মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৮ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ ঝালকাঠি শহরের মধ্য চাঁদকাঠি এলাকার মনির হোসেন (৪০) এক সপ্তাহ ধরে জ্বর ও বুকে ব্যাথায় ভুগছেন। পর্যায়ক্রমে তাঁর মা, বোন, ভগ্নিপতিরও জ্বরসহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে তাঁরা জানতে পারেন কিট সংকটের কারণে নমুনা পরীক্ষার জন্য (নাম নিবন্ধন) সিরিয়াল দিতে হবে। এক সপ্তাহেও তাদের পরিবারের চারজনের নমুনা দেওয়ার সিরিয়াল পাওয়া যায়নি। এ পরিস্থিতিতে তাঁরা জানতে পারছেন না করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি-না। এটা নিশ্চিত না হয়েই, ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে সেবন করছেন।
শুধু মনির ও তাঁর পরিবার নয়, রবিবার ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা মেলে ১০-১৫ জন মানুষ উপসর্গ নিয়ে নমুনা পরীক্ষার জন্য এসেও কিট সংকটের কারণে দিতে পারছেন না। এদিকে জনবল সংকটের কারণেও সবার নমুনা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে স্বাস্থ্য বিভাগ দাবি করেছে। সদর হাসপাতালে মাত্র একজন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নমুনা সংগ্রহের কাজ করছেন। তিনি প্রতিদিন চার-পাঁচজনের বেশি নমুনা সংগ্রহ করতে পারছেন না।
এদিকে যাদের নমুনা নেওয়া হয়, জেলায় পিসিআর ল্যাব না থাকায় তাদের রিপোর্ট পেতেও বিলম্ব হচ্ছে। নমুনা নিয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর তিনদিন থেকে আট-দশ দিনও সময় লেগে যায় রিপোর্ট পেতে। রিপোর্ট পাওয়ার আগেই ঝালকাঠি জেলায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। উপসর্গ নিয়ে তাদের মৃত্যু হয়, পরবর্তীতে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এ ছাড়াও জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা উপসর্গ নিয়ে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এদের কোন তালিকা নেই স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে।
স্থানীয় দুটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন শাবাব ফাউন্ডেশন ও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন তাদের দাফনের কাজ করছেন। তাদের কাছ থেকেই জানা যায় উপসর্গ নিয়ে মৃত ২৮ জনের খবর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঝালকাঠি শহরের বান্ধাঘাটা এলাকার মধ্য বয়সী এক ব্যক্তি বলেন, তিনিসহ তাদের পরিবারের তিনজনের জ্বর, সর্দি ও কাশি হয়। একজনের গলা ব্যথাও রয়েছে। হাসপাতালে যোগাযোগ করেও তাঁরা নমুনা দিতে পারেনি। তাদেরকে সিরিয়ালের জন্য হাসপাতালে যেতে বলা হচ্ছে। কিন্তু অসুস্থ থাকায় কেউই আর যেতে পারেনি হাসপাতালে। এখন বাড়িতে বসেই আইসোলেশনে থেকে অনলাইনে চিকিৎসকের সেবা নিয়ে ওষুধ সেবন করছেন।
শুধু ঝালকাঠি সদরের চিত্রই নয় এটি, পুরো জেলায় করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন উপসর্গ থাকা ব্যক্তিরা। রাজাপুর, নলছিটি ও কাঁঠালিয়ায় আগে যেখানে ১০টি করে নমুনা সংগ্রহ করা হতো, এখন প্রতিদিন সেখানে তিন-চার জনের বেশি নমুনা নেওয়া হয় না। এক্ষেত্রে কিট ও জনবল সংকটকে দায়ি করেছেন সিভিল সার্জন।
ঝালকাঠির ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আবুয়াল হাসান বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত কিট নেই, রয়েছে জনবলের অভাব। সদরে মাত্র একজনে নমুনা নিচ্ছেন, তিন উপজেলাতে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট না থাকায় অন্য বিভাগের লোক দিয়ে নমুনা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুজন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের করোনা পজিটিভ হয়েছে। তাই আগের চেয়ে নমুনা সংগ্রহ কমে গেছে। এখানে জরুরী একটি পিসিআর ল্যাব, পর্যাপ্ত কিট ও জনবল প্রয়োজন।
Leave a Reply