দুর্বল বাঁধে জোয়ারের ছোবল,হু হু করে পানি প্রবেশ Latest Update News of Bangladesh

মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০২৪, ০৭:৫১ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




দুর্বল বাঁধে জোয়ারের ছোবল,হু হু করে পানি প্রবেশ

দুর্বল বাঁধে জোয়ারের ছোবল,হু হু করে পানি প্রবেশ

দুর্বল বাঁধে জোয়ারের ছোবল,হু হু করে পানি প্রবেশ




ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ তিন মাস আগে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তোড়ে সুন্দরবনসংলগ্ন জনপদের বিশাল এলাকার নদী-বাঁধ স্থানে স্থানে ভেঙে গিয়েছিল। ভাঙা বাঁধ হতে জোয়ারের পানি আটকাতে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে রিং (বেশ খানিকটা জায়গা নিয়ে আংটির মতো ঘুরিয়ে দেওয়া) বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। যা আবারওো নিম্নচাপজনিত জোয়ারের তোড়ে অনেক জায়গায় ভেঙে গিয়েছে।

 

 

 

কয়রা, শ্যামনগর ও আশাশুনির একাধিক জায়গায় বাঁধের ভাঙন স্থান দিয়ে হু হু করে পানি প্রবেশ করে আবারো এলাকা নিমজ্জিত হয়েছে। এলাকাবাসী আবারো রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করে চলেছে। কারণ স্থায়ী বাঁধ হতে এখনও অনেক দেরি। সকল প্রক্রিয়া শেষ করতে পারলে আসছে ডিসেম্বর মাস নাগাদ স্থায়ী বাঁধ তৈরির কার্যক্রম শুরু হতে পারে।

 

 

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তিন মাস আগে গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে খুলনা জেলার কয়রা উপজেলা এবং সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার একাধিক স্থানে নদী-বাঁধ (বেড়ি বাঁধ) ভেঙে যায়। ভাঙন স্থানগুলো আটকানোর জন্যে এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে রিং বাঁধ দিয়েছিল। তারপরও কয়রা সদর ইউনিয়নের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে আটকে পড়া পানি অপসারিত না হতে পেরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। এছাড়া আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নসহ বিশাল জনপদ পানির তলায় নিমজ্জিত ছিল। এই অবস্থায় সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও অতিবৃষ্টিতে জোয়ারের চাপে গত ২০ ও ২১ আগস্ট রিং বাঁধগুলোর একাধিক জায়গায় ভেঙে যায়। এর মধ্যে কয়রা উপজেলার হরিণখোলা, ঘাটাখালি এবং ২ নম্বর কয়রায় ভাঙে ২০ আগস্ট। ওই দিনই শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের লেবুবুনিয়ায়ও বাঁধ ভাঙে। পরদিন অর্থাৎ ২১ আগস্ট বাঁধ ভাঙে মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়িতে। এসব ভাঙনে কয়রা সদর, মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি এবং লেবুনিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। আর আশাশুনির ডুবে থাকা স্থানগুলোর পানি আরো বাড়ে। ২২ আগস্ট বৃষ্টি কম ছিল, জোয়ারের পানির চাপও কম ছিল। পানি নতুন করে বাড়েনি। এই অবসরে মঠবাড়িতে মানুষ বালুভর্তি বস্তা ফেলে ভাঙনের স্থান আটকানোর চেষ্টা করছেন। তবে জোয়ারের পানির চাপ আরো বাড়লে এই প্রতিরোধ টিকবে বলে কেউ আশাবাদী নন।

 

 

বর্তমানে কয়রা সদর ইউনিয়নের ৩, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড এবং উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের গাজীপাড়া, শেখ-সরদারপাড়া, বড়বাড়ি, কাছারিবাড়ি প্রভৃতি গ্রামগুলো পানির তলায়। এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে আছে। বিশাল একটি এলাকায় চলাচলের কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। চারিদিকে পানি। হরিণখোলা-ঘাটাখালি ও ২ নম্বর কয়রার ভাঙন আটকাতে না পারলে কয়রা সদরসহ বিস্তীর্ণ এলাকার পানি আরো অনেক দিন আটকে থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে পানির চাপে ভেঙে যাওয়া বাঁধের অংশ আটকাতে আবারো মানুষ ঝুড়ি-কোদাল নিয়ে নেমে পড়েছেন।

 

 

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর থেকেই প্রকৃতি আর সাধারণ মানুষের এই লড়াই চলছিল। বাঁধ ভাঙছিল, মানুষ তা মেরামত করে টিকে থাকার চেষ্টা করছিল। ১৯৬০ এর দশকে দেওয়া এই বাঁধ এখানকার বসতি টিকিয়ে রেখেছে। যা চিংড়ি চাষের আগ্রাসী ফণায় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে দুর্বলতর হয়েছিল। ২০০৯এর ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা তাতে শেষ পেরেক ঠোকে। ব্যাপক জায়গায় বাঁধ ভাঙে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বাঁধ দেওয়াও হয়। কিন্তু দুর্বল বাঁধ আর সবল হয়নি। চিংড়ি চাষের জন্যে নোনা পানি টেনে আনতে বাঁধ কাটাছেঁড়াও থামেনি। আবার ১১ বছর পর ২০২০ এর ২০ মে আঘাত হানে আম্ফান। প্রচণ্ড শক্তির আম্ফানে তাৎক্ষণিক ক্ষতি তেমন না হলেও সুন্দরবনসংলগ্ন মানুষগুলো এখন তিলে তিলে ডুবছে। আজ এখানে বাঁধ ভাঙছে, কাল ওখানে বাঁধ ভাঙছে। দীর্ঘদিন পানি আটকে থাকায় এলাকাবাসীর কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে-ধসে গিয়েছে।

 

 

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনিও বলেন, এই এলাকা ভাঙা-গড়ার মধ্যেই আছে। এখন বাঁধের যা কাজ হচ্ছে তা রিং বাঁধ নামের আপৎকালীন ব্যবস্থা। আম্ফানে ভেঙে যাওয়ার পর যেসব জায়গায় রিং বাঁধ দিয়ে আটকানো হয়েছিল, এ জোয়ারে তা-ই ভেঙেছে। মানুষ আবারো চেষ্টা করছে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ আটকাতে। আমরা আনুসাঙ্গিক সহায়তা করছি মাত্র।

 

 

স্থায়ী বাঁধ প্রসঙ্গে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, প্রকৃতপক্ষে ডিসেম্বরের আগে স্থায়ী বাঁধের কাজ শুরু হবে বলে মনে হয় না। প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। এখন আনুসঙ্গিক প্রস্তুতি চলছে। উপরন্তু এখন ভাঙন স্থানে নদীর গভীরতা ৩০ থেকে ৩৫ ফুট। স্রোত অনেক বেশি। শুষ্ক মৌসুমে জোয়ারের চাপ ও স্রোত না কমলে বাঁধের কাজ করা যাবে না। শুরু করলেও বাঁধ টিকিয়ে রাখা যাবে না।

 

 

স্থানীয় এমপি আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, এলাকা রক্ষার্থে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এখন প্রস্তুতির কাজ চলছে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD