রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৬ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ চল্লিশে পা দিয়েছেন টালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। রোববার (১৩ ডিসেম্বর) ছিলো তার জন্মদিন। তবে চল্লিশে চালসের কোনো লক্ষণই নেই। বরং অভিনেত্রী যেন আরো সবুজ। নিজের জন্মদিনে সবচেয়ে বড় আক্ষেপ ‘রাবেয়া’ স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের? মা গোপা মুখোপাধ্যায় থাকলে এক সপ্তাহ আগে থেকে রান্নার জোগাড় শুরু হেয় যেতো। বাবা সন্তু মুখোপাধ্যায় বাচ্চাদের মতো হইহই জুড়ে দিতেন বড় মেয়ের জন্মদিন নিয়ে।
কেমন কাটালেন, সারাদিন কী করলেন তিনি? সে সব বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অভিনেত্রী। সাক্ষাৎকারটি হুবুহু তুলে ধরা হলো।
সকালে চোখ মেলেই কী মনে হলো?
স্বস্তিকা: (হেসে ফেলে) আমারো ৪০ হয়ে গেলো! স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় ৪০ বছরে পা দিয়ে দিলো? ১২ ডিসেম্বরের রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত এই ভেবেই আনন্দে কাটিয়ে দিচ্ছিলাম, আমার এখনো ৩৯। নিজেরই কেমন অবাক লাগছে যতোবার নিজের বয়স মনে পড়ছে।
৪০ বছরের জন্মদিনে স্পেশ্যাল উদযাপন কী হচ্ছে?
স্বস্তিকা: ২৪ ডিসেম্বর হইচইয়ে ‘চরিত্রহীন ৩’র স্ট্রিমিং। জন্মদিনের দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যায় এসভিএফ অফিসে। প্রচারের জন্য। সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেবো বলে। রাতে বোনের বাড়ি খাওয়া-দাওয়া। মেয়ে সকালেই চলে গিয়েছে। নিশ্চয়ই আমার পছন্দের কিছু না কিছু করবে ওরা সবাই মিলে। পুরোটাই সারপ্রাইজ রেখেছে। জানতে পারিনি। সারাদিন ব্যস্ততা। সন্ধ্যাটুকুই ছুটি। রোজ আমি যখন কাজে বের হই পরিবার ঘুমায়। আবার ওরা যখন ঘুমাতে যায় তখন আমি বাড়ি ফিরি। কী আশ্চর্য জীবন!
মা-বাবা থাকলে নিশ্চয়ই অনেক বড় আয়োজন হতো?
স্বস্তিকা: এ বছর বলে নয়। প্রতি ১৩ ডিসেম্বরের এক সপ্তাহ আগে থেকে মা বলতে শুরু করতেন, ভেবলি তোর জন্মদিন আসছে। আমার জন্য ভালোমন্দ রান্নাও করতেন নিজের হাতে। আমার মা তো খুব গোছানো, সংসারী। কতো রকমের রান্না জানতেন। আমি একেবারেই রান্না পারি না। মা থাকলে আজ পাতে কলার বড়া, তিল ভাজা পড়তো। চালের পায়েস রান্না হতো। বাবাও ছেলেমানুষের মতো হইহই করতেন। ঠিক আছে, একটা না একটা দিন তো সবাইকেই বড় হতে হয়।
২০২০ স্বস্তিকার জীবনে মাইলস্টোন? দু’হাত ভরে পেয়েছেন। স্বজন হারানোর ব্যথাও সহ্য করেছেন।
স্বস্তিকা: খুব অবাক হয়েছি আমিও। ভীষণ কঠিন একটা বছর। সেই বছরেই জাতীয় স্তরে আমার এতোগুলো কাজ মুক্তি পেলো। এই বছরেই আমি আবার ‘চরিত্রহীন’ হলাম! (হাসতে হাসতে) পার্ট অফ এ জোক। কেরিয়ারের দিক থেকে এতো গুরুত্বপূর্ণ বছর হয়ে দাঁড়াবে ২০২০, ভাবতেই পারিনি। বরং, অন্য বছরের তুলনায় এই বছর বেশি কাজ করলাম। ৬ মাস কাজ না করেও। এক এক সময় মনে হচ্ছে, বাবা উপরে গিয়ে নির্ঘাৎ কলকাঠি নাড়িয়েছেন। তাই সব কাজ ঝরঝরিয়ে আমার ঝুলিতে এসে পড়ছে।
সবাই আরো একটা কথা বলছে। আবার হইচই। আবার স্বস্তিকা। আবার বোল্ড…
স্বস্তিকা: আমি বলবো, সুদীপ্ত রায়ের ‘তাসের ঘর’ আরো বেশি বোল্ড, সাহসী। ওখানে আমি একা একটা ছবি টেনে নিয়ে গিয়েছি। ভালো-মন্দ সব আমার ঘাড়ে ছিলো। সারাক্ষণ ক্যামেরার সঙ্গে আমাকে কথা বলে যেতে হয়েছে। যা আমরা একেবারেই করি না। বিষয়টাও সাহসী। এটা বেশি সাহসিকতার না ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করা? সত্যিই খুব কঠিন ছিলো জার্নিটা। আসলে এখনো মানুষ ‘সাহস’ আর ‘সেক্স’কে গুলিয়ে ফেলেন। একটা চুমু খেলেই সাংঘাতিক সাহসী। আসলে, ‘চরিত্রহীন’র সঙ্গে যেহেতু একটা শরীরী গন্ধ আছে চিত্রনাট্যের খাতিরে, লোকে তাই এ কথাই বলবেন। ভাববেনও।
‘সুজাতা’ করার পর ‘রাবেয়া’ কেন টানলো?
স্বস্তিকা: কারণ, এর আগে আমি সাইকিয়াট্রিস্টের ভূমিকায় অভিনয় করিনি। একটা চরিত্রে এত স্তর, রং- ভালো লেগেছে। ভীষণ অনুভূতিপ্রবণ রাবেয়া। প্রচুর ঘটনা আছে বলে অভিনয়ের সুযোগও অনেক। প্লাস দেবালয় ভট্টাচার্য আমার ভীষণ পছন্দের একজন পরিচালক। অবশ্যই আবারো ‘হইচই’র সঙ্গে কাজ। এর আগে টিম ‘চরিত্রহীন’র সঙ্গে কাজ করিনি। সেটাও একটা কারণ। এবং সব শেষে বলবো, এই সিরিজের একটা আলাদা ফ্যান বেস আছে। সেটার লোভও ছাড়তে পারিনি।
সৌরভ দাস এই প্রথম আপনার বিপরীতে। ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে আপনার মতোই সাবলীল?
স্বস্তিকা: প্রথম কাজ হলেও একবারো সেটা সৌরভ মনে করতে দেয়নি। ভীষণ পরিশ্রমী, আন্তরিক। কোনো দৃশ্যের আগে কোনো সাজেশন দিলে সেটা পরে মনে রেখে কাজে লাগিয়েছে। সৌরভ ওর সেরাটা দিয়েছে বলেই আমি এতো প্রাণবন্ত। ও ছড়ালে আমি মাখাতাম!
‘চরিত্রহীন’র প্রায় সব চরিত্র শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস থেকে নেওয়া। একমাত্র রাবেয়া ২১ শতকের প্রতিনিধি। দর্শকের প্রতিক্রিয়া নিয়ে টেনশন হয়েছিলো?
স্বস্তিকা: একেবারেই না। আমি আজ পর্যন্ত কোনো বিষয় নিয়ে টেনশন করি না। না চরিত্র নিয়ে, না অভিনয় নিয়ে। যার জন্য ওয়র্কশপ করি না। ক্যামেরার মুখোমুখি হওয়ার ৫ মিনিট আগে অবধি আমি নিজেই জানি না কী অভিনয় করবো! কত জায়গায় মায়ের হাবভাব কপি পেস্ট করে চালিয়ে দিই। অবশ্যই চরিত্র বুঝে। চিত্রনাট্য যদি সেটা দাবি করে তবেই। ক্যামেরার সামনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যেটা আসে সেটাই করি। তাই সহ অভিনেতাদের আগে থেকেই সাবধান করি, চেঁচিয়ে উঠলে ভয় পেয়ে যেও না। আমার সঙ্গে শুধু তালে তাল মিলিয়ে যেও।
৪০ বছর কী শেখালো স্বস্তিকাকে?
স্বস্তিকা: আরো বেশি করে নিজেকে ভালোবাসতে। প্যাম্পার করতে। নিজের প্রেমে পড়তে। আরো অনেক অ-নে-ক কাজ করতে। যেটা করলে সবচেয়ে বেশি ভালো থাকি আমি।
চল্লিশোর্ধ্ব স্বস্তিকা আস্তে আস্তে ‘সুজাতা’, ‘মোহ মায়া’র মতো চরিত্রের দিকে ঝুঁকবেন? নাকি ‘রাবেয়া’ও উঁকি দেবে?
স্বস্তিকা: শুধু দেখে যান, আরো কতো, কে উঁকি দিয়ে যাবে! আমি এক রকমের চরিত্র কিছুতেই করবো না। যে চরিত্রে যতো শেড থাকবে, যদতো স্তর থাকবে, যতো ভাঙতে পারব নিজেকে, সেই চরিত্রে এভাবেই অভিনয় করে যাব। আগামী দিনেও।
Leave a Reply