ত্রি-মুখী সংকটে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় Latest Update News of Bangladesh

মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০২৪, ০৯:৫৫ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




ত্রি-মুখী সংকটে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

ত্রি-মুখী সংকটে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়




এম. কে. রানা: শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারিবৃন্দ ভিসি বিরোধী আন্দোলনে একজোট হওয়া, আন্দোলন দমাতে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধের নির্দেশ উপাচার্যের এবং ভিসি বিরোধী লাগাতার আন্দোলনে সেশন জটের আশংকায় ত্রি-মুখী সংকটে পড়ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ব্যানারে মানববন্ধন করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা। আয়োজিত এ কর্মসূচীতে সবার পক্ষ থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ তরান্বিত করার দাবি জানানো হয়। বলা হয়েছে লাগাতার চলমান এ অচলাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থিদের ক্লাশ ও পরীক্ষা বর্জন, একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেসন জটসহ বাড়তি সমস্যায় পড়তে হবে শিক্ষার্থিদের। ইতিমধ্যেই এখানে চলছে সেশন জট। এ সংকট থেকে উত্তোরণে ভিসি’র পদত্যাগের বিকল্প নেই বলেই দাবী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বাঁচাতে অবিলম্বে ভিসির পদত্যাগ দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

আজ দেড়ঘন্টাব্যাপি এ মানববন্ধনে সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া। বক্তব্য রাখেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি সরদার কায়সার আহমেদ, সাবেক সভাপতি আরিফ হোসেন, মোহাম্মদ তানভীর কায়সার, শিক্ষর্থী প্রতিনিধি লোকমান হোসেন, আল আমিন, শফিকুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, তনুশ্রী ভট্টাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা বরুণ কুমার দে, তৃতীয় শ্রেনী কর্মচারী কল্যান পরিষদের সহ-সভাপতি হারুণ অর রশিদ সাধারণ সম্পাদক বনি আমিনসহ চতুর্থ শ্রেনী কর্মচারী পরিষদের নেতৃবৃন্দ প্রমুখ। এসময় বক্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার পরিবেশ নেই। এখানে নতুন নতুন নিয়ম, আইন শিক্ষক-শিক্ষর্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। কোন কিছুতে কোন নিয়ম বা আইন মানা হয়না। উপাচার্যর নিজের করা আইন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চলছে। আমাদের দাবী একটাই হয় উপাচার্যের কর্ম মেয়াদ ২৮ মে পর্যন্ত ছুটিতে যাক নতুবা তিনি পদত্যাগ করুক। আর দাবী না মানা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া জানান, ২৬ মার্চ থেকে টানা আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবীতে। এদিকে ১০ এপ্রিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি উপাচার্যের অনিয়মের ৮ দফা দাবীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে সহমত পোষণ করে দুই ঘন্টার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন। অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগসহ ১২ দফা দাবিতে নানান কর্মসূচি পালন করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (গ্রেড: ১৭-২০) কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ। ধারাবাহিকতায় আজ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যার যার অবস্থান থেকে একমত হয়েই উপাচার্যর পদত্যাগের দাবীতে মানববন্ধন করেছে। এদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন দমাতে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন পদত্যাগে অনড় উপাচার্য ড. এসএম ইমামুল হক।

একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজের অর্থ বরাদ্দ, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে দেয়া হয়। উপাচার্যের এমন নির্দেশের কারণে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা তুলতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা। ১৬ এপ্রিল উপাচার্য ড. এসএম ইমামুল হক স্বাক্ষরিত এক নোটিশে ব্যাংকের দুটি অ্যাকাউন্ট থেকে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো ধরনের অর্থ না দেয়ার জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে নির্দেশ দেয়া হয়। নোটিশে বলা হয়, আপনাকে (ব্যবস্থাপক) জানাচ্ছি যে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নম্বর (০৩৩৮১১০০০০০০১) ও (০৩৩৮১১০০০০০০২) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত যাবতীয় অর্থ প্রদান (ইতোপূর্বে প্রদত্ত সব চেকসমূহ) স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করছি। এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া বলেন, উপাচার্যের সিদ্ধান্তটি অমানবিক। শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন দমাতে উপাচার্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলন আরও বেগবান হবে।

এ বিষয়ে জানতে ঢাকায় অবস্থানরত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এসএম ইমামুল হকের মুঠোফোনে কল দেয়া হলে রিসিভ করেননি তিনি। কিছুক্ষণ পর একই ফোন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজোঁ অফিসের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি বলেন, ভিসি স্যারের কাছে কোনো কিছু জানার থাকলে আমাকে বলতে। তার কাছে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিতের বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে বলেন, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সোনালী ব্যাংক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ব্যবস্থাপক দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, ১৬ এপ্রিল উপাচার্য ড. এসএম ইমামুল হক একটি ই-মেইল পাঠান। সেখানে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দুটি স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত যাবতীয় অর্থ প্রদান স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। ভিসির নির্দেশনা মতে, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে। অপরদিকে গত ২৭ মার্চ থেকে শিক্ষার্থী এবং পরবর্তীকালে শিক্ষকদের একাংশের আন্দোলনের ফলে গত ২৩ দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষা এবং প্রশাসনিক কর্মকা- স্থবির হয়ে পড়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী এ প্রতিবেদককে জানান, ২৩ দিন ধরে আন্দোলন চলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে অচলাবস্থা চলছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থী বিশেষ করে দরিদ্র, মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে। এসব নিয়ে তাঁরা উদ্বেগও প্রকাশ করেন। তারা বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির বিষয়টি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত রয়েছে। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, সেটা অভিভাবকসুলভ নয়। আবার এ জন্য তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন। তা ছাড়া উপাচার্যের মেয়াদ রয়েছে আগামী ২৭ মে পর্যন্ত। এরপরে তিনি আর ওই পদে নিয়ম অনুযায়ী থাকতে পারবেন না। কিন্তু এই অল্পদিনের জন্য গত ২৩ দিন এবং সামনে আরও দেড় মাস যদি এভাবে পাঠদান ও ক্লাস বন্ধ থাকে, তাহলে হাজার হাজার সাধারণ শিক্ষার্থীকে বিরাট ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। আন্দোলনের কারণে প্রধান সমস্যা হবে সেশনজট। এই আন্দোলনের কারণে রুটিন অনুযায়ী যে পরীক্ষাগুলো হওয়ার কথা ছিল, সেগুলো নেওয়া সম্ভব হয়নি। আন্দোলন শেষ হলে নতুন করে আবার রুটিন তৈরি করবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস, তাতে অনেক সময় চলে যাবে। আবার উপাচার্য না থাকলে কোনো ব্যাচের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব নয়। যে জন্য সাধারণ ছাত্রদের অনেক সমস্যায় পড়তে হবে। পরীক্ষা অথবা ফলাফল প্রকাশে দেরি হলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় অনীহা দেখা দেবে।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থী উভয় পক্ষকেই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন এতটা অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। ফলে ত্রি-মুখী সংকটে পড়তে যাচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বরিশালের একাধিক শিক্ষাবিদ বলেন, আন্দোলন করতে গিয়ে যদি নিজেরই ক্ষতি হয় তাহলে সমস্যা শিক্ষার্থীদেরই। তাই যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হস্তক্ষেপ করে এ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেন বলে মনে করেন তারা। উল্লেখ্য গত ২৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে মন্তব্য করলে ২৭ মার্চ থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। ২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২৯ মার্চ উপাচার্য তাঁর মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তি দেন। তবে তা প্রত্যাখ্যান করে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD