শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ০৯:০১ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসন ও সহিংসতা যেন দিন দিন আরও নৃশংস হয়ে উঠছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় রাফা শহরের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ইসরাইলি বাহিনীর অতর্কিত গুলিবর্ষণে কমপক্ষে ১০ জন নিরীহ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৬২ জন। আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহতরা সবাই গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের এক ত্রাণ বিতরণ স্থানে সাহায্যের আশায় অপেক্ষমাণ ছিলেন।
ঘটনার সময় সেখানে হাজার হাজার মানুষ খাবার ও ওষুধের মতো জরুরি সহায়তা পাওয়ার আশায় ভিড় করেছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, গুলির শব্দে আতঙ্কিত মানুষ ছুটোছুটি করছেন, কেউ কেউ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন। এই নির্মম হামলা বিশ্বজুড়ে মানবিক হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। তারা ঘটনাটিকে একটি ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে। মিডিয়া অফিসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এখন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোও নিরাপদ নয়, সেগুলোও যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।
এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রধান ইসরাইলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “মানবিক সহায়তার পথ খুলে না দিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরাইলকে অবিলম্বে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মানবিক তৎপরতার সুযোগ দিতে হবে।
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি অভিযানে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৫৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহতের সংখ্যা ১ লাখ ২২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এই পরিসংখ্যানই যুদ্ধের ভয়াবহতা স্পষ্ট করে তোলে।
মানবিক সহায়তা নিতে এসে যদি একজন মানুষ প্রাণ হারায়, তা কেবল একটি মানবিক বিপর্যয় নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য একটি কলঙ্ক। গাজা যেন আজ শুধুই একটি ভৌগোলিক নাম নয়, বরং তা বিশ্বের বিবেকের ওপর এক দীর্ঘশ্বাসের প্রতিচ্ছবি।
এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে কার্যকর আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ ও মানবিক তৎপরতা নিশ্চিত করাই এখন সময়ের একান্ত দাবি।
Leave a Reply