রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৭ পূর্বাহ্ন
এইচ এম হেলাল ॥ বরিশালে কোনরূপ পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই নিরিহ রিক্সা চালকদের উপর ট্রাফিক পুলিশের নির্যাতনে পথে বসছে শতাধিক রিক্সাচালক। গত সোমবার রাত থেকে হঠাৎ করেই নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাটারী চালিত রিক্সা আটক ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার দিনভর শতাধিক ব্যাটারী চালিত রিক্সার মর্টার খুলে নিয়ে ব্যাটারী ভাংচুর করেছে পুলিশ। এ সময় অনেক রিক্সাচালককে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। রিক্সা ভাংচুরের সময় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ঋণ পরিশোধের কথা ভেবে। পুলিশ বলছে মেয়রের নির্দেশেই তারা এ কাজ করছেন। তবে রিক্সাচালকদের দাবী নগরীতে চলমান ১০ সহস্রাধিক অটো প্রতিমাসে পুলিশকে বিটমানি দিয়ে বরিশাল সিটিতে চলাচল করছে। কিন্তু রিক্সা চালকরা বিট মানি না দেয়ায় এমনটি করছে পুলিশ। আর অবৈধ টোকেনবিহীন ১০ হাজার অটোরিক্সা থেকে প্রতিমাসে কোটি টাকা বিটমানি পুলিশ নিলেও জানেন না বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এমনটি দাবী ভুক্তভোগী রিক্সাচালকদের।
সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৪ বছর পূর্বে দেশের অন্যান্য জেলার মতো বরিশালেও ব্যাটারীচালিত রিক্সা চলাচল শুরু করে। এতে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। যেমনটা শোনা গেলে অটোর বেলায়। তবে বিদ্যুতের অপচয়ের অজুহাতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে তিন বছর পূর্বে মাইকিং করে নগরী থেকে ব্যাটারীচালিত রিক্সা সরিয়ে নিতে বলা হয়। যে যার মতো করে সেই সময় রিক্সাগুলো নগরী থেকে সরিয়েও নেয়। এরপর রিক্সা শ্রমিকরা নগরীতে ব্যাটারীচালিত রিক্সা (মেট্রো রিক্সা) চলাচলের দাবী জানিয়ে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে। তবে সিটি কর্পোরেশন থেকে এ ব্যাপারে কোন নির্দেশনা আসেনি। তবে মাঝে মধ্যেই বরিশাল ট্রাফিক পুলিশ মেট্রোরিক্সা আটক ও অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার ঘটনা শোনা গেছে।
এদিকে বিসিসি’র লাইসেন্স না পেলেও ট্রাফিক পুলিশকে বিটমানি দিয়ে দেদারছে নগরীতে চলছে অবৈধ অটো। আর পকেট ভরছে পুলিশের। নগরীর অবৈধ অটো স্ট্যান্ডগুলোতে কান পাতলেই এ খবরের সত্যতা মিলবে। অপরদিকে ওই সকল অটোর লাইসেন্স না দেয়ায় বিসিসি প্রতিমাসে হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। অভিযোগ রয়েছে বিসিসি ও ট্রাফিক পুলিশের গোপন সমঝোতায় অবৈধ অটো চলাচল করছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় যানবাহনের উপর ট্রাফিক পুলিশের অভিযান লক্ষ্য করা গেলেও শুধুমাত্র মটরসাইকেল আরোহীরাই তাদের প্রধান টার্গেট হয়ে দাড়ায়। অথচ নাকের ডগার উপর দিয়ে অবৈধ অটো ঠাঁয় দাড়িয়ে থাকে, মিনি ট্রাক, বালুর ট্রাক, পিকাপ চলে গেলেও কখনো সিগন্যাল দিতে দেখা যায়না। এর পেছনেও রয়েছে বিটমানি। অটোচালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, টিআই শামসুল আলমের সাথে গোপন চুক্তিতে নগরীর অন্তত ৩০টি স্পটে অবৈধ অটো চলাচল করছে। ফলে সরকারি কর্মকর্তা হলেও আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন এই কর্মকর্তা।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দিনভর নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে শতাধিক মেট্রোরিক্সা আটক করেছে পুলিশ। অবশ্য মর্টার খুলে রেখে ব্যাটারীগুলো ভেঙে সেগুলো ছেড়ে দিয়েছে। এ সময় পুলিশের হাত-পা ধরেও রক্ষা পায়নি কেউ। উল্টো ব্যাটারী ভাঙার প্রতিবাদ করায় এক রিক্সাচালককে মারধর করেছে পুলিশ।
ভুক্তভোগী একাধিক রিক্সাচালক বলেন, ধার দেনা করে রিক্সা বানিয়েছেন। তারা বলেন, আমাদের সময় দেয়া হলে রিক্সা বিক্রি করে কিছুটা ঋণ মুক্ত হতে পারতেন তারা। কিন্তু ঘোষণা ছাড়াই রিক্সাগুলো আটক করে ব্যাটারী ভেঙে দেয়ায় প্রত্যেকের প্রায় ২০/২৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে। তারা এ বিষয়ে বিসিসি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এ ব্যাপারে বিসিসি’র যানবাহন শাখায় যোগাযোগ করা হলে তারা অভিযানের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।
Leave a Reply