবাসি, তবে এই ভৌতিক অবসর আমার শান্তি কেড়ে নিয়েছে। সারাদিন বাসায় থাকা। যখন বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টাইনে চলে এলাম তখন একগাদা বই এনেছি। ভেবেছি পড়ে এবার দেবো শেষ করে। তবে তেমনটা হচ্ছে না। ব্যস্ততা না থাকলে অবসরের আনন্দ ফিঁকে হয়। আমি চাই আবার আমার জীবনে ব্যস্ততা নেমে আসুক। আবার ক্যাম্পাসে বসে পাঠচক্র করি। কবির ভাই, জামাই, হাসান মামার চায়ের দোকানে বসে চা খেতে খেতে শিশিরের সঙ্গে তর্ক বাধাই। ক্যাম্পাসের পেছন দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই অনেক দূর। আবার সিনেমার প্লট আঁকি- বলছিলেন বাংলা বিভাগের মুজাহিদ অভিমন্যু।

অর্থনীতি বিভাগের শাহরিয়ার মিলান বলেন, আমাদের যান্ত্রিক জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। রুমে বসে বসে আর ঝিমিয়ে সময় কাটছে। ক্যাম্পাসের নিয়মিত আড্ডা মিস করি। রাতের বঙ্গবন্ধু হলের ছাদে গিয়ে একা একা গান শোনা প্রায় রেগুলার রুটিন ছিল। ক্লাস থাকুক আর নাই থাকুক একটু ঢুঁ না মারতে পারলে মন ভালো থাকতো না। আর এসবই এখন প্রচণ্ড মিস করছি। সবচেয়ে বেশি মিস করছি প্রিয় একটা মুখ। রাতে ভোলার রোডে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চায়ের আড্ডা আবার দিতে চাই। এই অবস্থায় আর কিছুদিন থাকলে মানসিক রোগী হয়ে যাবো। ইউটিউবে গান, নাটক, মুভি দেখেই সময় পার করছি। রেগুলার অনলাইন আড্ডা দিচ্ছি। আর অফলাইনের সময়টা রান্না করেই চলে যায়। বাকি সময়টা নামাজ পড়া, বাসার ছাদে গিয়ে পায়চারি করে আর চায়ের সঙ্গে পার হয়ে যায়।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ইবনে সিনা সিফাত বলেন, কোয়ারেন্টাইনের এ সময় প্রয়োজন ছাড়া তেমন বাইরে যাওয়া হয় না। পরিবারের সবার সঙ্গেই সময় বেশি কাটানো হয়। তার বাইরে বই পড়ে সময় কাটাই। আর অল্প সল্প ঘরের কাজ করার মধ্যেই সময় চলে যায়। মাঝেমাঝে খবর পড়ি নতুন কোন দুঃসংবাদ এলো না তো! বাইরে বের হলে মাক্স হ্যান্ড গ্লাভস পড়ে বের হই। এ সময়টায় ক্যাম্পাসে ক্লাসের ফাঁকে সবাই মিলে আড্ডা দেয়া, মাঠে ক্রিকেট খেলা, মেসের খালার হাতের জঘন্য রান্না সব কিছুই মিস করি। আর সন্ধায় টিউশনিতে যাওয়াও। টিউশন না থাকলে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়া আর ক্যাম্পাসের তিন টাকার সিঙারা বেশি মিস করি। ছুটি থাকলেও এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি ছুটিতে আছি। সময় কাটছে অস্থিরতা আর সামনে কি অপেক্ষা করছে সেসব দুশ্চিন্তা করে করে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD