শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৬ অপরাহ্ন
খন্দকার রাকিব ॥ বরিশাল সদর খাদ্যগুদামের দায়িত্ব নেয়ার পরে নজরুল ইসলাম রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি দপ্তর বা ব্যক্তি বিশেষের বরাদ্দের চালের ওপর ভাগ বসানোর পাশাপাশি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করার গুরুতর অভিযোগে বিদ্ধ তিনি। বস্তাপ্রতি ২ থেকে ৩ কেজি চাল সুকৌশলে রেখে পরবর্তীতে সেগুলো বিক্রি করছেন লেবার সর্দার আলমগীর হোসেনের যোগসাজশে। পাশাপাশি তিনি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গ্রাম-গঞ্জ থেকে কম মূল্যে চাল সংগ্রহ করে সরকারি মূল্যে বিক্রি করছেন। এই অভিযোগটি অনেক আগে উঠলেও রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনকি এই তেলেসমাতি কা- রোধেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। মূলত এই কারণেই নজরুল ইসলাম অনিয়মের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে এখন অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন।
এমন বাস্তবতায় খোঁজ-খবর নিয়ে যা জানা গেছে তা শুনে হয়তো অনেকেই হকচকিয়ে যাবেন। কারণ গুদাম থেকে প্রতিদিন ৫’শ বস্তার বেশি চাল ডেলিভারি করেন নজরুল ইসলাম। প্রতিবস্তা থেকে ৩ কেজি করে চাল হাতিয়ে নেন তিনি। এমনইভাবে দিন শেষে ১৫’শ কেজি চাল হাতিয়ে নিচ্ছেন। মাস শেষে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৫ হাজার কেজি। এই পরিমাণ চালের সরকারি মূল্য (কেজি ৩৮ টাকা হিসেবে) কোটি টাকার ওপরে। ভয়ানক এই চুরির বিষয়টি সম্পর্কে সকলে অবগত থাকলেও তা রোধে কোনো উদ্যোগ নেই কারওই। এমন পরিস্থিতিতে অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, নজরুল ইসলাম কীভাবে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেন সে বিষয়টি। অনিয়ম বা চুরি করে হাতিয়ে নেয়া চাল বিক্রির টাকার একটি বড় অংশ নিজে হস্তগত করে বাদ বাকি ভাগবাটোয়ারা করছেন তিনি। যার একটি অংশ আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা ও জেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে দেয়ায় তারা থাকছেন নিশ্চুপ বলে অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে চুরি করা চাল পাচারে সহযোগিতা করে লেবার সর্দার আলমগীরও অর্থের একটি ভাগ নিচ্ছেন।
যদিও লেবার সর্দার আলমগীর হোসেন এই পুরো বিষয়টি অস্বীকার করে বলছেন, গুদামের ভেতরে কি হচ্ছে বা কে কি করছে সেই বিষয়টি সম্পর্কে তিনি মোটেও ওয়াকিবহাল নন। চাল বুঝিয়ে দেয়ার পরে তিনি শুধু গাড়ি বা ট্রলারে তুলে পৌঁছে দেয়ার কাজটি করছেন। তবে যদিও কোনো ব্যক্তি বিশেষ বরাদ্দের চাল বিক্রি করেন সেটি একটি নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে কিনে নেন। সেই চাল পরবর্তীতে বিক্রি করেন বলে জানান আলমগীর। তবে সেখানকার একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জোর দিয়ে জানিয়েছে, এই আলমগীরই গুদাম ইনচার্জ নজরুল ইসলামের চাল চুরির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে আসছেন। মূলত তার মাধ্যমেই চুরির চাল বিক্রি বা পাচারের সুযোগ নিচ্ছেন নজরুল ইসলাম। তাছাড়া মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গ্রাম-গঞ্জ থেকেও নিম্নমানের চাল গুদাম ইনচার্জকে ক্রয় করতে সহযোগিতা দিয়ে থাকেন। পরবর্তীতে সেই চাল সরকারি মূল্যে বিক্রি করছেন ইনচার্জ। তবে এই বিষয়টি সমূলে অস্বীকার করে গুদাম ইনচার্জ বলছেন, গুদামে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। কারণ বরাদ্দের চাল নেয়ার পূর্বে সকলে পরিমাপ করেই নিচ্ছেন। সেই সাথে তিনি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিম্নমানের চাল ক্রয় করার বিষয়টিও অস্বীকার করেছেন। কিন্তু পরিমাপে চাল কম দেয়ার একাধিক প্রমাণ থাকার বিষয়টি তাকে অবহিত করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। বস্তার ওজন বাদ দিয়ে চাল মেপে দেয়ার নিয়ম থাকার পরেও বস্তাসহ চাল মেপে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমনটা হতে পারে, এটা দোষের কিছু নয়।
গুদাম থেকে চাল সংগ্রহ করতে আসা একাধিক সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, ‘‘বস্তার ওজন বাদ দিয়ে চাল দেয়ার কথা থাকলেও বস্তার ওজনসহ চাল মেপে আমাদেরকে দেন গুদাম ইনচার্জ নজরুল ইসলাম। এভাবে তিনি প্রতিদিন কয়েক হাজার টাকার চাল কম দিচ্ছেন।” তারা আরও বলেন, বস্তার ওজন বাদ দিয়ে চাল দেয়ার কথা থাকলেও তিনি তা মানছেন না। বস্তার ওজনসহই চাল মেপে দিচ্ছেন।
একটি সূত্র জানায়, সদর খাদ্যগুদামে যে পরিমাণ চাল সংরক্ষণ থাকার কথা তারচেয়ে অনেক কম চাল রয়েছে এই গুদামে। কারণ যে পরিমাণ চাল বরাদ্দ আসে তার বেশিরভাগই অবৈধভাবে বাহিরে নিয়ে যাওয়া হয়। যার ভাগবাটোয়ারার অর্থ জেলা খাদ্য কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। এ সকল অভিযোগের বিষয়ে আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা রেজা মোঃ মহ্সিন বলেছেন, এই দপ্তরের কোনো অনিয়ম দুর্নীতির খবরই তার কাছে নেই। তাকে (রেজা) ম্যানেজ করেই অনিয়মগুলো করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এ কথাটি সঠিক নয়। আপনি ডিসি ফুডকে জানান, দেখেন তিনি কি ব্যবস্থা নেন। আর আমার কাছে যদি কেউ লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
Leave a Reply