শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৬ অপরাহ্ন
রিপন হাওলাদার ॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল সদর আসনের নৌকা কান্ডারী হতে জোর লবিং চালিয়েছিলো একডর্জন নেতা। আর মনোনয়নের আশায় সদর উপজেলা তথা নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে আর্থিক অনুদানসহ নানা সমাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিলো। আবার কোন কোন নেতা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ উপ-কেন্দ্রীয় কমিটির পদপদবী পেয়ে মনোনয়ন লাভের আশায় দিনরাত কাজ করলেও এখন আর তাদের দেখা মিলছে না। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ গত ২৬ নভেম্বর প্রার্থীদের হাতে নির্বাচনের চিঠি তুলে দেয়ার পরেই বরিশাল-৫ আসনের এলাকায় ছড়িয়ে পরে নির্বাচনী ইমেজ।
গত কয়েক দিনের নির্বাচনের প্রচারনা বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল¬াহ ও বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের কিছু নেতা ছাড়া আর মনোনয়ন বঞ্চিত কোন প্রার্থীকে নৌকার প্রচারনা করতে দেখা যায় নি। তবে অনেকেই মনে করেন এরা নির্বাচন আসলেই বরিশালে উদায় হয় আবার মনোনয়ন না পেলে বা নির্বাচনে পরাজিত হলে তাদের খুজে পাওয়া কষ্টকর হয় তৃর্ণমূল নেতাকর্মীদের।
বর্তমান সাংসদ জেবুন্নেছা আফরোজকে তেমন একটা না দেখা গেলেও তার অনুসারীদের দেখা মিলেছে নৌকার প্রচারনায়। গত ২ বছর যাবৎ নির্বাচনী মাঠে কাজ করেছেন এস আর সমাজ কল্যান সংস্থার চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন রিপন। তবে মাঠে ছিলো অপর তরুণ নেতা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপ-কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফিন মোল্ল¬া। তবে বরিশাল সদর-৫ আসনের বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা মিলেছিলো সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টুর বিলবোর্ড আর ফেষ্টুন। তিনি নিজেও এমপি পদে মনোনয়ন পেতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামলেও প্রধানমন্ত্রী’র এক বক্তব্য শুনেই নিজের অবস্থান গুটিয়ে নিয়েছে । কিন্তু মাঠে তেমন কোন অবস্থান ছিলো না প্রবিণ আওয়ামীলীগ নেতা মাহাবুব উদ্দিন বীর বিক্রম।
এর পরেও তিনি ছিলেন মনোনয়নের আশায়। থেমে ছিলো না বর্তমান সাংসদ জেবুন্নেছা আফরোজ এমপির মনোনায়ন লবিং। আরেক বরিশালের আওয়ামীলীগ নেতা মশিউর রহমান খান মনোনয়ন দৌড়ে এগোতে না পারলেও মরনপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থতা নিয়ে ঘরে ওঠেন তিনি। বরিশাল নগরীতে হঠাৎ করেই আলোচনায় চলে আসছিলো নগর আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল। তিনি কোন সময় প্রার্থী হওয়ার কথা না শোনা গেলোও চলে আসেন আলোচনায়। কিন্তু এমপি হওয়ার আশায় মনোনয়ন কিনেছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম তোতা। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন সবাইকে মাঠে গিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য। বরিশালের কয়েকটি আসনের মনোনয়ন বঞ্চিত বেশ কয়েকজন নেতা নির্বাচনী মাঠে প্রচারনা করলেও বরিশাল সদর-৫ আসন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আওয়ামীলীগের অতিথি পাখিরা। এদের মধ্যে আবারো আলোচনায় রয়েছে সেই তরুন আওয়ামীলীগ নেতা আরিফিন মোল্লা।
তিনি তার অনুসারী নেতাকর্মীদের নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে তার অনুসারীরা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক আরিফিন অনুসারীরা জানান, ভাই মনোনয়ন চেয়েছিলো কিন্তু পায় নাই। তার পরেও তিনি আমাদের নৌকার পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছে তাই আমরা নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছি। তবে কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামীলীগ নেতারা। এদের তালিকায় সবচেয়ে বড় ধোকা দিয়েছেন এসআর সমাজ কল্যান সংস্থার সালাহ উদ্দিন রিপন। তিনি জনগনের মাঝে অর্থ বিতরন করে আলোচনায় আসলেও প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের হাইকমান্ডের নির্দেশ মানতে নারাজ। তিনি মনোনয়ন না পেয়ে বরিশালে তো আসেনি বরং তার অনুসারীদের মাঠেও দেখা যাচ্ছে না। সাইদুর রহমান রিন্টু দলের চাপে পড়ে নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিলেও তেমন সরব উপস্থিতি পাওয়া যায় না বলে জানালেন তৃর্ণমূল আওয়ামীলীগ নেতারা। মনোনয়নের চুড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়া মাহাবুব উদ্দিন বীরবিক্রম (এসপি মাহাবুব) আবারো লুকিয়েছে তার আস্তানায়। তিনি নৌকার পক্ষে কোন প্রচারনায় অংশ না নিয়েই আছেন। তিনিও দলের হাই কমান্ডের নিদের্শনা মানতে নারাজ। তবে বরিশাল সদর-৫ আসনের প্রার্থীর পক্ষে জোরালো প্রচারনায় অংশ নিচ্ছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। তিনি তার নেতাকর্মীদের নিয়ে দিনরাত নৌকার পক্ষে প্রচারনা চালাচ্ছে। বরিশালের রাজনৈতিক মহলের অভিমত এসব অতিথি পাথিদের মতো আসা নেতাদের যেন মাঠে কাজ করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
তারা শুধু নির্বাচন আসলেই অতিথি পাখির মতো ছুটে আসেন। আবার মনোনয়ন না পেলে তারা তাদের আস্তানায় চলে যায়। তারা আরো মনে করেন এসব দানবীর নামক সু-চতুর সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আওয়ামীলীগ। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের হাইকমান্ডের এক নেতা বলেন, আমরা নির্বাচনী সকল কর্মকান্ড পর্যেবেক্ষন করছি। তবে কোন মনোনয়ন বঞ্চিতরা যদি নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ না নেয় তাহলে কেন্দ্র থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান ওই নেতা। তবে বরিশালের উন্নয়নের স্বার্থে জনগন নৌকায় ভোট দিবেন বলে আশাপ্রকাশ করেছেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। তিনি আজকের তালাশকে দেয়া এক স্বাক্ষাৎকারে বলেন, দেশের মানুষ উন্নয়নে বিশ^াসী তাই তারা ঐক্যবদ্ধ ভাবে নৌকা প্রতিকে ভোট দিবেন। অতিথি নেতাদের বিষয় তিনি বলেন, যদি কোন মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীরা নৌকার প্রচারনায় অংশ না নেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে হাইকমান্ডের কাছে তিনি জানাবেন।
তবে মেয়র সেরনিয়াবত সাদিক আব্দুল্লাহ’র কথা সাথে একমত পোষন করে নৌকার প্রার্থী কর্ণেল(অব) জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, আমরা উন্নয়নে বিশ^াসী তাই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিবে এমনটাই আশাপ্রকাশ করেছেন এই প্রার্থী। এদিকে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য আরিফিন মোল্লা জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, আমি ২/১ দিনের মধ্যেই বরিশালে এসে নৌকার পক্ষে কাজ করবো। তিনি আরো বলেন, আমি বর্তমানে ঢাকায় নির্বাচনী কাজে আছি। আমি নৌকার পক্ষে নিরালসভাবে কাজ করবো তাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। তবে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে নারাজ মনোনয়ন বঞ্চিত এস আর সালাহ উদ্দিন রিপন। অনুসন্ধানীতে খুজে পাওয়া যায়নি সেই এসপি মাহাবুবকে।
মশিউর রহমান বলেন, দাদা আমি ঢাকায় আছি ব্যবসার কাজে ব্যস্ত পরে কথা হবে। তেমনি রূপচর্চা নিয়ে ব্যস্ত বর্তমান সাংসদ জেবুন্নেছা আফরোজ। তিনি তার বাস ভবনেই সময় পার করছেন। মাঠে নামছেন না এই সাংসদ।
Leave a Reply