সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩১ অপরাহ্ন
ভোলা প্রতিনিধি॥ ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাচড়া ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলেদের চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
চেয়ারম্যান মাস্টাররোলে মৃত, প্রবাসী, এলাকায় থাকেন না, জনপ্রতিনিধি ও তার স্বজনদের নাম দিয়ে চাল আত্মসাত করেছেন বলে জেলেদের অভিযোগ। এছাড়া এক ব্যক্তির নামে একাধিকবার চাল উত্তোলন দেখিয়েছেন তিনি। প্রকৃতপক্ষে তারা চাল পাননি। জেলা প্রশাসন অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
চাচড়ার ইউপির জেলেরা গত ৫ মে ডিসি মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বরাবর একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে দুই মাস (মার্চ-এপ্রিল) জাতীয় মাছ ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ। এ কারণে সরকার চার মাস (ফেব্রুয়ারি-মে) বেকার হতদরিদ্র জেলেদের প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে ৪ কিস্তিতে ১৬০ কেজি চাল প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়।
চাচড়া ইউপিতে মোট নিবন্ধিত জেলে ২ হাজার ৩৬৯ জন। চলতি অর্থবছরে ওই জেলেদের মধ্যে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করা এক হাজার ১০ জন জেলের জন্য চাল বরাদ্দ করেন।
অতিদরিদ্র প্রত্যেক জেলে ১৬০ কেজি চাল পাওয়ার কথা থাকলেও চেয়ারম্যান একজনকে ২২-২৩ কেজির বেশি চাল দেননি।
ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের মাস্টাররোল তুলে দেখা যায়, ৩ থেকে ৭ বছর আগে মারা গেছে এমন ৬ জনের নামে চাল তোলা হয়েছে। প্রবাসী ১০জন, এলাকায় থাকেন না ১৫জন, সরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, নামে-বেনামে, একই ব্যক্তির নামে একাধিকবার এ রকম ১৪০ জনের নামে চাল তুলেছেন।
৫ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মাকসুদুর রহমানের নামে জেলে কার্ডের চাল তোলা হয়েছে। সে কার্ডের চাল কে বা কারা তুলেছে সেটি তিনি জানেন না বলে স্বীকার করেছেন। অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, অনেক নিবন্ধিত জেলে চাল পায়নি।চেয়ারম্যান, মেম্বার, তার স্বজন ও ক্যাডার বাহিনী চাল পেয়েছে। অনেক নিবন্ধিত জেলেকে চাল না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
এ ছাড়া চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কাবিখা, কাবিটা, অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচি, এলজিএসপি অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
জেলে আ. রহমান, নুর ইসলাম, মো. ইউসুফ মোসলেহউদ্দিনসহ একাধিক জেলে জানান, জেলের চাল জেলেকে না দিয়ে আত্মসাতের ঘটনা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চলতি মাসের প্রথম দিকে তদন্ত শুরু হলেও শেষ হচ্ছে না। অজুহাতের কারণে আটকে আছে।
জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির চাচড়া ইউপি কমিটির সভাপতি মাহামুদুল্যাহ বলেন, চাচড়া ইউপির সাত, আট ও নয় নম্বর ওয়ার্ডে প্রকৃত জেলে। বাকী দুই, তিন, চার ও পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের ৫০ শতাংশ জেলে ভুয়া।
স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও জনপ্রতিধিরা লুটপাটের জন্য এসব ওয়ার্ডে নামে-বেনামে, মৃতব্যক্তি, প্রবাসীকে জেলে বানিয়ে নিবন্ধন করেছে। যাছাই-বাছাই করলে ৪০০-৫০০ নাম বাদ পড়বে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, চাচড়া ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পরে সম্প্রতি যাছাই-বাছাই করে ১৭৩ জন জেলেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
তবে জেলে নেতারা জানান, যাছাই-বাছাই হয়েছে আই-ওয়াশ। ক্ষমতার প্রভাবে থাকা, মৃত, প্রবাসীদের বাদ দেয়া হয়নি।
ইউএনও আল নোমান বলেন, চাচড়া ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান আছে।
ইউপি চেয়ারম্যান মো. রিয়াদ হোসেন তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে।
Leave a Reply