শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আর বাকি মাত্র চার দিন। শেষ সময়ে বিভিন্ন উপায়ে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। তবে প্রার্থীদের সশরীরে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়া কিংবা বাজার-ঘাটে মিছিল, জনসংযোগের চেয়ে উচ্চ শব্দে মাইকিংয়ের চিত্রই প্রধান হয়ে উঠেছে বরিশাল শহরে। স্থানীয়রা বলছেন, উচ্চ শব্দে মাইকিংয়ে ব্যবসাসহ নানান ক্ষতি হচ্ছে তাঁদের।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশালের সদর রোড, লঞ্চঘাট, নথুল্লাবাদসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মিনি ট্রাকে মাইক, সাউন্ড সিস্টেমে উচ্চ শব্দে প্রচারণা চালাচ্ছেন বিভিন্ন প্রতীকের প্রার্থীরা। মিছিলের স্লোগান, বক্তব্য, গান প্রচার করা হচ্ছে। সদর রোডের টাউন হল এলাকায় ১০ মিনিটের মধ্যে ১২টি প্রচারণা যান দেখা গেছে। এসব যানের মধ্যে নৌকা, হাতপাখা, ঘড়ি ও লাঙ্গলের প্রচারণা বেশি দেখা গেছে। তবে বেলা ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নগরীতে বড় কোনো প্রচারণা মিছিল দেখা যায়নি।
উচ্চ শব্দে এমন মাইকিংয়ে বিরক্ত নগরের অনেকেই। স্থানীয়রা বলছেন, উচ্চ শব্দে এমন প্রচারণার কারণে সাধারণ মানুষের নানা ক্ষতি হচ্ছে।
সদর রোডের চাকরিজীবী সোহেল আকন বলেন, ‘এত মাইকিং শব্দদূষণ ছাড়া আর কিছুই না। মাইকিং করুক, কিন্তু এত সাউন্ডে মাইকিং তো মানুষের জন্য ভালো না। তাঁরা প্রচার করুক কিন্তু এভাবে মানুষের ক্ষতি করার তো কোনো মানে নাই।’
মিছিল-জনসংযোগের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘মিছিল আছে কিন্তু খুবই কম।’ নির্বাচনে প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রত্যাশা আর কী করব। প্রত্যেকবার বড় বড় কথা বলে। কিন্তু মুখে বলে এক কাজ করে আরেক।’
বিবির পুকুর এলাকায় রাস্তার পাশে ফল বিক্রি করেন ৬৫ বছরের আবদুল মতিন। গলার স্বরে যেমন দুর্বল, কানেও কিছুটা কম শোনেন বলে জানান তিনি। উচ্চ শব্দে মাইকিংয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে বলে জানান এই বিক্রেতা। আবদুল মতিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শব্দে বেচাকেনা করা যায় না। আগেও এমন হইতো, কিন্তু এইবার একটু বেশিই হইতেয়াছে।’
শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. কবির মিয়া জানান, নির্বাচনে প্রচারণা চলবে এটা স্বাভাবিক, তবে এভাবে উচ্চ শব্দে মাইকিং স্বাভাবিক না। তবে এই অবস্থা নিরসনেরও কোনো উপায় দেখছেন না তিনি। কবির মিয়া বলেন, ‘কে থাইমাইবে? ওপরের থেইকা যদি কয়, কম সাউন্ডে প্রচার করো তাইলে হইতো কাম হইবে।’
স্থানীয় পরিবেশ ও সামাজিক আন্দোলন সংগঠকেরাও বলছেন, প্রতিনিয়ত নির্দিষ্ট ডেসিবেলের ওপর শব্দের কারণে পরিবেশ ও মানুষের নানাবিধ ক্ষতি হচ্ছে। তারা অবিলম্বে শব্দের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে আনতে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, ‘উচ্চ শব্দে মাইকিংয়ে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত মারাত্মক প্রভাব আছে। নির্বাচন কমিশনের যে মোবাইল কোর্ট তাঁরা এটা দেখেও দেখছে না। তাঁরা যদি শুরুতেই পদক্ষেপ নিত তাহলে এই অবস্থা তৈরি হতো না। এর দায় নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।’
Leave a Reply