বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:৫০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :কেন্দ্র দখল, জোর করে নৌকায় ছিল পেটানো এবং ব্যালট কেড়ে নেয়ার অভিযোগ ও মেয়র প্রার্থীদের ভোট বর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহন। তাছাড়া সকালে ভোট গ্রহন শুরুর পরে নগরীর বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন কিছু হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। তবে বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মেয়র প্রার্থীদের ভোট বর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন।
সোমবার সকাল ৮টা হতে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহিন ভাবে বরিশাল সিটি’র ৪টি ওয়ার্ডের ১১টি ইভিএম সহ মোট ১২৩টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহন করা হয়। ভোট গ্রহন শেষ হওয়ার পর পরই শুরু হয় গণনা। যার মধ্যে গণনা শুরুর প্রায় আধা ঘন্টার মধ্যেই ফলাফল ঘোষনা করা হয়। ওই চারটি কেন্দ্রেই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র নৌকা মার্কা বিজয়ী হয়েছে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে রয়েছে ধানের শীষের প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার।
এর পূর্বে সকালে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহন শুরু হয়। সকাল ৮টা বাজার আগেই কেন্দ্র গুলোতে ভোটারদের পদচারনা শুরু হয়। প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে ভোট গ্রহন করেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।
এদিকে সকাল ৯টা বাজতেই বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র থেকে অনিয়মের অভিযোগ আসতে শুরু করে। এমনকি বেশ কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন কালে ধরা পড়ে অনিয়মের বাস্তব চিত্র। প্রায় সব গুলো কেন্দ্রেই গোপন কক্ষে প্রবেশ করে আওয়ামী লীগের নৌকা’র ভোট নিশ্চিত করে দলীয় এজেন্ট এবং কর্মি সমর্থকরা। ভোট কেন্দ্রে নৌকা সহ কাউন্সিলর প্রার্থীদের জেন্টদের দেখা মিললেও খুঁজে পাওয়া যায়নি বিএনপি’র ধানেষ শীষ প্রতীকের এজেন্ট। কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের ব্যালট ভোটাররা হাতে পেলেও রেখে দেয়া হয় নৌকার ব্যালট।
এমনসব অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন বর্জনের ঘোষনা করেন বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার। শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধিনে কোন নির্বাচনই যে সুষ্ঠু নয় তার আরো একটি উধাহরন সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ। তারা পুলিশ বাহিনী দিয়ে ভোট কেন্দ্র থেকে আমাদের এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে। বেশিরভাগ কেন্দ্রেই প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি এজেন্টদের।
মজিবর রহমান সরওয়ার অভিযোগ করেন, সকাল ১০টা বাজার আগেই সকল কেন্দ্রে মেয়র প্রার্থীর ভোট হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রের মধ্যে বসে নৌকায় ছিল পিটিয়েছে। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন লাভ হয়নি। বরং আমি সহ আমাদের দলীয় নেতা-কর্মী এবং এজেন্টদের হুমকি দিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে। মারধার করা হয়েছে তাদেরকে। ইভিএম কেন্দ্রে ভোটারদের ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিতে দেয়া হয়নি। ভোটারদের গোপন কক্ষে ঢুকে জোর করে নৌকায় ছিল দিয়েছে। শুধু মেয়র পদেই নয়, বিএনপি পন্থি কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও ভোটও একই ভাবে আওয়ামী লীগ জালিয়াতি করেছে বলে অভিযোগ সরওয়ারের। এসব কারনে ওই ভোট সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়দি দাবী করে ভোট বর্জনের ঘোষনা দেন সরওয়ার। সেই সাথে পুনরায় নির্বাচনের দাবী জানান তিনি।
এদিকে অভিযোগ করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র প্রার্থী মো. ওবায়দুর রহমান মাহবুব। ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনে তিনি নগরীর সদর রোডে অশ্বিনী কুমার টাউন হলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ভোট বর্জনের ঘোষনা দেন। এসময় সেখানে ইসলামী আন্দোলন ও ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে র্যাব, পুলিশ এবং বিজিবি’র হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস একই অভিযোগে ১২৩টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিতের দাবী জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তার এজেন্টদের ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া এবং ভাটারদের কাছ থেকে ব্যালট ছিনিয়ে নৌকায় ভোট পেটানোর অভিযোগ করেন তার।
অপরদিকে বরিশাল নগরীর সদর গাল্স স্কুল কেন্দ্রে বাসদ’র মেয়র প্রার্থী ডা. মনিষা চক্রবর্তী’র উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে নৌকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে। ভোট কেন্দ্র দখল করে ভোট চুরিতে বাঁধা দিতে গেলে তার উপর হামলা হয়। এতে তার একটি হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হন। মনিষার অভিযোগ কেন্দ্রে থাকা পুলিশের সহযোগিতায় ভোট চুরি এবং হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাই নির্বাচন সুষ্ঠু এবং গ্রহনযোগ্য হয়নি বলে নির্বাচন স্থগিত চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার বরাবর অভিযোগ দেন। পরবর্তীতে দুপুর আড়াইটায় ভোট বর্জন করেন ডা. মনীষা চক্রবর্তী।
তাছাড়া বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জন এবং পুনরায় তফসিল ঘোষনা করে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবী জানান কমিউনিস্ট পার্টির ‘কাস্তে’ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী এ্যাড. একে আজাদ। সেই সাথে নির্বাচন আইন পরিবর্তনের দাবীও জানিয়েছেন এই প্রার্থী।
তবে পাঁচ প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে অনিয়ম এবং ভোট চুরির অভিযোগ করলেও নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়েছে বলে দাবী করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনিত মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি ভোটাধীকার প্রদান শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে কোন আশংকা নেই। তারা নির্ভয়ে কেন্দ্রে এসে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিয়েছে।
অপরদিকে ভোট জালিয়াতি, এজেন্টদের হুমকি দিয়ে কেন্দ্র ছাড়া, তাদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেয়া সহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেন পাঁচ মেয়র প্রার্থী। তারা ভোট স্থগিত করে পুনরায় নতুন করে ভোট গ্রহনের দাবী জানান। কিন্তু তাদের সেই দাবীতে সাড়া দেয়নি নির্বাচন কর্মকর্তারা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান বলেন, প্রার্থীদের অভিযোগ প্রধান নির্বাচন কমিশন কার্যালয়কে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে কোন দিকে নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। কমিশন যে সিদ্ধান্ত দিবে তা বাস্তবায়ন করার কথা বলেন মুজিবুর রহমান।
Leave a Reply