সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৪ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বরিশালে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত্বের বিলুপ্ত বাড়ির চত্ত্বরে থাকা সরকারি বরিশাল কলেজ পুকুরটি রাতের আঁধারে ভরাট শুরু হয়েছে। এর আগে বরিশাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষরা একটু একটু করে পুকুরের বেশির ভাগ অংশ ভরাট করেছেন।
সব শেষ গত সোমবার রাতে ইটের খোয়া আর রাবিশ ফেলে পুকুরের বাকি অংশ ভরাট শুরু করেন বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক। মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত বাড়ির সম্মুখে নিজের ব্যবহার ও এলাকাবাসীর সুবিধার কথা চিন্তা করে পুকুরটি খনন করেছিলেন।
২০১০ সালে প্রগতিশীল নাগরিকদের দাবির প্রেক্ষিতে অশ্বিনী কুমার দত্তের বাস ভবনের সামনে থাকা পুকুরটি রক্ষার উদ্যোগ নেন তৎকালীন মেয়র শওকত হোসেন হিরন। ২০১২ সালে কলেজের তখনকার অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মজিবুর রহমান পুকুরের বাকি অংশ ভরাটের চেষ্টা করলেও নাগরিকদের বাঁধার মুখে পড়ে সেই উদ্যোগ থেকে সরে আসেন তিনি।
২০১৮ সালে পুকুরটি আবার ভরাটের চেষ্টা করেন তৎকালীন অধ্যক্ষ খন্দকার অলিউল ইসলাম। তিনি পুকুরের বাকি অংশে রাস্তা নির্মাণ এবং অনেকটা মাটি ও খোয়া দিয়ে ভরাট করেন। আর বর্তমান অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পুকুরটি সম্পূর্ণ ভরাট করার অভিয়োগ করেছেন স্থানীয়রা।
সরকারি বরিশাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক পুকুরের বাকি অংশ ভরাটের অভিয়োগ অস্বীকার করে বলেন, কলেজের কিছু রাবিশ ও খোয়া অব্যবহৃত ছিল। সেগুলো পুকুরের পাশে রাখা হয়েছে। পুকুর ভরাটের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
বরিশালের প্রবীণ সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাবিদের দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ী, ১৯৬২ সালে শিক্ষাবিদ জয়ন্ত কুমার দাস, হোসেন আলী ও অন্যান্য শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্বদের সহয়োগিতায় অশ্বিনী দত্তের বাসভবনে নাইট কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
দেশ স্বাধীন হবার পর অশ্বিনী কুমারের নামে কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবী ওঠে। কিন্তু ওই দাবী উপেক্ষিত হয়ে কলেজটির নামকরণ করা হয় বরিশাল কলেজ নামে। এরপর কলেজ উন্নয়নের নামে ১৯৯১ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষ অশ্বিনী কুমার দত্তের মূল বাসভবনটি ভেঙে ফেলে।
বরিশালের সামাজিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা নদী-খাল-জলাশয় বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবন আগেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। পুকুরটিও ভরাট করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলাশয় ভরাট না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তারপরও বরিশাল নগরীতে অনেক পুকুর ভরাট হচ্ছে।
অশ্বিনী কুমার দত্তের স্মৃতি বিজড়িত এ পুকুরটি রক্ষায় তিনি নাগরিকদের সঙ্গে বরিশাল সিটি মেয়রের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
প্রবীণ সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের স্মৃতি বলতে বেঁচে আছে ওই পুকুরটি। তাও য়দি ভরাট করা হয় তাহলে নগরীর বড় ইতিহাসকে হত্যা করা হবে। তিনি পুকুরটি রক্ষায় সিটি মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
Leave a Reply