মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন
মো. সুজন মোল্লা,বানারীপাড়া প্রতিনিধি॥ বানারীপাড়া উপজেলার মানচিত্র পাল্টে দেয়া সেই ভয়াল রাক্ষুসী সন্ধ্যা নদীতে আবারও বালু মহাল ইজারা দেয়ার খবরে এখানকার নদী তীরবর্তী পরিবারগুলো এবং অতীতে যারা বসতভিটা ও ফসলী জমি হারিয়ে পথে বসে গেছেন সেইসব সহ¯্রাধিক পরিবার ফুসে উঠছেন বলে একটি সূত্র থেকে জানাগেছে।
জানা গেছে বরিশাল জেলা প্রশাসন ভূমি মন্ত্রী,পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্যের ইস্যুকৃত লিখিত আদেশের কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই ২০ আগস্ট বানারীপাড়া উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়েচলা ভয়াল সন্ধ্যা নদীতে বালু মহাল ইজারা দিয়েছেন।
সন্ধ্যা নদীর ভাঙন রোধে জনস্বার্থে বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহে আলম বালু মহাল ইজারা না দেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী,পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম ও বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমানের কাছে ডিও লেটার দেন।
ভূমি মন্ত্রী ওই ডিওলেটার পেয়ে জনস্বার্থে বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর বালু মহাল ইজারা দরপত্র বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেন। ভূমি মন্ত্রনালয়ের সচিব মো. তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠি ১৯ আগস্ট বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে পৌঁছে।
কিন্তু ভূমি মন্ত্রীর ওই চিঠি ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার পাওয়ার পরেও তা উপেক্ষা করে ২০ আগস্ট সন্ধ্যা নদীর ৮ টি পয়েন্টে বালু মহাল ইজারা দেওয়া হয়। জানা গেছে ওই পয়েন্ট গুলোর বশে কয়েকটি তীর্ব ভাঙণ কবলিত।
এনিয়ে রাক্ষুসী সন্ধ্যা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব ও রিক্ত হাজারো পরিবারের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বালু মহাল ইজারা বন্ধ করা না হলে নদীর তীরে যেকোন সময় সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসী বালু মহাল ইজারা বন্ধে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো.শাহে আলমের পদক্ষেপকে সাধুবাদ ও তার ডিও লেটার উপেক্ষা করে বালু মহাল ইজারা দেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে অবিলম্বে বালু মহাল ইজারা বন্ধের দাবী জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন ভূমি মন্ত্রনালয় থেকে বালু মহাল ইজারা বাতিল কিংবা বন্ধ করতে বলা হয়নি এ সংক্রান্ত আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। প্রসঙ্গত সন্ধ্যা নদী গর্ভে ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে বানারীপাড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ।
একমাত্র সম্বল ভিটে মাটি ও ফসলী জমি হারিয়ে নিঃম্ব ও রিক্ত হয়ে পড়েছে হাজারো পরিবার। সবকিছু হারিয়ে অনেকেই এখন বেছে নিয়েছেন যাযাবর মানবেতর জীবন। অনিয়মতান্ত্রিক বালু উত্তোলনের ফলে রাক্ষুসী সন্ধ্যা নদীর ভাঙন তীব্র রূপ ধারণ করে।
বালু দস্যুদের কারনে ইতিমধ্যে সন্ধ্যা নদীর তীরবর্তী উপজেলার উত্তর নাজিরপুর, দক্ষিন নাজিরপুর, দান্ডয়াট, শিয়ালকাঠি, জম্বদ্বীপ, ব্রাক্ষ¥নকাঠী, কাজলাহার, ডুমুরিয়া, ইলুহার, ধারালিয়া, বাসার, নলশ্রী, মসজিদবাড়ি, গোয়াইলবাড়ি, খোদাবখসা, কালির বাজার,চাউলাকাঠি, মীরেরহাট ও খেজুরবাড়ি গ্রামের কয়েক হাজার একর ফসলি জমি,অসংখ্য বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা,মসজিদ ও মন্দির সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
উপজেলার ইলুহার বিহারীলাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়,মিরেরহাট ও জম্বদ্বীপ সাইক্লোন শেল্টার যে কোন সময় নদী গ্রাস করে ফেলতে পারে। হুমকির মুখে রয়েছে খেজুরবাড়ি আবাসন ও উত্তর নাজিরপুর গুচ্ছ গ্রাম। উল্লেখিত গ্রামগুলো মানচিত্রে থাকলেও নদী গ্রাস করে ফেলায় গ্রাম গুলো আর বাস্তবে নেই। বালু উত্তোলনের ফলে কপাল খুলে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন এখানকার সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেষী মহল।
নদীর ভাঙন রোধে বালু উত্তোলণ বন্ধে উপজেলার ইলুহার গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য পরিমল জনস্বার্থে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে হাইকোর্টে (উচ্চ অদালতে ) রিট পিটিশন দায়ের করলে বরিশাল জেলা প্রশাসক ও বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের কাছে নদীর ভাঙন রোধে কেন বালু মহাল ইজারা দেওয়া বন্ধ করা হবে না মর্মে জবাব চাওয়া হয়।
হাইকোর্টের রিটের বিষয়ে নিষ্পত্তি না হওয়ায় গত দুই বছর ধরে বরিশালের অপর উপজেলা গুলোর সন্ধ্যা সহ বিভিন্ন নদীতে বালু মহাল ইজারা দেওয়্ াহলেও বানারীপাড়া উপজেলায় বালু মহাল ইজারা স্থগিত রাখা হয়।
এদিকে সম্প্রতি পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল(অব.) জাহিদ ফারুক শামিম বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শণ করে ভাঙনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
গত জানুয়ারী মাস থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমের নির্দেশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকায় নদীর ভাঙন কিছুটা কমে এসে জনমনে স্বস্তি দেখা দেয়।অভিযোগ রয়েছে ওই বালুদস্যুরা প্রশাসনের অসাধূ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে হাইকোর্টের রিট নিস্পত্তি করে পূনরায় বালু মহাল ইজারা নেয়।
Leave a Reply