শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২২ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান নানা টানাপড়েনের মধ্যেই একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনী আইনের সংস্কারসহ নিজেদের ঘোষিত রোডম্যাপের অনেক বিষয় বকেয়া রেখে পুরোদমে প্রস্তুতির দিকে ঝুঁকছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। সংসদ নির্বাচনের পরপরই উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে ওই নির্বাচনের মালামালও একই সঙ্গে সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কারিগরি প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রার্থীদের জন্য ভোটার তালিকার সিডিও প্রস্তুত করা হচ্ছে। আগামী ৬ সেপ্টেম্বরে ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করা হবে। ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যা-ই হোক, দশম সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের নব্বই দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে তারা আইনত বাধ্য। পাঁচ সিটি নির্বাচনের পর তাদের সামনে এখন একমাত্র সংসদ নির্বাচনই লক্ষ্য।
এদিকে, দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপির একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ এখনও অনিশ্চিত। বর্তমান ইসির আয়োজনে সংলাপে অংশ নিলেও সদ্য সমাপ্ত সিটি ভোটে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে কে. এম. নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের প্রতি আস্থাহীনতার কথা বলছেন দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইসি সদস্যরা বলেছিলেন, সব দলকে আস্থায় নিয়েই তারা সংসদ নির্বাচন করবেন। কাজের মাধ্যমেই তারা সবার আস্থা অর্জন করতে চান। যদিও একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ইসির সামনে উল্লেখযোগ্য কোনো নির্বাচন নেই।
নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে এরই মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা বলেছেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ২৮ জানুয়ারির আগেই একাদশ সংসদ নির্বাচন শেষ করতে হবে। তাই অক্টোবরের দিকে তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে। ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির শুরুতে ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হবে। এদিকে, কারিগরি প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকলেও সদ্য সমাপ্ত পাঁচ সিটি নির্বাচনের পর থেকে কমিশন সদস্যদের মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে মতবিরোধ প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। যদিও নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, তাদের মধ্যে দ্বিমত থাকলেও মতবিরোধ নেই। তার দাবি, পাঁচ নির্বাচন কমিশনার মিলে একক সত্তা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, তারা দেশবাসীকে একটি ভালো নির্বাচন উপহার দিতে বদ্ধপরিকর। সাংবিধানিকভাবে তারা দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সচেতন রয়েছেন।
কমিশনের অন্যতম সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী (অব.) বলেছেন, নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজ পুরোদমে চলছে ঠিকই; কিন্তু এখনও তফসিল নিয়ে কমিশন সভায় কোনো আলোচনা হয়নি। আইনে নির্বাচনের সময় দেওয়া রয়েছে। তাড়াহুড়োর কিছুই নেই।
ইসি-সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, রোডম্যাপের পুরোটা বাস্তবায়ন সম্ভব না হলেও আইন অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজনে কোনো বাধা নেই। সীমানা পুনর্নির্ধারণ ও ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। ভোটকেন্দ্রের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত কেন্দ্র তালিকা প্রকাশ করা হবে। পাশাপাশি নির্বাচনী সামগ্রী ক্রয়, ভোটার তালিকা মুদ্রণ, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কার্যক্রম এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি দশম সংসদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে হিসেবে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের পাঁচ বছর পূর্ণ হবে। আর চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর থেকে নির্বাচনের ৯০ দিনের ক্ষণগণনা শুরু হবে।
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য ৩৪ লাখ ৪০ হাজার স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছয় লাখ ১৯ হাজার ৫০০ স্ট্যাম্প প্যাড, ১৭ হাজার ৪২০ কিলোগ্রাম লাল গালা, পাঁচ লাখ ৭৮ হাজার সিল, ১১ লাখ ৫৬ হাজার মার্কিং সিল, ৮৭ হাজার ১০০ ব্রাশ সিল ও ছয় লাখ ৬৫ হাজার অমোচনীয় কালির কলমের প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার রিম কাগজ প্রয়োজন হবে বলে কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
নির্বাচনী সামগ্রীর মধ্যে স্ট্যাম্প প্যাড, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাশ সিল, লাল গালা, কাঠের প্যাকিং বাক্স, অমোচনীয় কালি ইত্যাদি কেনাকাটা ও ব্যালট পেপার, বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, নির্দেশিকা, ম্যানুয়াল ছাপানোর কাগজ ক্রয়সহ অন্যান্য কাজ এগিয়ে চলেছে। এসব মালামালের একটি বড় অংশ এরই মধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। বাকিগুলোর দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে। সংসদের পরপরই দেশের উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে ওই নির্বাচনের নানা সামগ্রী একই সঙ্গে প্রস্তুতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ভোটের মালামাল সংগ্রহের পাশাপাশি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। এসব কর্মকর্তা নির্বাচনের সময় বাইরে থেকে আনা প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন।
সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, নবম সংসদে ৩৫ হাজার ২৬৩টি ভোটকেন্দ্র থাকলেও এবার তা বেড়ে ৪০ হাজারের মতো হতে পারে। সংসদীয় আসনের সমতল এলাকায় ৩৯ হাজার ৩৮৭টি এবং পার্বত্য এলাকায় ৬১৩টি ভোটকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে বুথ হবে প্রায় দুই লাখ।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী এবারের বাজেট অধিবেশনে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সংসদ নির্বাচনের জন্য ৬৭৫ কোটি টাকা, উপজেলা পরিষদের জন্য ৫৭৫ কোটি, পৌরসভার জন্য পাঁচ কোটি ২৫ লাখ এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য ১১ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া অবশিষ্ট অংশ উপনির্বাচনসহ অন্য নির্বাচনের জন্য রাখা হয়েছে।
নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গুছিয়ে আনা হয়েছে। কিছু কাজ চলমান রয়েছে। তফসিল ঘোষণার আগেই সব প্রস্তুতি শেষ করে আনা হবে। তিনি বলেন, রোডম্যাপের অধিকাংশই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকলেও তা জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
Leave a Reply