সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে ৮৮ কিলোমিটার নদী সীমা ও ১৫৮ কিলোমিটার খাল সীমা রয়েছে। পাশাপাশি অসংখ্য ছোটো খাল ও বেঁড়ের পানি কৃষির সেচ কাজে এ অঞ্চলের মানুষ ব্যবহার করে আসছে যুগযুগ ধরে।
পানির এ উৎস থেকে কৃষি কাজে ব্যাপক সহায়তার জন্য দক্ষিণাঞ্চলে আশির দশকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে।
যার অধীনে বরিশাল বিভাগের অন্য জেলাগুলোর মতো ঝালকাঠিতেও অনেক পাম্পহাউজ, স্লুইসগেট, রেগুলেটর, ফ্লাশ ইনলেট ও ক্লোজার বসানো হয়। ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ড এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্লুইসগেটগুলো এখন আর কোনো কাজেই লাগছে না। অসাড় অবস্থায় খাল দখল করে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে যুগের পর যুগ। এগুলোর কারণে পানির স্বাভাবিক স্রোত কমে গিয়ে পলি জমে খাল অনেক জায়গায় সরু হয়ে আসছে। কেউ কেউ আবার স্লুইসগেটগুলোর ওপর কাঠ দিয়ে সাঁকো হিসেবে ব্যবহার করছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকিও মানছেন না তারা।
ঝালকাঠি জেলা পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ’র দেয়া তথ্য অনুযায়ী জেলায় মোট ২১৭টি স্লুইস ও ২৮টি পাম্প হাউজ রয়েছে। এরমধ্যে ঝালকাঠি সদর উপজেলায় ১৪টি পাম্প হাউজে ১১২টি স্লুইস ও নলছিটি উপজেলায় ১৪টি পাম্প হাউজে ১০৫টি স্লুইস। যেগুলো বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)’র বিআইপি পোল্ডার’র অধীনে।
কাটাখালী পোল্ডার বা উপ-প্রকল্পে আছে ৩টি রেগুলেটর। যেগুলো নলছিটি উপজেলার সুবিদপুর ইউপিতে স্থাপিত হয়েছে।
এছাড়া ঝালকাঠির রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলা এবং পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলায় পোল্ডার-৫ বা বিষখালী প্রকল্পে ৮টি রেগুলেটর, ২টি ফ্লাশ ইনলেট এবং একটি ক্লোজার আছে। তার দেয়া তথ্যে রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলায় কোনো স্লুইসগেটের কথা উল্লেখ না থাকলেও সরেজমিনে রাজাপুর উপজেলায় অনেকগুলো স্লুইসগেট অকার্যকর অবস্থায় দেখা যায়।
নলছিটি উপজেলার যুবক শরীফ ওসমান জানান, বিভিন্ন ছোটো ছোটো খালে জন্মের পর থেকেই কিছু স্লুইসগেট দেখছি- কিন্তু এগুলো কী কাজে লাগছে তা দেখতে পাই না।
কৃষক আবুল খায়ের মৃধা বলেন, ‘হুদাহদি হালাইয়া থুইছে শুইজ গেটটি, এয়া কি মোগো কোনো কামে লাগে? আরো খালগুলার পানি আইটকা পড়ে, ধান খ্যাতে পানি দেতে এয়া কোনো কামে লাগে না’।
একই কথা জানিয়েছেন ঝালকাঠি সদরের বিনয়কাঠি ও নথুল্লাবাদ ইউপি এবং পৌরসভার কিফাইতনগরের একাধিক কৃষক।
স্লুইসগেটগুলো সব অকার্যকর উল্লেখ করে এগুলো অপসারণ করা উচিৎ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা পানি উন্নয়ন বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. সাজেদুল বারী জানান, আসলে অনেক বছর আগে থেকেই বিষয়টি একাধিকবার উপর মহলকে জানানো হয়েছে। আমরাও মনে করি অপসারণ করা উচিৎ। কিন্তু সরকার উদ্যোগ না নিলে বা বড় আকারের অর্থ বরাদ্দ না হলে ঝালকাঠিসহ বরিশাল অঞ্চলের ছোটো খালগুলোর স্লুইসগেটগুলো অপসারণ করা সম্ভব না।
তিনি আরো জানান, প্রজেক্টটি সেচের জন্য করা হলেও এটি শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। পাম্পিং করে পানি সংরক্ষণের কথা ছিলো যখন পানির সংকট থাকবে, আবার সেচকাজ হয়ে গেলে গেট খুলে পানি ছেড়ে দেয়ার কথা। এখন হিতে বিপরীত হয়ে অনেক সময় পানি স্লুইসগেট উপচে প্রবাহিত হয়।
একই প্রশ্ন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, চরাঞ্চলের স্লুইসগেট আর ঝালকাঠির মতো উপকূলীয় জেলার স্লুইসগেট অঞ্চলভেদে একই রকমের হওয়ার কথা না থাকলেও সব এক; যেটা অপ্রত্যাশিত।
চরাঞ্চলে পলি আসে কেবল উজান থেকে আর ঝালকাঠিতে পলি আসে দু’দিক থেকে- উজান থেকেও; সাগর থেকেও। জলের প্রবাহ রক্ষণাবেক্ষণই কেবল সমস্যা না; ল্যান্ড ফরমেশন প্রসেসও বাঁধাগ্রস্ত হয়। তাই ছোটো খালগুলোর স্লুইসগেটগুলো ধীরে ধীরে অপসারণ করা উচিৎ।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র কেন্দ্রীয় সভাপতি আবু নাসের খান বলেন, যে পদ্ধতিতে এগুলো বানানো হয়েছিলো; সেখানেই একটি ভুল ছিলো। এগুলো নষ্ট হওয়ারই কথা আবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয় না। এগুলো অপসারণ করে প্রয়োজন হলে নতুনভাবে এমন কিছু করতে হবে যেন খালের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বাঁধা সৃষ্টি না হয়।
সুজন’র ঝালকাঠি জেলা সভাপতি ও পরিবেশকর্মী ইলিয়াস সিকদার ফরহাদ জানান, এ অঞ্চলের খালগুলোর বোঝা এখন স্লুইসগেটগুলো। খালের স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখতে অপ্রয়োজনীয় স্লুইসগেটগুলোকে দ্রুত অপসারণ করা উচিৎ
Leave a Reply