সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৬ অপরাহ্ন
এম.কে. রানা ॥ বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের চারলেনের দুই লেনই এখন বেদখল হয়ে গেছে (!) বেদখল হওয়া লেনে সারিবদ্ধভাবে দিন-রাত ঠাঁয় দাড়িয়ে থাকে বাস, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। দেখলে মনে হবে এটি কোন বাস স্ট্যান্ড কিংবা ট্রাক স্ট্যান্ড। ইতিপূর্বে বরিশাল ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে একাধিকবার ফোরলেনের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করলেও দিন গড়িয়ে রাত এলেই ফের দখল হয়ে যায় ফোরলেন।
বরিশাল ট্রাফিক বিভাগ বলছে, নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে উন্নয়নমূলক কাজ চলার কারণে টার্মিনালের ভেতরে গাড়ি রাখার উপযোগী নয় বলে রাস্তার উপর বাস রেখেছে। অবশ্য বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ের ফোরলেনের সার্বিক পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হচ্ছে বলেও জানায় ট্রাফিক বিভাগ।
তবে বাস মালিক সমিতির সভাপতি বলছেন, তাদের কোন বাস রাস্তার উপর থাকেনা। তথ্যানুযায়ী, বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের প্রায় ১৪ কিলোমিটার সড়ক বরিশাল নগরীর অংশে। মহাসড়কের ওপর দিয়ে নগরীতে চলাচলকারী যানবাহনের চাপ কমানোর লক্ষ্যে এবং ঢাকা-বরিশাল-পায়রা সমুদ্র বন্দ ও কুয়াকাটা পর্যন্ত যান চলাচলের সুবিধার জন্য আট কিলোমিটার সড়ক ফোর লেনে উন্নীত করা হয়।
২০১১-১২ অর্থ বছরে নগরীর আমতলার মোড় থেকে কাশিপুর সুরভী পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়ক ফোর লেন করা হয়। যা নির্মাণে প্রায় ৩০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে নির্মিত পুরো সড়কটি ফোর লেন নয় বলে দাবি করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, পায়রা বন্দর থেকে কন্টেইনারবাহী ভারী যানবাহন চলাচলে সড়ক প্রশস্ত করার পরিকল্পনা সরকারের।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের তথ্যানুযায়ী, এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল বর্ধিত দুই পাশের লেনে নগরীতে চলাচলকারী ছোট যানবাহন ও মূল লেনে দূরপাল¬ার ভারী যান চলাচল করবে। অথচ পুরো চার লেন দখল করে চলছে গাড়ি পার্কিং, বাজার, ব্যবসা-বাণিজ্য। আর ফোর লেনের বর্ধিতাংশ দখল হয়ে যাওয়ায় ছোট-বড় সব ধরনের যানবাহনই মূল মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করছে।
এতে মূল সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে দুর্ঘটনাও। পাশাপাশি ডিভাইডারের কারণে সংকুচিত হওয়ায় মহাসড়কেও যান চলাচলে সৃষ্ট হচ্ছে নানাবিধ সমস্যা। জানা গেছে, নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য টার্মিনালের ভেতরে বাস রাখার অবস্থায় নেই। তাই সড়কের উপরই বাসগুলো রাখা হয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরেই কাশিপুর সুরভী পাম্প থেকে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ফোরলেনের উপর বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও দূরপাল্লার পরিবহনগুলো দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া নথুল্লাবাদ থেকে আমতলা মোড় পর্যন্ত ইতিপূর্বে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও ফের ফোরলেন দখল করে ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে একটি মহল।
আবার নথুল্লাবাদে ভাড়ায় চালিত মটর সাইকেলের অঘোষিত স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। যা সব সময়ই সড়কের একটি বড় অংশ দখল করে থাকে। সব মিলিয়ে আসছে ঈদে যানবাহনের চাপ বাড়ার সঙ্গে সৃষ্টি হতে পারে যানজটের। এ সময় যানজটের কবলে পড়ে ঘরে ফেরা মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে বলে আশঙ্কা যাত্রী ও চালকদের। একই সঙ্গে মহাসড়কে নিষিদ্ধ থ্রি হুইলারের অবাধ যাতায়াত তৈরি করছে দুর্ঘটনার শঙ্কা।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট মহাসড়কের দুই লেনের ওপর গাড়ি পার্কিং, দোকানপাট ও স্ট্যান্ড গড়ে তোলার সুযোগ দিয়ে মাসোহারা আদায় করছে। এর ভাগ যাচ্ছে নানা মহলে। এদিকে পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানও দিনের বেলায় নগরীতে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
যদিও রাত ১০টার পূর্বে নগরীতে ভারী যানবাহন ও কাভার্ড ভ্যান প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফোরলেনের উপর তাদের কোন বাস নেই দাবী করে বরিশাল বাস মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইউনুস সিকদার বলেন, দুই একটি বাস যাত্রী নামানোর জন্য দাড়াতে পারে।
তাছাড়া দূরপাল্লার পরিবহন ও ট্রাক ফোরলেন দখল করে রেখেছে বলে দাবী করেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, ফোরলেনের উপর কোন বাস দাড়িয়ে থাকলে ৫শ’ টাকা জরিমানা করে মালিক সমিতি। তিনি আরো বলেন, ২০ রমজানের মধ্যে বাস টার্মিনালের উন্নয়ন কাজ শেষ করার কথা থাকলেও হয়নি। মেয়র মহোদয় শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর সাহেবকে উন্নয়ন কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন।
আগামী দুই/তিন দিনের মধ্যে টার্মিনালের কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করে তিনি বলেন, যদি কাজ শেষ না হয় তবুও ফোরলেন মুক্ত করবেন যাতে করে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের হয়রাণী না হতে হয়। এ ব্যাপারে বরিশাল ট্রাফিক বিভাগের ডিসি মোঃ খায়রুল আলম বলেন, নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী।
টার্মিনালটি ব্যবহার উপযোগী হলে ফোরলেন পুরোপুরি দখলমুক্ত হবে। আমরা নগরীসহ মহাসড়কে সেচ্ছাসেবক নিয়োগ করেছি যেখানে বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকেও ২০ জন করে সেচ্ছাসেবক থাকবে।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা নগরীকে যানজট মুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। আগামী ৩০মে থেকে মহাসড়কে কমিউনিটি ভলান্টিয়ারগন ইউনিফর্ম পড়ে পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবে। যাতে আসছে ঈদে কোন মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি না হয় এবং ঘরে ফেরা মানুষ নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন।
Leave a Reply