রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২১ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি:ঝালকাঠিতে কিশোরী ধর্ষণ করে ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বাসমালিক সমিতির এক সদস্য। নির্যাতিত পরিবার ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা যায়, শহরের সুতালড়ি এলাকায় জেলা পরিষদের সামনে একটি চারতলা ভবনের মালিক ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির সদস্য এখলাছুর রহমান বিপ্লব ওরফে বিপ্লব দরবেশ (৩৮)। ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে তিনি বসবাস করেন। সন্তান না থাকায় তিনি দুটি বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী তাঁর সঙ্গে থাকলেও দ্বিতীয় স্ত্রী থাকেন রাজাপুরে বাবার বাড়িতে। চার মাস আগে তিনি শহরের পেট্রোলপাম্প এলাকায় বাসা ভাড়া করে দাবির সঙ্গে এক কিশোরীকে (১৬) গৃহপরিচারিকার কাজ দেন। বাবা মা দূরে থাকায় ওই কিশোরী দাদির সঙ্গেই বসবাস করে।
বিপ্লব দরবেশের প্রথম স্ত্রী মাঝে মধ্যে বাসায় থাকেন না, বাবার বাড়িতে বেড়াতে যান। বিপ্লব ওই সময় একাই থাকতেন বাসায়। স্ত্রী বাসায় না থাকার সুযোগে বিপ্লব দরবেশ ওই গৃহপরিচারিকা কিশোরীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। বিষয়টি প্রথম স্ত্রী রুবিনা বেগম জানতে পারেন। গত ২৫ মার্চ ওই কিশোরীকে ধর্ষণের সময় প্রথম স্ত্রী মোবাইল ফোনে কৌশলে তা ভিডিও করেন। ভিডিওটি নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। বিপ্লব কৌশলে ভিডিওটি স্ত্রীর কাছ থেকে তাঁর মোবাইলে নিয়ে আসে। ভিডিও দেখিয়ে গৃহপরিচালিকা ওই কিশোরীকে এলাকা ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয় বিপ্লব। কিশোরী ঘটনাটি তাঁর দাদিকে জানায়। দাদি স্থানীয় কয়েকজনকে এ ঘটনা জানায়। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে স্থানীয়রা গত শুক্রবার বৈঠক করে ওই কিশোরীকে নগদ ৩০ হাজার টাকা ও ভবিষ্যতে বিয়ের খরচ বহনের দায়িত্ব নেন বিপ্লব।
মিমাংসার পরে বিপ্লব ওই কিশোরী ও তাঁর দাদিকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেন। চলে না গেলে ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানান। ইন্টারনেটে ভিডিও ছাড়লে ওই কিশোরীর আর বিয়ে হবে না বলেও হুমকি দেন বিপ্লব। এ অবস্থায় শনিবার ভাড়া করা ঘরে তালা ঝুলিয়ে চলে যায় নির্যাতিত ওই কিশোরী ও তাঁর দাদি।কিশোরীর দাদি অভিযোগ স্থানীয়দের জানান, তাঁর নাতিকে ধর্ষণ করে তা ভিডিও করা হয়। বিপ্লব ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। তাঁর নাতির বভিষ্যতের কথা ভেবে কয়েকদিনের জন্য বাসা ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। বর্তমানে তাঁরা পোনাবালিয়া গ্রামের বাড়িতে আছেন।
ঘটনাস্থলে গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের পেট্রোলপাম্প এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বিপ্লব দরবেশ প্রথম বিয়ে করার পর সন্তান না হওয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীরও কোন সন্তান হয়নি। সন্তান না থাকায় স্ত্রীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল যাচ্ছিল না। প্রথম স্ত্রী ঘরে থাকলে দ্বিতীয় স্ত্রী আসতেন না, আবার দ্বিতীয় স্ত্রী থাকলে প্রথম স্ত্রী আসতেন না। এ অবস্থা চলছিল অনেক দিন ধরে। চার মাস আগে গৃহপরিচারিকার কাজ নেওয়া কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনা প্রথম স্ত্রী ভিডিও করেন। এলাকার অনেকের কাছে ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি পুলিশও জানতে পেরে ঘটনাস্থলে এসেছিল। এরপর থেকেই নাতিকে নিয়ে দাদি তাদের গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। বিপ্লব দরবেশ টাকা দিয়ে অনেকের মুখ বন্ধ করেছেন বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এব্যাপারে বিপ্লব দরবেশকে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে তিনি সংযোগটি কেটে বন্ধ করে রাখেন।বিপ্লবের প্রথম স্ত্রী রুবিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী কোন মেয়েকে ধর্ষণ করেনি। এটা মিথ্যা কথা, আমিও কোন ভিডিও করিনি। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।ঝালকাঠি থানার ওসি শোনিত কুমার গায়েন বলেন, ফেসবুকে একটি পোস্ট দেখে আমি তদন্ত করার জন্য পুলিশ পাঠিয়েছি। কোন পক্ষই পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ করেনি। যদি কোন অভিযোগ পাই, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply